উপসংহার
মেহেদী-বাগানের এই অত্যাশ্চর্য্য নারীহত্যা-রহস্যের উদ্ভেদ হইলে আবার একটা খুব হৈ-চৈ পড়িয়া গেল। পরে কয়েকখানি সাপ্তাহিক সংবাদ-পত্রে সমগ্র ঘটনাটা সুশৃঙ্খলভাবে বাহির হইলে সকলে অত্যন্ত আগ্রহ ও বিস্ময়ের সহিত তাহা পাঠ করিতে লাগিল। এক-একটা সত্য ঘটনা গল্পাপেক্ষা অদ্ভুতও হয়, ইহা এখন অনেকেই বুঝিতে পারিলেন।
মজিদ খাঁ মুক্তি পাইলেন। মুন্সী সাহেব এবার মজিদ খাঁর সহিত জোহেরার বিবাহ দিতে আপত্তি করিলেন না। খুব জাঁক-জমকের সহিত মহাসমারোহে শুভবিবাহ সম্পন্ন হইয়া গেল।
মনিরুদ্দীন দিলজানকেই বিবাহ করিলেন। জীবনের এই ঘটনাপূর্ণ অধ্যায়টা বিস্মৃত হইবার আশায় তিনি সহর ত্যাগ করিয়া ফরিদপুরের সেই বাগান-বাটীতে গিয়া আপাততঃ বাস করিতে লাগিলেন। দিলজানও সেই বাগান-বাটীতে স্থানপ্রাপ্ত হইল। ইহার পর মনিরুদ্দীনের চরিত্রে আর কোন দোষ দেখা দেয় নাই—দিলজানের অদৃষ্ট ভাল।
মুন্সী সাহেব আর বিবাহ করিলেন না। সে অভিরুচিও আর ছিল না। এই ঘটনায় নারীজাতির উপর হইতে তাঁহার বিশ্বাস একেবারে অন্তর্হিত হইয়াছিল। তিনি সহরত্যাগ করিয়া স্বদেশে গিয়া বাস করিতে লাগিলেন; ইচ্ছা অবশিষ্ট জীবনটা সেইখানেই অতিবাহিত করিবেন।
দেবেন্দ্রবিজয় কয়েকদিন অত্যধিক পরিশ্রম ও চিন্তায় অবসন্ন হইয়া পড়িয়াছিলেন; এক্ষণে বিশ্রামের একটু অবসর পাইলেন। অনেক সময়েই তাঁহার মন হইত, এমন জটিল রহস্যপূর্ণ মোকদ্দমা আর কখনও তাঁহার হাতে পড়ে নাই। ঘটনাচক্রে যেরূপ ভাবে ঘুরিতেছিল, তাহাতে বৃদ্ধ মুন্সী সাহেবেরই চাপা পড়িবার উপক্রম হইয়াছিল। যাহা হউক, ঈশ্বর তাঁহাকে রক্ষা করিয়াছেন। নতুবা একজন নিরপরাধ বৃদ্ধকে ফাঁসীর দড়িতে ঝুলাইয়া তাঁহাকে আজীবন অনুতাপ করিতে হইত।
পরে কখনও কোন সূত্রে দশজন বন্ধুবান্ধবের সহিত মিলিত হইলে অনুরুদ্ধ দেবেন্দ্রবিজয় সর্ব্বাগ্রে মেহেদী-বাগানের এই অত্যাশ্চর্য্য নারীহত্যার বিপুল রহস্যপূর্ণ কাহিনীতে সকলের হৃদয়ে অত্যন্ত বিস্ময়োদ্রেক করিতেন।
(সমাপ্ত)