- প্রথম পরিচ্ছেদ
- দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
- তৃতীয় পরিচ্ছেদ
- চতুর্থ পরিচ্ছেদ
- পঞ্চম পরিচ্ছেদ
- ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ
- সপ্তম পরিচ্ছেদ
- অষ্টম পরিচ্ছেদ
- নবম পরিচ্ছেদ
- দশম পরিচ্ছেদ
- একাদশ পরিচ্ছেদ
- দ্বাদশ পরিচ্ছেদ
- ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ
- চতুর্দ্দশ পরিচ্ছেদ
- পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ
- ষোড়শ পরিচ্ছেদ
- সপ্তদশ পরিচ্ছেদ
- অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ
- ঊনবিংশ পরিচ্ছেদ
- বিংশতিতম পরিচ্ছেদ
- একবিংশতিতম পরিচ্ছেদ
- দ্বাবিংশতিতম পরিচ্ছেদ
- ত্রয়োবিংশতিতম পরিচ্ছেদ
- চতুর্ব্বিংশতিতমথ পরিচ্ছেদ
- পঞ্চবিংশতিতম পরিচ্ছেদ
- ষড়বিংশ পরিচ্ছেদ
- সপ্তবিংশ পরিচ্ছেদ
- অষ্টাবিংশ পরিচ্ছেদ
- ঊনত্রিংশ পরিচ্ছেদ
- ত্রিংশ পরিচ্ছেদ
- একত্রিংশ পরিচ্ছেদ
কৃষ্ণকান্তের উইল
ঊনবিংশ পরিচ্ছেদ
গোবিন্দলাল বাবু জ্যেঠা মহাশয়ের সঙ্গে বৈষয়িক কথোপকথনে প্রবৃত্ত হইলেন। কথোপকথনচ্ছলে কোন্ জমীদারীর কিরূপ অবস্থা, তাহা সকল জিজ্ঞাসা করিতে লাগিলেন। কৃষ্ণকান্ত গোবিন্দলালের বিষয়ানুরাগ দেখিয়া সন্তুষ্ট হইয়া বলিলেন, “তোমরা যদি একটু একটু দেখ শুন, তবে বড় ভাল হয়। দেখ, আমি আর কয়দিন? তোমরা এখন হইতে সব দেখিয়া শুনিয়া না রাখিলে, আমি মরিলে কিছু বুঝিতে পারিবে না। দেখ, আমি বুড়া হইয়াছি, আর কোথাও যাইতে পারি না। কিন্তু বিনা তদারকে মহাল সব খারাব হইয়া উঠিল।”
গোবিন্দলাল বলিলেন, “আপনি পাঠাইলে আমি যাইতে পারি। আমারও ইচ্ছা, সকল মহালগুলি এক একবার দেখিয়া আসি।”
কৃষ্ণকান্ত আহ্লাদিত হইলেন। বলিলেন, “আমার তাহাতে বড় আহ্লাদ। আপাততঃ বন্দরখালিতে কিছু গোলমাল উপস্থিত। নায়েব বলিতেছে যে, প্রজারা অর্ধাঘট করিয়াছে, টাকা দেয় না; প্রজারা বলে, আমরা খাজনা দিতেছি, নায়েব উসুল দেয় না। তোমার যদি ইচ্ছা থাকে, তবে বল, আমি তোমাকে সেখানে পাঠাইবার উদ্যোগ করি।”
গোবিন্দলাল সম্মত হইলেন। তিনি এই জন্যই কৃষ্ণকান্তের কাছে আসিয়াছিলেন। তাঁহার এই পূর্ণ যৌবন, মনোবৃত্তি সকল উদ্বেলিত সাগরতরঙ্গতুল্য প্রবল, রূপতৃষ্ণা অত্যন্ত তীব্র। ভ্রমর হইতে সে তৃষ্ণা নিবারিত হয় নাই। নিদাঘের নীল মেঘমালার মত রোহিণীর রূপ, এই চাতকের লোচনপথে উদিত হইল–প্রথম বর্ষার মেঘদর্শনে চঞ্চলা ময়ূরীর মত গোবিন্দলালের মন, রোহিণীর রূপ দেখিয়া নাচিয়া উঠিল। গোবিন্দলাল তাহা বুঝিয়া মনে মনে শপথ করিয়া, স্থির করিলেন, মরিতে হয় মরিব, কিন্তু তথাপি ভ্রমরের কাছে অবিশ্বাসী বা কৃতঘ্ন হইব না। তিনি মনে মনে স্থির করিলেন যে, বিষয়কর্মে মনোভিনিবেশ করিয়া রোহিণীকে ভুলিব–স্থানান্তরে গেলে, নিশ্চিত ভুলিতে পারিব। এইরূপ মনে মনে সঙ্কল্প করিয়া তিনি পিতৃব্যের কাছে গিয়া বিষয়ালোচনা করিতে বসিয়াছিলেন। বন্দরখালির কথা শুনিয়া, আগ্রহসহকারে তথায় গমনে সম্মত হইলেন।
ভ্রমর শুনিল, মেজ বাবু দেহাত যাইবেন। ভ্রমর ধরিল, আমিও যাইব। কাঁদাকাটি, হাঁটাহাঁটি পড়িয়া গেল। কিন্তু ভ্রমরের শাশুড়ী কিছুতেই যাইতে দিলেন না। তরণী সজ্জিত করিয়া ভৃত্যবর্গে পরিবেষ্টিত হইয়া ভ্রমরের মুখচুম্বন করিয়া গোবিন্দলাল দশ দিনের পথ বন্দরখালি যাত্রা করিলেন।
ভ্রমর আগে মাটিতে পড়িয়া কাঁদিল। তার পর উঠিয়া, অন্নদামঙ্গল ছিঁড়িয়া ফেলিল, খাঁচার পাখী উড়াইয়া দিল, পুতুল সকল জলে ফেলিয়া দিল, টবের ফুলগাছ সকল কাটিয়া ফেলিল, আহারের অন্ন পাচিকার গায়ে ছড়াইয়া দিল, চাকরাণীর খোঁপা ধরিয়া ঘুরাইয়া ফেলিয়া দিল–ননদের সঙ্গে কোন্দল করিল–এইরূপ নানাপ্রকার দৌরাত্ম্য করিয়া, শয়ন করিল। শুইয়া চাদর মুড়ি দিয়া আবার কাঁদিতে আরম্ভ করিল। এ দিকে অনুকূল পবনে চালিত হইয়া, গোবিন্দলালের তরণী তরঙ্গিণী-তরঙ্গ বিভিন্ন করিয়া চলিল।