- গৃহদাহ
- প্রথম পরিচ্ছেদ
- দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
- তৃতীয় পরিচ্ছেদ
- চতুর্থ পরিচ্ছেদ
- পঞ্চম পরিচ্ছেদ
- ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ
- সপ্তম পরিচ্ছেদ
- অষ্টম পরিচ্ছেদ
- নবম পরিচ্ছেদ
- দশম পরিচ্ছেদ
- একাদশ পরিচ্ছেদ
- দ্বাদশ পরিচ্ছেদ
- ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ
- চতুর্দশ পরিচ্ছেদ
- পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ
- ষোড়শ পরিচ্ছেদ
- সপ্তদশ পরিচ্ছেদ
- অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ
- ঊনবিংশ পরিচ্ছেদ
- বিংশ পরিচ্ছেদ
- একবিংশ পরিচ্ছেদ
- দ্বাবিংশ পরিচ্ছেদ
- ত্রয়োবিংশ পরিচ্ছেদ
- চতুর্বিংশ পরিচ্ছেদ
- পঞ্চবিংশ পরিচ্ছেদ
- ষড়্বিংশ পরিচ্ছেদ
- সপ্তবিংশ পরিচ্ছেদ
- অষ্টাবিংশ পরিচ্ছেদ
- ঊনত্রিংশ পরিচ্ছেদ
- ত্রিংশ পরিচ্ছেদ
- একত্রিংশ পরিচ্ছেদ
- দ্বাত্রিংশ পরিচ্ছেদ
- ত্রয়স্ত্রিংশ পরিচ্ছেদ
- চতুস্ত্রিংশ পরিচ্ছেদ
- পঞ্চত্রিংশ পরিচ্ছেদ
- ষড়্ত্রিংশ পরিচ্ছেদ
- সপ্তত্রিংশ পরিচ্ছেদ
- অষ্টাত্রিংশ পরিচ্ছেদ
- ঊনচত্বারিংশ পরিচ্ছেদ
- চত্বারিংশ পরিচ্ছেদ
- একচত্বারিংশ পরিচ্ছেদ
- দ্বিচত্বারিংশ পরিচ্ছেদ
- ত্রিচত্বারিংশ পরিচ্ছেদ
- চতুশ্চত্বারিংশ পরিচ্ছেদ
গৃহদাহ
ষড়্ত্রিংশ পরিচ্ছেদ
কিন্তু ইহার মধ্যে ভুল যে কত বড় ছিল, তাহাও প্রকাশ পাইতে বিলম্ব ঘটিল না। বাটী সাজাইবার কাজে ব্যাপৃত থাকিয়া এই-সকল অত্যন্ত মহার্ঘ ও অপর্যাপ্ত উপকরণরাশির মধ্যে দাঁড়াইয়া তাই সকল চিন্তাকে ছাপাইয়া একটি চিন্তা সকলের মনে বার বার ঘা দিতে লাগিল যে, যাহার টাকা আছে সে খরচ করিয়াছে, এ একটা পুরাতন কথা বটে; কিন্তু এ ত শুধু তাই নয়। এ যেন একজনকে আরাম ও আনন্দ দিবার জন্য আর একজনের ব্যাকুলতার অন্ত নাই। কাজের ভিড়ের মধ্যে, জিনিসপত্র নাড়ানাড়ির মধ্যে সাধারণ কথাবার্তা অনেক হইল, চোখাচোখি অনেকবার হইল, কিন্তু সকলের ভিতর হইতেই একটা অনুচ্চারিত বাক্য, অপ্রকাশ্য ইঙ্গিত রহিয়া রহিয়া কেবল এইদিকেই অঙ্গুলি-নির্দেশ করিতে লাগিল।
বাড়িটার ধোয়া-মোছার কাজ শেষ হয় নাই। সুতরাং ইহাকে কতকটা বাসোপযোগী করিয়া লইতেই সারা বেলাটা গেল। ক্লান্ত পরিশ্রান্ত হইয়া তিনজনেই যখন বাড়ি ফিরিবার জন্য গাড়িতে আসিয়া বসিলেন, তখন রাত্রি এক প্রহর হইয়াছে। একটা বাতাস উঠিয়া সুমুখের কতকটা আকাশ স্বচ্ছ হইয়া গিয়াছিল, শুধু মাঝে মাঝে একটা ধূসর রঙের খণ্ডমেঘ এক দিগন্ত হইতে আসিয়া নদী পার হইয়া আর এক দিগন্তে ভাসিয়া চলিয়াছিল এবং তাহারই ফাঁকে ফাঁকে কভু উজ্জ্বল, কভু ম্লান জ্যোৎস্নার ধারা যেন সপ্তমীর বাঁকা চাঁদ হইতে চারিদিকের প্রান্তর ও গাছপালার উপর ঝরিয়া ঝরিয়া পড়িতেছিল। এই সৌন্দর্য দু’চক্ষু ভরিয়া গ্রহণ করিতে বৃদ্ধ রামবাবু জানালার বাহিরে বিস্ফারিতনেত্রে চাহিয়া রহিলেন; কিন্তু যাহারা বৃদ্ধ নয়, প্রকৃতির সমস্ত রস, সমস্ত মাধুর্য উপভোগ করিবারই যাহাদের বয়স, তাহারাই কেবল গাড়ির দুই গদী-আঁটা কোণে মাথা রাখিয়া চক্ষু মুদ্রিত করিল।
অনেকদিন পূর্বেকার একটি স্মৃতি অচলার মনের মধ্যে একেবারে ঝাপসা হইয়া গিয়াছিল, অনেকদিন পরে আজ আবার তাহাই মনে পড়িতে লাগিল—যেদিন সুরেশের কলিকাতার বাটী হইতে তাহারা এমনি এক সন্ধ্যাবেলায় এমনি গাড়ি করিয়াই ফিরিতেছিল। যেদিন তাহার সম্পদ ও সম্ভোগের বিপুল আয়োজন মহিমের নিকট হইতে তাহার অতৃপ্ত মনটাকে বহুদূরে আকর্ষণ করিয়া লইয়া গিয়াছিল। যেদিন সুরেশের হাতেই আত্মসমর্পণ করা একান্ত অসঙ্গত বা অসম্ভব বলিয়া মনে হয় নাই—বহুকাল পরে কেন যে সহসা আজ সেই কথাটাই স্মরণ হইল, ভাবিতে গিয়া নিজের অন্তরের নিগূঢ় ছবিটা স্পষ্ট দেখিতে পাইয়া তাহার সর্বাঙ্গ বাহিয়া যেন লজ্জার ঝড় বহিতে লাগিল।
লজ্জা! লজ্জা! লজ্জা! এই গাড়ি, ওই বাড়ি ও তাহার কত কি আয়োজন সমস্তই তাহার—সমস্তই তাহার স্বামীর আদরের উপহার বলিয়া একদিন সবাই জানিল; আবার একদিন আসিবে, যখন সবাই জানিবে ইহাতে তাহার সত্যকার অধিকার কানাকড়ির ছিল না—ইহার আগাগোড়াই মিথ্যা! সেদিন লজ্জা সে রাখিবে কোথায়? অথচ আজিকার জন্য এ কথা কিছুতেই মিথ্যা নয় যে, ইহার সবটুকুই সুদ্ধমাত্র তাহারই পূজার নিমিত্ত সযত্নে আহরিত হইয়াছে এবং ইহার আগাগোড়াই স্নেহ দিয়া, প্রেম দিয়া, আদর দিয়া মণ্ডিত। এই যে মস্ত জুড়ি দিগ্বিদিক কাঁপাইয়া তাহাকে বহন করিয়া ছুটিয়াছে, ইহার সুকোমল স্পর্শের সুখ, ইহার নিস্তরঙ্গ অবাধ গতির আনন্দ—সমস্তই আজ তাহার! আজ যে কেবল তাহারই মুখ চাহিয়া ওই অগণিত দাসদাসী আগ্রহে প্রতীক্ষা করিতেছে!
দেখিতে দেখিতে তাহার মনের মধ্য দিয়া লোভ ও ত্যাগ, লজ্জা ও গৌরব ঠিক যেন গঙ্গা-যমুনার মতই পাশাপাশি বহিতে লাগিল এবং ক্ষণকালের নিমিত্ত ইহার কোনটাকে সে অধিকার করিতে পারিল না। কিন্তু তথাপি বাটী পৌঁছিয়া বৃদ্ধ রামবাবু তাঁহার সান্ধ্যকৃত্য সমাপন করিতে চলিয়া গেলে, সে যখন অকস্মাৎ শ্রান্তি ও মাথা-ব্যথার দোহাই দিয়া অত্যন্ত অসময়ে দ্রুতপদে গিয়া নিজের ঘরের কবাট রুদ্ধ করিয়া শয্যাগ্রহণ করিল, তখন একমাত্র লজ্জা ও অপমানই যেন তাহাকে গিলিয়া ফেলিতে চাহিল। পিতার লজ্জা, স্বামীর লজ্জা, আত্মীয়-বন্ধুবান্ধবের লজ্জা, সকলের সমবেত লজ্জাটাই কেবল চোখের উপর অভ্রভেদী হইয়া উঠিয়া অপর সকল দুঃখকেই আবৃত করিয়া দিল। সুদ্ধমাত্র এই কথাটাই মনে হইতে লাগিল, এ ফাঁকি একদিন যখন ধরা পড়িবে, তখন মুখখানা লুকাইবার জায়গা পাইবে সে কোথায়?
অথচ যে সমাজ ও সংস্কারের মধ্যে সে শিশুকাল হইতে মানুষ হইয়া উঠিয়াছে, সেখানে অজিনের শয্যা বা তরুমূলবাস কোনটাকেই কাহাকেও কামনার বস্তু বলিতে সে শুনে নাই। সেখানে প্রত্যেক চলাফেরা, মেলামেশা, আহার-বিহারের মধ্যে বিলাসিতার প্রতি বিরাগ নয়, অনুরাগকেই উত্তরোত্তর প্রচণ্ড হইয়া উঠিতে দেখিয়াছে; যেখানে হিন্দুধর্মের কোন আদর্শের সহিতই তাহার পরিচয় ঘটিতে পায় নাই—পরলোকের আশায় ইহলোকের সমস্ত সুখ হইতে আপনাকে বঞ্চিত করার নিষ্ঠুর নিষ্ঠাকে সে কোনদিন দেখিতে পায় নাই; সে দেখিয়াছে, শুধু পরের অনুকরণে গঠিত ঘরের সমাজটাকে,—যাহার প্রত্যেক নরনারীই সংসারের আকণ্ঠ-পিপাসায় দিনের পর দিন কেবল শুষ্ক হইয়াই উঠিয়াছে।
তাই এই নিরালা শয্যার মধ্যে চোখ বুজিয়া সে ঐশ্বর্য জিনিসটাকে কিছুই না বলিয়া উড়াইয়া দিতে পারিল না এবং চাই না, প্রয়োজন নাই, এ কথাতেও মন তাহার কোন মতেই সায় দিল না। তাহার আজন্মের শিক্ষা ও সংস্কার ইহার কোনটাকেই তুচ্ছ করিবার পক্ষে অনুকূল নয়, অথচ গ্লানিতেও সমস্ত হৃদয় কালো হইয়া উঠিয়াছে। তাই যত সম্পদ, যত উপকরণ—এই দেহটাকে সর্বপ্রকারে সুখে রাখিবার মত যত বিবিধ আয়োজন আজ অযাচিত তাহার পদতলে আসিয়া ঠেকিয়াছে, তাহার দুর্নিবার মোহ তাহাকে অবিশ্রান্ত এক হাতে টানিতে এবং অন্য হাতে ফেলিতে লাগিল।
অথচ দুঃখের স্বপ্নের মধ্যে যেমন একটা অপরিস্ফুট মুক্তির চেতনা সঞ্চরণ করে, তেমনি এই বোধটাও তাহার একেবারে তিরোহিত হয় নাই যে, অদৃষ্টের বিড়ম্বনায় আজ যাহা ফাঁকি, ইহাই একদিন সত্যি হইয়া উঠিবার পথে কোন বাধাই ছিল না। এই সুরেশই তাহার স্বামী হইতে পারিত, এবং কোন এক ভবিষ্যতে ইহা একেবারেই অসম্ভব, এমন কথাও কেহ জোর করিয়া বলিতে পারে না।
তাহাদের অনুরূপ সকল সমাজেই বিধবার আবার বিবাহ হয়, হিন্দু নারীর মত কেবল একটিমাত্র লোকের কাছেই পত্নীত্বের বন্ধন ইহকাল ও পরকাল ব্যাপিয়া বহন করিয়া ফিরিবার অলঙ্ঘ্য অনুশাসন তাহাদের মানিতে হয় না। তাই জীবন-মরণে শুধু কেবল একজনকেই অনন্যগতি বলিয়া ভাবনা করিবার মত অবরুদ্ধ মন তাহার কাছে প্রত্যাশা করা যায় না। সেই মন এক স্বামীর জীবিতকালেই অপরকে স্বামী বলিতে অপরাধের ভারে যতই কেননা পীড়িত, লজ্জা ও অপমানের জ্বালায় যতই না জ্বলিতে থাকুক, ধর্ম ও পরকালের গদা ধরাশায়ী করিয়া দিবার ভয় দেখাইতে পারিল না।
বন্ধ দরজায় ঘা দিয়া রামবাবু ডাকিয়া বলিলেন, জলস্পর্শ না করে শুয়ে পড়লে মা, শরীরটা কি খুব খারাপ বোধ হচ্ছে?
অচলার চিন্তার সূত্র ছিঁড়িয়া গেল। হঠাৎ মনে হইল, এ যেন তাহার বাবার গলা। রাগ করিয়া অসময়ে শুইয়া পড়িলে ঠিক এমনি উদ্বিগ্ন-কণ্ঠে তিনি কবাটের বাহিরে দাঁড়াইয়া ডাকাডাকি করিতেন।
এই চিন্তাটাকে সে কিছুতেই ঠাঁই দিত না, কিন্তু এই স্নেহের আহ্বানকে সে ঠেকাইতে পারিল না, চক্ষের নিমিষে তাহার দুই চক্ষু অশ্রুপূর্ণ হইয়া উঠিল। তাড়াতাড়ি মুছিয়া ফেলিয়া রুদ্ধকণ্ঠ পরিষ্কার করিয়া সাড়া দিল, এবং দ্বার উন্মুক্ত করিয়া সম্মুখে আসিয়া দাঁড়াইল।
এই বৃদ্ধ ব্যক্তি এতদিনে অত ঘনিষ্ঠতা সত্ত্বেও বরাবর একটা দূরত্ব রক্ষা করিয়াই চলিতেন; এ বাটীতে ইহাদের আজ শেষ দিন মনে করিয়াই বোধ হয় এক নিমিষে এই ব্যবধান অতিক্রম করিয়া গেলেন। এক হাত অচলার কাঁধের উপর রাখিয়া, অন্য হাতে তাহার ললাট স্পর্শ করিয়া মুহূর্ত পরেই সহাস্যে বলিলেন, বুড়ো জ্যাঠামশাইয়ের সঙ্গে দুষ্টামি মা? কিছু হয়নি, এসো, বলিয়া হাত ধরিয়া আনিয়া বারান্দার একটা চেয়ারের উপর বসাইয়া দিলেন।
অদূরে আর একটা চৌকির উপর সুরেশ বসিয়াছিল; সে মুখ তুলিয়া একবার চাহিয়াই আবার মাথা হেঁট করিল। কথা ছিল, রাত্রে ধীরে-সুস্থে বসিয়া সারাদিনের কাজকর্মের একটা আলোচনা করা হইবে, সে সেইজন্যই শুধু একাকী বসিয়া রামবাবুর ফিরিয়া আসার প্রতীক্ষা করিতেছিল। তাহার প্রতিই চাহিয়া বৃদ্ধ একটু হাসিয়া কহিলেন, সুরেশবাবু, আপনার ঘরের লক্ষ্মীটি ত কোন্ এক বিলিতি বাপের মেয়ে—দিনক্ষণ পাঁজি-পুঁথি মানেন না। তখন আপনি নিজে মানুন, না মানুন, বিশেষ যায়-আসে না—কিন্তু আমার এই তিন-কুড়ি বছরের কুসংস্কার ত যাবার নয়! কাল প্রহর-দেড়েকের ভেতরেই একটা শুভক্ষণ আছে—
সুরেশ ইঙ্গিতটা হঠাৎ বুঝিতে না পারিয়া কিছু আশ্চর্য হইয়াই প্রশ্ন করিল, কিসের শুভক্ষণ?
রামবাবু ঠিক সোজা উত্তরটা দিতে পারিলেন না। একটু যেন ইতস্ততঃ করিয়া কহিলেন, এর পরে কিন্তু সপ্তাহ-খানেকের মধ্যে পাঁজিতে আর দিন খুঁজে পেলাম না—তাই ভাবছিলাম—
কথাটা এবার সুরেশ বুঝিল বটে, কিন্তু হাঁ-না কোনপ্রকার জবাব দিতে না পারিয়া সভয়ে গোপনে একবার মুখ তুলিয়া অচলার প্রতি চাহিতে গিয়া আর চোখ নামাইতে পারিল না, দেখিল, সে দুটি স্থির দৃষ্টি তাহারই উপর নিবদ্ধ করিয়া নিঃশব্দে বসিয়া আছে।
অচলা শান্ত মৃদুকণ্ঠে কহিল, কাল সকালেই ত আমরা ও-বাড়ি যেতে পারি?
বিস্ময়াভিভূত সুরেশের মুখে এই সোজা প্রশ্নের সোজা উত্তর কিছুতেই বাহির হইল না। সে শুধু অনিশ্চিত কণ্ঠে কোনমতে এই কথাটাই বলিতে চাহিল যে, সে বাড়ি এখনও সম্পূর্ণ বাস করিবার মত হয় নাই। তাহার মেঝেগুলা হয়ত এখনও ভিজা, নূতন দেয়ালগুলা হয়ত এখনও কাঁচা—হয়ত অচলার কোন একটা অসুখ-বিসুখ, না হয়ত তাহার—
কিন্তু আপত্তির তালিকাটা শেষ হইতে পাইল না। অচলা একটু যেন হাসিয়াই বলিল, তা হোক গে। যে দুর্দিনে শিয়াল-কুকুর পর্যন্ত তার ঘর ছাড়তে চায় না, সেদিনেও যদি আমাকে অজানা জায়গায় গাছতলায় টেনে আনতে পেরে থাকো ত একটু ভিজে মেঝে, কি একটু কাঁচা দেওয়ালের ভয়ে তোমাকে আমার জন্যে ভেবে সারা হতে হবে না। সেদিন যার মরণ হয়নি সে আজও বেঁচে থাকবে।
রামবাবুর দিকে ফিরিয়া কহিল, আপনি একটুও ভাববেন না জ্যাঠামশাই। আমরা কাল সকালেই যেতে পারবো। আপনার ঋণ আমি জন্ম-জন্মান্তরেও শোধ করতে পারবো না জ্যাঠামশাই, আমরা কালই বিদায় হবো। বলিতে বলিতেই যে কাঁদিয়া ছুটিয়া পলাইয়া নিজের ঘরে গিয়া কবাট বন্ধ করিয়া দিল।
বৃদ্ধ রামবাবু ঠিক যেন বজ্রাহতের ন্যায় নিশ্চল হইয়া বসিয়া রহিলেন। তাঁহার বিহ্বল ব্যাকুল দৃষ্টি একবার সুরেশের আনত মুখের প্রতি, একবার ওই অবরুদ্ধ দ্বারের প্রতি চাহিয়া কেবলই এই বিফল প্রশ্ন করিতে লাগিল, এ কি হইল? কেন হইল? কেমন করিয়া সম্ভব হইল? কিন্তু অন্তর্যামী ভিন্ন এই মর্মান্তিক অভিমানের আর কে উত্তর দিবে।