সুইডেন রাজ্যের অন্তর্গত স্মিলণ্ড প্রদেশে রাসল্ট নামে এক গ্রাম আছে। চার্লস লিনিয়স, ১৭০৭ খৃঃ অব্দে, তথায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁহার পিতা মাতা অতি দীন গ্রামপুরোহিত ছিলেন। লিনিয়স, অত্যন্ত দরিদ্র ও অগণ্য হইয়াও, অলোকসামান্য বুদ্ধিশক্তি, মহোৎসাহশীলতা ও অবিচলিত অধ্যবসায় প্রভাবে বিজ্ঞানশাস্ত্র ও অন্যান্য বিদ্যা বিষয়ে মনুষ্যসমাজে অগ্রগণ্য হইয়াছেন। অতি শৈশবকালেই প্রকৃতির অনুশীলনে তাঁহার প্রগাঢ় অনুরাগ জন্মে; তন্মধ্যে উদ্ভিদবিদ্যার আলোচনায় তিনি সমধিক অনুরক্ত ছিলেন। বোধ হয়, বাল্যকালে ক্ষেত্রে ক্ষেত্রে পরিভ্রমণে ও প্রকৃতিরূপ প্রকাণ্ড পুস্তকের অধ্যয়নে অধিক রত ছিলেন, পাঠশালার নিরূপিত পুস্তকে তাদৃশ মনোনিবেশ করিতেন না। সুতরাং, তাঁহার প্রথম শিক্ষকেরা তদীয় অনাবেশ দর্শনে অতিশয় অসন্তুষ্ট হইয়াছিলেন। তাঁহার পিতা তাঁহাদিগের মুখে পাঠের গতিশ্রবণে বিরক্ত হইয়া, তাঁহাকে উপানৎকারের ব্যবসায়ে নিযুক্ত করিবার সঙ্কল্প করিলেন; কিন্তু, পরিশেষে বন্ধুবর্গের সবিশেষ অনুরোধ ও লিনিয়সের সাতিশয় বিনয়ের বশবর্ত্তী হইয়া, চিকিৎসাবিদ্যাশিক্ষার্থে অনুমতি দিলেন; বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তাঁহার, না পুস্তক, না বস্ত্র, না আহারসামগ্রী, কিছুরই সঙ্গতি ছিল না; এমন কি, অভীষ্ট উদ্ভিদবিদ্যার অনুশীলনসমাধানার্থে ক্ষেত্রে ক্ষেত্রে ভ্রমণ করিতে পারিবার নিমিত্ত, জীর্ণ চর্ম্মপাদুকাতে বল্কলের তালী দিয়া লইতে হইত। এরূপ দুরবস্থাতেও তিনি প্রতিপত্তি লাভ করিতে লাগিলেন।

লিনিয়স কেবল যৌবনদশায় অবতীর্ণ হইয়াছেন, এমন সময়ে অপ্সালের বৈজ্ঞানিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষেরা তাঁহাকে এই অভিপ্রায়ে লাপ্লাণ্ডের অতি ভীষণ ভূভাগে পাঠাইবার নিমিত্ত স্থির করিলেন যে, তিনি তত্রত্য নিসর্গোৎপন্ন বস্তুসমুদায়ের তত্ত্বনিৰ্দ্ধারণ করিয়া আনিবেন। তিনিও, অনুরাগ ও ব্যগ্রতা প্রদর্শন পুর্ব্বক, পাথেয়মাত্রপর্য্যাপ্ত বেতনে, উক্ত উক্তবহুপরিশ্রমসাধ্যব্যাপারসমাধানার্থ ঐ প্রান্তরদেশে প্রস্থান করিলেন। তথা হইতে প্রত্যাগমনের পর, অপ্সালের বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদ ও ধাতু বিদ্যা বিষয়ে উপদেশ দিতে আরম্ভ করিলেন। উপদেষ্টব্য বিষয়ে সম্পূর্ণ অধিকার এবং উপদেশপ্রণালীর চমৎকারিত্ব ও অভিনবত্ব প্রযুক্ত চতুর্দ্দিকে ভূরি ভূরি শ্রোতৃ সমাগম হইল।

কিন্তু উদয়োন্মুখী প্রতিভার নিত্যবিদ্বেষিণী ঈর্ষ্যা ত্বরায় তাঁহার অভ্যুদয়াশা ত্বরায় উচ্ছিন্ন করিল। ইহা উদ্ভাবিত হইল, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম আছে, কোন ব্যক্তি অগ্রে উপাধিপত্র প্রাপ্ত না হইলে, তথায় উপদেশ দিতে অধিকারী হয় না। দুর্ভাগ্যক্রমে, লিনিয়সের বিদ্যালয়সম্পৰ্কীয় কোন প্রশংসাপত্রাদি ছিল না। এই বিষয় উপলক্ষে, চিকিৎসাশাস্ত্রের অধ্যাপক ডাক্তর রোজিনের সহিত তাঁহার ঘোরতর বিবাদ উপস্থিত হইল। বন্ধুবর্গ মধ্যবর্ত্তী হইয়া তাঁহাকে সান্ত্বনা করিলেন। অনন্তর, তিনি কতিপয় শিষ্য সহিত অবিলম্বে অপ্সাল হইতে প্রস্থান করিলেন; এবং ধাতু ও উদ্ভিদ বিষয়ের তত্ত্বানুসন্ধানার্থে ডালিকার্লিয়া প্রদেশে পর্য্যটন করিতে লাগিলেন।

লিনিয়স, ডালিকার্লিয়ার রাজধানী ফহ্লন নগরে উপস্থিত হইয়া, তথাকার প্রধান চিকিৎসক ডাক্তর মোরিয়সের নিকট বিশিষ্টরূপে প্রতিপন্ন হইলেন। উক্ত ডাক্তর দয়াবান্ ও বিদ্যাবান্ ছিলেন। তাঁহার একটি বৃক্ষবাটিকাতে কতকগুলি তরু, লতা ও পুষ্প ছিল, তদ্দর্শনে লিনিয়স অপরিসীম হর্ষ প্রাপ্ত হইলেন। কিন্তু তাঁহার সমধিকসৌন্দর্য্যাধার আর একটি রমণীয় পুষ্প ছিল, লিনিয়স কখনও কোনও উদ্যানে বা ক্ষেত্রে, তাদৃশ মনোহর পুষ্প অবলোকন করেন নাই। ফলতঃ, নবীন উদ্ভিদবেত্তা ডাক্তর মোরিয়সের জ্যেষ্ঠা কন্যার প্রতি সাতিশয় অনুরক্ত হইলেন; এবং সেই নবীনা কামিনীরও অন্তঃকরণে গাঢ়তর অনুরাগ সঞ্চার হইল। লিনিয়স, অন্তঃকরণের অনুরাগ ও ব্যগ্রতা বশবর্ত্তী হইয়া, নবপ্রণয়িনীর জনকসন্নিধানে পাণিগ্রহণের কথা উত্থাপন করিলেন। সুশীল ডাক্তর, এই নবাগত বিদ্বান্ বাগ্মী যুবা ব্যক্তির ব্যবসায় ও সরলস্বভাব দর্শনে তাঁহার উপর অত্যন্ত সন্তুষ্ট ছিলেন। কিন্তু আপন কন্যাকেও অত্যন্ত ভাল বাসিতেন এবং নবানুরাগপরবশ যুবকজনের মত উদ্ধত ও অবিমৃষ্যকারী ছিলেন না। অতএব বিবেচনা করিলেন যে, অগ্র পশ্চাৎ না ভাবিয়া, এরূপ সহায়সম্পত্তিহীন ও কোন প্রকার নিয়মিত ব্যবসায় ও বিষয়কর্ম্ম শূন্য অনাথ ব্যক্তিকে জামাতা করিলে কন্যাকে চিরদুঃখিনী করা হয়। অনন্তর, তাঁহাকে বিবাহ বিষয়ে আর তিন বৎসর অপেক্ষা করিবার নিমিত্ত সম্মত করিয়া, চিকিৎসাবিদ্যা অধ্যয়নার্থ দৃঢ়রূপে পরামর্শ দিলেন, এবং কহিলেন, ইতিমধ্যে আমি কন্যার বিবাহ দিব না; যদি তুমি এই সময় মধ্যে কিঞ্চিৎ সংস্থান করিতে পার, তাহা হইলে আমি, ক্ষণকালও বিলম্ব না করিয়া, প্রসন্নচিত্তে তোমাকে কন্যাদান করিব।

ইহা অপেক্ষা আর কি উৎকৃষ্ট প্রস্তাব হইতে পারে। লিনিয়স, স্বীয় নির্ম্মল জ্ঞানের সহায়তা দ্বারা প্রীতিপ্রসারচঞ্চল চিত্তকে স্থিরীভূত করিয়া, প্রশংসাপত্র লইবার নিমিত্ত অবিলম্বে লিডন নগরে প্রস্থান করিলেন। তাঁহার প্রস্থানের পূর্ব্বে, কুমারী মোরিয়স, বহুদিনের সংগৃহীত ব্যয়াবশিষ্ট এক শত মুদ্রা আনয়ন করিয়া, প্রণয়ব্রতের বরণও অকৃত্রিম অনুরাগের দৃঢ়তর প্রমাণ স্বরূপ, তাঁহার চরণে সমর্পণ করিলেন। তিনি, তাঁহার কোমলকরপল্লবমর্দ্দন ও ব্যগ্রচিত্তে বারম্বার মুখচুম্বন করিলেন এবং অপরিমেয় প্রণয়রসাস্বাদে প্রফুল্লচিত্ত হইয়া অন্তঃকরণ মধ্যে তাঁহার অকৃত্রিম ঔদার্য্যের ভূয়সী প্রশংসা করিতে করিতে বিদায় লইলেন।

অনেকানেক রসজ্ঞ নায়কেরা, এমন অবস্থায়, মনে মনে কতপ্রকার কল্পনা করিতে করিতে, প্রস্থান করেন; এবং মধ্যে মধ্যে নায়িকার উদ্দেশে বিচ্ছেদবেদনানিবেদনদূতীস্বরূপ রসবতী গাথা রচনা করিয়া থাকেন; এবং দুর্ব্বিষহবিরহাতিকাতর হইয়া অনবরত বিলাপ ও পরিতাপ করেন। কিন্তু লিনিয়স নায়ক সেরূপ ছিলেন না। তিনি ইহাই ভাবিয়া প্রফুল্ল হৃদয়ে প্রস্থান করিলেন, ভাল, এক ব্যক্তি আমাকে যথার্থ রূপ ভাল বাসে ও আমার ব্যবসায়ের প্রশংসা করে; আমিও, তাহার প্রণয়ের যোগ্য পাত্র হইবার নিমিত্ত বিদ্যা ও খ্যাতিলাভ বিষয়ে প্রাণপণে যত্ন ও পরিশ্রম করিতে ক্রটি করিব না।

অনন্তর, তিনি লিডন নগরে উপস্থিত হইয়া সাতিশয় যত্ন ও পরিশ্রম সহকারে, অধ্যয়ন করিতে লাগিলেন, বোরহেব ও অন্যান্য বিজ্ঞানশাস্ত্রজ্ঞ বিখ্যাত পণ্ডিতদিগের নিকট প্রতিপন্ন হইলেন, এবং আমষ্টর্ডাম নগরের অধ্যক্ষের বাটীর চিকিৎসক হইলেন। যে দুই বৎসর এই কর্ম্মে নিযুক্ত থাকেন, ঐ কালে বহুতর পরিশ্রম ও ষত্ন সহকারে কতিপয় উৎকৃষ্ট গ্রন্থ রচনা করেন। অনন্তর, তিনি সমধিকবিদ্যালাভপ্রত্যাশায় ইংলণ্ড ও অন্যান্য দেশে ভ্রমণ করিলেন। ফলতঃ, তিনি এই সময়ে বিদ্যোপার্জ্জনবিষয়ে যে রূপ অসাধারণ পরিশ্রম ও যত্ন করিয়াছিলেন, শুনিলে অসম্ভব বোধ হয়। বাস্তবিক, পদার্থবিদ্যাসংক্রান্ত এমন কোন বিষয় ছিল না যে, তিনি তাহার তত্ত্বানুসন্ধানে প্রবৃত্ত হয়েন নাই, আর তাহা শৃঙ্খলাবদ্ধ করেন নাই; কিন্তু উদ্ভিদবিদ্যার অনুশীলনেই সর্ব্বাপেক্ষা অধিক রত ছিলেন, এবং ঐ বিদ্যায় এমন প্রতিষ্ঠা লাভ করিয়াছেন যে, উহার লোপ না হইলে, তাঁহার সেই প্রতিষ্ঠার অপক্ষয় সম্ভাবনা নাই।

লিনিয়স, ১৭৩৮ খৃঃ অব্দে, কিছু দিনের জন্যে পারিস যাত্রা করেন। ঐ বৎসরের শেষে, তিনি স্বদেশ প্রত্যাগমন পুর্ব্বক ষ্টকহলম নগরে চিকিৎসাব্যবসায় আরম্ভ করিলেন। প্রথমে সকলে তাঁহাকে অবজ্ঞাপ্রদর্শন করিয়াছিল। পরিশেষে, সৌভাগ্যোদয়বশতঃ, রাজ্ঞী ইলিয়োনোরার কাসের চিকিৎসায় কৃতকার্য্য হওয়াতে, তদবধি তন্নগরের অতি আদরণীয় চিকিৎসক হইয়া উঠিলেন, সামুদ্রিকসৈন্যসম্পৰ্কীয় চিকিৎসকের ও রাজকীয় উদ্ভিদবিদের পদে নিযুক্ত হইলেন। এই রূপে নিয়মিত আয় ব্যবস্থাপিত হইলে, পরম্পরানুরাগসঞ্চারের পাঁচ বৎসর পরে সেই প্রিয়তমা কামিনীর পাণিপীড়ন করিলেন।

কিয়দ্দিবস পরেই, লিনিয়স অপ্সালের বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়ুর্ব্বেদের অধ্যাপক নিযুক্ত হইলেন। ঐ সময়ে তাঁহার পূর্ব্বশত্রু রোজিন উক্ত বিদ্যালয়ে উদ্ভিদ বিদ্যার অধ্যাপকপদে নিযুক্ত হওয়াতে উভয়ে সদ্ভাব পুর্ব্বক পরম্পরের পদ বিনিময় করিয়া লইলেন। এইরূপে লিনিয়স, চিরপ্রার্থিত উদ্ভিদবিদ্যার অধ্যাপকপদে অধিরূঢ় হইয়া, অতি সম্মান পূর্ব্বক ক্রমাগত সপ্তত্রিংশৎ বৎসর উক্ত কার্য্য নির্ব্বাহ করিয়াছিলেন।

লিনিয়সের উদ্যোগে, কয়েক জন নব্য পণ্ডিত নিসর্গোৎপন্নপদার্থগবেষণার্থ দেশে দেশে প্রেরিত হইলেন। কালম, অসবেক, হসল্কিষ্ট ও লোফ্লিং এই কয়েক ব্যক্তি প্রাকৃত ইতিবৃত্ত বিষয়ে যে নানা আবিষ্ক্রিয়া করিয়া গিয়াছেন, পদার্থবিদ্যার শ্রীবৃদ্ধিবিষয়ে লিনিয়সের যে প্রগাঢ় অনুরাগ ও আগ্রহাতিশয় ছিল, তাঁহাই তাহার মূল কারণ। ডট্‌নিংহলম নগরে সুইডেনের রাজমহিষীর যে চিত্রশালিকা ছিল, তিনি তাহার সবিশেষ বিবরণ প্রস্তুত করিবার নিমিত্ত লিনিয়সের উপর ভারার্পণ করেন। তিনিও, তদনুসারে, তত্রত্য সমুদায় শঙ্খশম্বূকাদির বিজ্ঞানশাস্ত্রানুযায়িনী নুতন শৃঙ্খলা স্থাপন করেন। বোধ হয়, ১৭৫১ খৃঃ অব্দে, তিনি ফিলসফিয়া বোটানিকা অর্থাৎ উদ্ভিদমীমাংসা নামে গ্রন্থ প্রকাশ করেন। পরে, ১৭৫৪ খৃঃ অব্দে, স্পিশিস প্লাণ্টেরম অর্থাৎ উদ্ভিদসংবিভাগ নামে গ্রন্থ রচিত, ও প্রচারিত হয়। এই গ্রন্থে তৎকালবিদিত নিখিল তরুগুল্মাদির সবিশেষ বিবরণ লিখিত হইয়াছে। এই গ্রন্থ লিনিয়সের অন্যান্য গ্রন্থ অপেক্ষ উৎকৃষ্ট ও অবিনশ্বর।

১৭৫৩ খৃঃ অব্দে, এই মহীয়ান্‌ পণ্ডিত, নাইট অব্ দি পোলার ষ্টার, এই উপাধি প্রাপ্ত হইলেন। এই মহতী মর্য্যাদা ইহার পুর্ব্বে কখনও কোনও পণ্ডিত ব্যক্তিকে প্রদত্ত হয় নাই। ১৭৬১ খৃঃ অব্দে, তিনি সন্ত্রান্তলোকশ্রেণীমধ্যে পরিগণিত হইলেন। অন্যান্যদেশীয় বৈজ্ঞানিক সমাজ হইতেও বিদ্যাসম্বদ্ধ নানা মর্য্যাদা প্রাপ্ত হয়েন। তিনি, ক্রমে ক্রমে ঐশ্বর্য্যশালী হইয়া, অপ্সালসন্নিহিত হামার্ব্বি নগরে এক অট্টালিকা ও ভূম্যধিকার ক্রয় করিয়া জীবনের শেষ পঞ্চদশ বৎসর প্রায় তথায় অবস্থিতি করেন। ঐ স্থানে তাঁহার প্রাকৃত ইতিবৃত্ত সংক্রান্ত এক চিত্তশালিকা ছিল, তথায় উক্তবিদ্যাবিষয়ে উপদেশ দিতে আরম্ভ করিলেন। পৃথিবীর নানাভাগস্থিত বিজ্ঞানশাস্ত্রজ্ঞ লোকও অধ্বনীনবর্গের সাহায্যে তাঁহার ঐ চিত্তশালিকার সর্ব্বদাই বৃদ্ধি হইতে লাগিল।

লিনিয়স, জীবনের অধিকাংশ, শারীরিক সুস্থ ও পটু থাকাতে, অতিশয় উৎসাহ ও পরিশ্রম স্বীকার পুর্ব্বক পদার্থবিদ্যাবিষয়িণী গবেষণা সম্পাদনে সমর্থ হইয়াছিলেন; কিন্তু ১৭৭৪ খৃঃ অব্দের মে মাসে, অপস্মাররোগে আক্রান্ত হইলেন। এজন্য, অধ্যাপনাসংক্রান্ত যে সকল কর্ম্মে গুরুতর পরিশ্রম করিতে হইত, তৎসমুদায় পরিত্যাগ করিতে ও বিদ্যানুশীলনে ক্ষান্ত হইতে হইল। অনন্তর, তিনি ১৭৭৬ খৃঃ অব্দে, দ্বিতীয় বার ও কিয়ৎ দিন পরে আর এক বার, ঐ রোগে আক্রান্ত হইলেন। পরিশেষে, ১৭৭৮ খৃঃ অব্দে, জানুয়ারির একাদশাহে, তাঁহার প্রাণ ত্যাগ হয়।

লিনিয়স পূর্ব্বোক্ত গ্রন্থসমূহ ব্যতিরিক্ত ভেষজনির্ণয় এবং রোগনির্ণয় বিষয়ে এক এক প্রণালীবদ্ধ গ্রন্থ রচনা করেন। তিনি যেরূপ অসাধারণ সাহস, উৎসাহ, পারশ্রম ও দক্ষতা প্রকাশ করিয়াছেন বিজ্ঞানশাস্ত্রের সমুদায় ইতিহাস মধ্যে অতি অল্প লোকের সেরূপ দেখিতে পাওয়া যায়। তিনি পদার্থবিদ্যা বিষয়ে যে নানা প্রণালী ব্যবস্থাপিত করিয়াছেন, কালক্রমে তৎসমুদায় অন্যথা হইলেও হইতে পারে; কিন্তু, তাঁহা হইতে উক্ত বিদ্যার যেরূপ মহীয়সী শ্রীবৃদ্ধি হইয়াছে, তাহার সন্দেহ নাই। সুইডেনের অধিপতি চতুর্দশ চার্লস, ১৮১৯ খৃঃ অব্দে, লিনিয়সের জন্মভূমিতে তাঁহার এক কীর্ত্তিস্তম্ভ নির্ম্মাণের আদেশ করিয়াছেন।

সূত্রনির্দেশ ও টীকা

  1. ইঁহার প্রকৃত নাম লিনি; কিন্তু লাটিন ভাষায় সাধিত হইলে লিনিয়স্ হয়। ইনি লিনিয়স্ নামেই বিশেষ প্রসিদ্ধ।