neelkantha-pakhir-khunje

উনিশ

মেলার দাঙ্গা মেলাতেই শেষ হয়ে গেল। ঈশম বাড়ি ফিরে এসেছিল সকলের শেষে। শীর্ণ চেহারা, দুর্বল। দেখলে মনে হবে, শরীর থেকে প্রাণপাখি উড়ে গেছে। সে সেই যে ডাকছিল, মাঠে মাঠে নদীর পাড়ে, ডাক আর থামেনি। কেমনContinue Reading

neelkantha-pakhir-khunje

বিশ

ঈশম সহসা হেঁকে উঠল, কর্তারা ঠিক হইয়া বসেন! নৌকাটা খাল থেকে ঠেলে শীতলক্ষ্যার জলে ফেলে দেবার সময় এমন হেঁকে উঠল।—স্রোতের মুখে পইড়া গ্যালেন। পানিতে পইড়া গ্যালে আর উঠান যাইব না। সামনে বড় নদী, শীতলক্ষ্যা নামContinue Reading

neelkantha-pakhir-khunje

একুশ

ক্রমে রাত বাড়ছে। কেমন স্তব্ধ হয়ে আছে প্রকৃতি। গাছের একটা পাতা পর্যন্ত হাওয়ায় নড়ছে না। ক্রমে এই গ্রাম আরও অন্ধকারে ডুবতে থাকল। বুঝি চরাচরে কেউ জেগে নেই। ভেসে ভেসে সেই নৌকা কোথায় যে যায়, কোথায়Continue Reading

neelkantha-pakhir-khunje

বাইশ

সোনা সারারাত ঘুমের ভিতর স্বপ্ন দেখল, সেই এক বড় সমুদ্র যেন, বালিয়াড়িতে কারা একটা বড় কাঠের ঘোড়া টানতে টানতে নিয়ে এল। কি উঁচু আর লম্বা ঘোড়া! মানুষগুলি চলে গেলেই সে দেখতে পেল, ঘোড়াটা কাঠের নয়,Continue Reading

neelkantha-pakhir-khunje

তেইশ

মণীন্দ্রনাথ এত বড় রাজপ্রাসাদের মতো বাড়িতে ঢুকেই মোটামুটি স্বাভাবিক মানুষ হয়ে গেলেন। তিনি এখন সোনাকে সঙ্গে নিয়ে কাছারিবাড়ির উঠোনে পায়চারি করছেন। ভূপেন্দ্রনাথ ট্রাঙ্ক থেকে তাঁর ধুতি বের করে দিয়েছেন, পাঞ্জাবি খুলে নিজেই পরিয়ে দিয়েছেন। লম্বাContinue Reading

neelkantha-pakhir-khunje

চব্বিশ

অন্দরের দিকে যেতে সারাদিন আর সোনার ইচ্ছা হচ্ছিল না। গাছের পাতার মতো নিরিবিলি এক লজ্জা অথবা সংকোচ ওকে ঘিরে ধরেছে। সুতরাং সে সারাদিন কাছারিবাড়ির বারান্দায় বসেছিল। এবং চারপাশে যে মাঠ আছে, সেখানে সে ঘোরাফেরা করছে।Continue Reading

neelkantha-pakhir-khunje

পঁচিশ

সেই যে মালতী শুয়ে থাকল আর উঠল না। দিন তিনেক বাদে কিছুটা যেন হুঁশ ফিরেছে। চোখ মেলে তাকিয়েছে। কি যেন বলতে গিয়ে ঠোঁট কেঁপে উঠছে। বলতে পারছে না। আঁচল দিয়ে মালতী নিজের মুখ ঢেকে রেখেছে।Continue Reading

neelkantha-pakhir-khunje

ছাব্বিশ

বিকেলের রোদ এখন জানালায়। বৃন্দাবনী সব দরজা খুলে দিচ্ছে। এই ঘরে আয়নার সামনে অমলা কমলা এখন সাজবে। বারান্দায় অমলা কমলা দাঁড়িয়ে আছে। দূরে শীতলক্ষ্যার পাড়। পাড়ে পাড়ে কাটা মোষ নিয়ে যাচ্ছে যারা, অমলা কমলা তাদেরContinue Reading

neelkantha-pakhir-khunje

সাতাশ

সকাল থেকেই বিসর্জনের বাজনা বাজছে। দেবীর চোখে মুখে বিষণ্ণতা। তিনি আবার হিমালয়ে যাচ্ছেন। আগমনী গান যে যার গাইবার এতদিন গেয়েছে। এবারের মতো আর গাইবার কিছু নেই। এইদিন সব কিছুতেই একটা বেদনার ছাপ। এত যে রোদContinue Reading

neelkantha-pakhir-khunje

আটাশ

এবার ওদের ফেরার পালা। ঈশম সকাল সকাল দুটো রান্না করে খেয়ে নিয়েছে। সে খুব সকালে গোটা নৌকার পাটাতন ধুয়েছে। গলুইতে জল জমে ছিল, সব ফেলে দিয়ে একেবারে নৌকা হালকা করে রেখেছে। পাল যেখান যা সামান্যContinue Reading

neelkantha-pakhir-khunje

ঊনত্রিশ

উপরে হেমন্তের আকাশ। নিচে ধানের মাঠ। আর রাতের অজস্র তারার আলো এবং মানুষজনের ভিড় চারপাশে। মালতী নুনের নিচে শুয়ে আছে। যেন ঘুম যাচ্ছে। সোনা রাত বাড়লে আর জেগে থাকতে পারেনি। সে যে শতরঞ্জ পাতা আছেContinue Reading

neelkantha-pakhir-khunje

ত্রিশ

তখন মালতী হাসছিল। রঞ্জিতের কথা শুনে হাসছিল। এমন প্রতিশোধ স্পৃহা থাকে হাসিতে, রঞ্জিত মালতীর মুখ না দেখলে যেন টের পেত না। কী করুণ আর অসহায় মুখ মালতীর! কী কঠিন হাসি! খুপরি ঘরটার ভিতর মালতী একটাContinue Reading

neelkantha-pakhir-khunje

দ্বিতীয় খণ্ড

দেশভাগ নিয়ে ‘নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে’ সিরিজের চারটি পর্ব। প্রথম পর্ব ‘নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে’, দ্বিতীয় পর্ব ‘মানুষের ঘরবাড়ি’, তৃতীয় পর্ব ‘অলৌকিক জলযান’, চতুর্থ পর্ব ‘ঈশ্বরের বাগান’। কিংবদন্তী তুল্য উপন্যাস ‘নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে’ সম্পর্কে অগ্রজ সাহিত্যিক বিমলContinue Reading

neelkantha-pakhir-khunje

এক

তখন ভালোবাসার যৌবন হরণ কইরা নেয় আকালুদ্দিন। আন্নু ঘরের ভিতর। ফেলু বাছুর নিয়ে মাঠে গেছে। ফেলু মাঠে নেমেই দেখল দুটো ঘোড়া পুকুরপাড়ে গোলাপজাম গাছটায় কারা বেঁধে রেখেছে। অনেক লোকজন ছুটে যাচ্ছে ঠাকুরবাড়ি। বুড়োকর্তার শরীর খারাপContinue Reading

neelkantha-pakhir-khunje

দুই

সেদিনই শশীমাস্টার খবর নিয়ে গেলেন মুড়াপাড়া। শচীন্দ্রনাথকে সন্তোষ দারোগা ধরে নিয়ে গেছে। কিছু খোঁজখবর পেতে চায় রঞ্জিত সম্পর্কে। কিছু কিছু রাজনৈতিক কর্মী এখানে ওখানে ধরা পড়েছে। জেলে নিয়ে যাচ্ছে। শচীন্দ্রনাথ, উমানাথ সেনের মতো বড় কর্মীContinue Reading

neelkantha-pakhir-khunje

তিন

গাছ-পাতার ফাঁকে সূর্যের আলো-ছায়া ছায়া ভাব, হেমন্তের শীত। সোনা চিঠি হাতে অর্জুন গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছে। শীত এসে যাচ্ছে বলে সকাল সকাল দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে। চিঠিটা অমলা লিখেছে। নতুবা কে তাকে চিঠি দেবে! অমলারContinue Reading

neelkantha-pakhir-khunje

চার

শীত পড়তে পড়তেই চন্দ্রনাথ চলে এলেন বাড়িতে। ভূপেন্দ্রনাথ আসবেন মাঘ মাসের সতেরো তারিখে। কারণ সেই তারিখে শচীন্দ্রনাথ ছাড়া পাচ্ছেন। কোর্ট-কাছারি অথবা কী করে কী যে হয়েছিল সোনা জানে না। ছোটকাকা ফিরে আসছেন। ছোটকাকা ছাড়া পাচ্ছেনContinue Reading

neelkantha-pakhir-khunje

পাঁচ

আবার সেই বাদ্য বাজছিল। ঢাক-ঢোল-সানাই বাজছে। জল ভরতে গেছে মেয়েরা। মাথা নেড়া করছে সোনা লালটু পলটু। উৎসবের বাড়ি, কত আত্মীয়-কুটুম। তাদের সন্তান-সন্ততি। সব ছেলেপুলে চারপাশ ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে। ওরা বুঝি তামাশা দেখছে—এমন এক ভাবContinue Reading

neelkantha-pakhir-khunje

ছয়

আজ দণ্ডী বিসর্জনের দিন। খুব সকালে উঠে সোনা, লালটু, পলটু, আহ্নিক করল। সূর্যোদয়ের আগে ওদের আজ নদীর পাড়ে হাজির হতে হবে। আহ্নিক শেষে ওরা এসে উঠোনে দাঁড়াল। তরমুজ খেত পার হলেই নদী। সেই নদীতে ওরাContinue Reading

neelkantha-pakhir-khunje

সাত

জানালা খোলা। কামরাঙা গাছের অন্ধকারে কিছু জোনাকি জ্বলছে। বেতঝোপ পার হলে মাঠ। মাঠে আশ্চর্য সাদা জ্যোৎস্না। বড়বৌ সেই সাদা জ্যোৎস্নার দিকে তাকিয়েছিল, না ঘরের আয়নায় নিজের মুখ দেখছিল বোঝা যাচ্ছে না। গলায় চন্দ্রহার পরেছে বড়বৌ।Continue Reading