☼ অদ্বৈত মল্লবর্মণ ☼
তিতাস একটি নদীর নাম
অষ্টম পরিচ্ছেদ
শ্রাবণ মাস শেষ হইয়াছে, পদ্মাপুরাণও পড়া শেষ হইল। ঘরে ঘরে মনসা পূজার আয়োজন করিয়াছে। আর করিয়াছে জালা বিয়া’র আয়োজন। বেহুলাসতী মরা লখিন্দরকে লইয়া পুরীর বাহির হইবার সময় শাশুড়ী ও জা’দিগকে কতকগুলি সিদ্ধ ধান দিয়া বলিয়াছিল, আমার স্বামী যেদিন বাঁচিয়া উঠিবে, এই ধানগুলিতে সেদিন চারা বাহির হইবে। চারা তাতে যথাকলেই বাহির হইয়াছিল। এই ইতিহাস পুরাণরচয়িতার অজানা হইলেও মালোপাড়ার মেয়েদের অজানা নাই। তারা বেহুলার এয়োস্তালির স্মারকচিহ্নরূপে মনসা পূজার দিন এক অভিনব বিবাহের আয়োজন করে। ধানের চারা বা জালা এর প্রধান উপকরণ। তাই এর নাম জালাবিয়া। এক মেয়ে বরের মত সোজা হইয়া চেকিতে দাঁড়ায়, আরেক মেয়ে কনের মত সাতবার তাকে প্রদক্ষিণ করে, দীপদানির মত একখানি পাত্রে ধানের চারাগুলি রাখিয়া বরের মুখের কাছে নিয়া প্রতিবার নিছিয়া-পুছিয়া লয়। এইভাবে জোড়ায় জোড়ায় নারীদের মধ্যে বিবাহ হইতে থাকে আর একদল নারী গীত গাহিয়া চলে।
পূজার দিন এক সমবয়সিনী ধরিল, ‘দুই বছর আগে তুই আমারে বিয়া কইরা রাখছিলি, মনে আছে? এইবছর তোরে আমি বিয়া করি কেমুন লা উদি।’
‘ন ভইন।’
‘তবে তুই কর আমারে।’
‘না ভইন। আমার ভাল লাগে না।’
বিয়ের কথায় অনন্তর আমোদ জাগিল, ‘কর না বিয়া, অত যখন কয়?
‘তুই কস্? আচ্ছা তা হইলে করতে পারি।’
কি মজা। উদয়তারা নিজে মেয়ে হইয়া আরেকজন মেয়েকে বিবাহ করিতেছে! দুইজনেরই মাথায় ঘোমটা, কি মজা। কিন্তু অনন্তর কাছে তার চাইতে ও মজার জিনিস মেয়েদের গান গাওয়াটা। তারা গাহিতেছে এই মর্মের এক গান : অবিবাহিতা বালিকার মাথায় লখাই ছাতা ধরিয়াছে; কিন্তু বালিকা লখাইকে একটাও পয়স। কড়ি দিতেছে না; ওরে লখাই, তুই বালিকার মাথায় ছাত। ধরা ছাড়িয়া দে, কড়ি আমি দিব। তারপরের গান : ‘সেই দোকানে যায় গো বালা ঘট কিনিবারে।’ সেই ঘটে মনসা পূজা হইল, কিন্তু মনসা নদী পার হইবে কেমন করিয়া। এক জেলে, নৌকা নিয়া জাল পাতিয়াছিল। মনসা তাকে ডাকিয়া বলিল, তোর না খান দে আমি পার হই, তোকে ধনে পুত্রে বড় করিয়া দিব। উদয়তারার এক ননাসের নাম ছিল মনসা। তাই মনসাপূজা বলিতে পারে না। স্বামী যেমন মান্ত, স্বামীর বড় বোনও তেমনি মান্য। সে কনে-বোটিকে লক্ষ্য করিয়া বলিল, ‘শাওনাই পূজা ত হইয়া গেল ভইন, সামনে আছে আর নাও-দোঁড়ানি। বড় ভাল লাগে এইসব পূজা-পালি হুড় ম-হড়ম নিয়া থাকতে।’
কনে-বউ মাথার ঘোমটা ফেলিয়া দিয়া কাসেব থালায় ধানদূর্ব পঞ্চপ্রদীপ ইত্যাদি তুলিতে তুলিতে বলিল, তারপর কত পূজাই ত আছে—দুর্গাপূজা, লক্ষ্মীপূজা, কালীপূজা, কার্তিকপূজা, ভাইফোঁটা’—
‘কিন্তু তা ত কত পরের কথা। শাওন মাস, ভাদর মাস, তারপরে ত আইব বড় ঠাকরাইন পূজা।’
কিন্তু দুই মাস ত মোটে—তেমন কি বেশি। ক্ষেতপাথারের জল কমিতে লাগিবে পনর দিন। তিতাসের জল কমিয়া তার পাড়ে পাড়ে পথ পড়িতে লাগিবে আরও পনর দিন। তখন বর্ষা শেষ হইয়া যাইবে। গাঙ-বিলের দিকে চাও, দেখিবে পরিষ্কার—দিনের দিকে চাও, পরিষ্কার। কিন্তু ঘর বাড়ির দিকে চাও– পরিষ্কার দেখ কি! দেখ না। পরিস্কার না করিলে পরিষ্কার দেখিবে কি করিয়া! চারিদিকে পুজা-পূজা ভাব। লাগিয়া যাও ঘরবাড়ি পরিষ্কার করার কাজে! কিন্তু কি ঘরবাড়ি পরিষ্কার করিবে তুমি? ভাঙ্গা ঘরবাড়ি? না, পুরুষ আছে কোন দিনের তরে? বর্ষাকালে একটানা বৃষ্টির জলে ধা’র ভাঙ্গিয়াছে, পিড়া ভাঙ্গিয়াছে, কি খুব সুন্দর দেখাইয়াছিল না সেদিন। তিন চারি জনে ধরিয়া তাহাকে চুল আঁচড়ানো, তেল-সিন্দুর পরানো, চন্দনতিলক লাগানো প্রভৃতি প্রসাধন কর্ম করিয়াছিল। একটা কলার ডিগা সে মানুষটার গালে বুলাইয়াছিল—সে তখন ছোট বালিকা মাত্র, বুকটা তার ভয়ে তুরু হুরু করিতেছিল। চাহিতে পারিতেছিল না লোকটার চোখের দিকে, অথচ চারি দিক হইতে লোকজনে চীৎকার করিয়া কহিতেছিল, চাও, চাও, চাও, দেখ, এই সময়ে ভাল করিয়া চাহিয়া দেখ—চারিজনে পি’ড়ির চারিটা কোণা ধরিয়া তাহাকে উঁচু করিয়া তুলিয়াছিল –এই সময়ে সে একটুখানি চাহিয়া দেখিয়াছিল—মাত্র একটুখানি, আর চাহিতে পারে নাই, অমনি চোখ নত করিয়াছিল। সেদিন মোটে চাওয়া যায় নাই, তার দিকে। কিন্তু আজ! কতবার চাওয়া যায়, কোন কষ্ট হয় না, কিন্তু সেইদিনের একটুখানি চাওয়ার মত তেমন আর লাগে কি; সে চাওয়ার মধ্যে যে স্বাদ ছিল, সে-স্বাদ কোথায় গেল!
ভাবিতে ভাবিতে উদয়তারা একসময় ফিক করিয়া হাসিয়া ফেলিল।
কনেবে চুল বাঁধিতে বাঁধিতে বলিল, ‘কি লা উদি, হাসলি যে?’
‘হাসি পাইল, হাসলাম। আচ্ছা, আমি ত তোর বর হইলাম, আমার মুখের দিকে চাইতে তোর লাজ লাগে নাই?’
‘শুন কথা। সত্যের বিয়ার বরেরেই লাজ করলাম না, তুই ত আমার জালা বিয়ার বর।’
‘সত্যের বিয়ার বরেরে তোর লাজ করে নাই? ওম কেনে, লাজ করল না কেনে?’
‘সেই-কথা এক পরস্তাবের মত! বর আমার বাপের কাছে মুনী খাট্ত। মা বাপ কেউ আছিল না তার। সুতা পাকাইত আর জাল বুনত। আমার বয়স আট বছর, আর তার বার বছর। সেইন সময়ে বাপে দিল বিয়া। এক সঙ্গে খেলাইছি বেড়াইছি, মাছ ধরছি মাছ কাট্ছি, আমি নি ডরামু তারে!’
‘ও মা! সেই কথা ক।’
‘একটা মজার কথা কই, শুন। বিয়ার কালে আমি ত ফুল ছিট্লাম তার মাথায়, সে যত ছিট্তে লাগল, কোন ফুলই আমার মাথায় পড়ল না। ডাইনে-বায়ে কাঁধে-পিঠে পড়তে লাগল, কিন্তুক মাথায় পড়ল না। কারোরে আমি ছাইড়া কথা কই না, আর সে ত আমরার বাড়িরই মানুষ —খুব রাগ হইল আমার। তেজ কইরা কইলাম, ভাল কইরা ছিট্তে পার না? মাথায় পড়ে না কেনে ফুল? ডাইনে-বায়ে পড়ে কেনে? কাজের ভাস্সি নাই, খাওনের গোঁসাই!’
‘বরেরে তুই এমুন গালি পাড়লি? তোর মুখ ত কম খরোধরো আছিল না? বর কি করল তখন?’
‘এক মুঠ ফুল রাগ কইরা আমার চোখেমুখে ছুঁইড়া মারল’—
‘খুব আস্পর্দা ত! তুই সইয়া গেলি?’
‘না।’
‘কি করলি তুই?’
‘এক ভেংচি দিলাম।’
‘তুই আমারে তেমুন কইরা একটা ভেংচি দে না!’
‘ধেৎ। তুই কি আমার সত্যের বর? তুই ত মাইয়া মানুষ!’
‘তবে আমি তোরে দেই।’
‘ধেৎ, আমরা কি আর অখন ছোট রইছি?’
কি এমুন বড় হইয়া গেছি। বারোবছর বয়সে বিয়া হইছিল, তারপর ন’বছর –মোটে ত একুশ বছর। এর মধ্যেই বড় হইয়া গেলাম?’
বড় হইয়া গেলি কি গেলি না, বুঝতি যদি কোলে দুই একটা ছাও-বাচ্ছা থাক্ত। জীবনে একটারও গু-মুত কাচাইলি না, তোর মন কাঁচা শরীল কাঁচা, তাই মনে হয় বড় হইলি না; যদি পুলাপান হইত, বয়সও মালুম হইত।
‘সেই কথা ক।’
তারপর চারিদিক আঁধার হইয়া আসিল। শাদা শাদা অজস্র সাপলা ফুলে শোভিত, সর্পাসনা মনসা মূর্তিটি অনন্তর চোখের সামনে ঝাপসা হইয়া আসিল, অন্যান্য পূজাবাড়িগুলিরও গান ধুমধাম ক্রমে অস্পষ্ট হইয়া একসময় থামিয়া গেল।
শ্রাবণ মাসের শেষ তারিখটিতে মালোদের ঘরে ঘরে এই মনসা পূজা হয়। অন্যান্য পুজার চাইতে এই পূজার খরচ কম, আনন্দ বেশি। মালোর ছেলেরা ডিঙ্গি নৌকায় চড়িয়া জলভরা বিলে লগি ঠেলিয়া আলোড়ন তোলে। সেখানে পাতাল ফুঁড়িয়া ভাসিয়া উঠে সাপের মত লিক্লিকে সাপলা। শাদ শাদা ফুল ফুটিয়া বিল জুড়িয়া ছত্রাইয়া থাকে। যতদূর চোখ যায় কেবল ফুল আর ফুল—শাদা মাণিকের মেলা যেন। ঘাড়ে ধরিয়া টান দিলে কোন এক জায়গায় সাপলাটা ছিঁড়িয়া যায়, তারপর টানিয়া তোল—খালি টানো আর টানো, শেষ হইবে না শীঘ্র। এইভাবে তারা এক বোঝাই সাপলা তুলিয়া আনে। মাছের ঘুরিয়া ফিরিয়া দেখে —মালোর ছেলের কেমন সাপলা তুলিতেছে। সাপলা তোলার ফাঁকে ফাঁকে মালোর ছেলেরাও চাহিয়া দেখে। জল শুখাইবে, বিলে বাধ পড়িবে, তখন বেঘোরে প্রাণ হারাইতে হইবে—এসব জানিয়া শুনিয়াও বোকা মাছেরা, কিসের মায়ায় যেন বিলের নিষ্কম্প জলে তিষ্ঠাইয়া আছে। তিতাসের স্রোতাল জলে নামিয়। পড়িলে, অত শীঘ্র ধরা পড়িবার ভয় থাকিবে না, ধরা যদি পড়েও, পড়িবে মালোদের জালে; সেখান থেকে লাফাইয়াও পালানো যায়। কিন্তু নমশূদ্রের বাঁধে পড়িলে হাজারবার লাফাইলেও নিস্তার নাই।
মনসার পুষ্পসজ্জা শেষ হইলে পুরোহিত আসে! মালোদের পুরোহিত ডুমুরের ফুলের মত দুর্লভ। একজন পুরোহিতকে দশবারো গাঁয়ে এক একদিনে মনসা পূজা করিয়া বেড়াইতে হয়। গলায় একখানা চাঁদর ঝুলাইয়া ও হাতে একখানা পুরোহিত দর্পণ লইয়া আসিয়া অমনি তাড়া দেয়—শীঘ্গির। তারপর বারকয়েক নম নম করিয়া এক এক বাড়ির পূজা শেষ করে, দক্ষিণা আদায় করে। এবং আধঘণ্টার মধ্যে সারা গায়ের পূজা শেষ করিয়া তেমনি ব্যস্ততার সহিত কোন মালোকে ডাকিয়া বলে, ‘অ বিন্দাবন, তোর নাওখান্ দিয়া আমারে ভাটি-সাদকপুরে লইয়া যা।’
শ্রাবণের শেষ দিন পর্যন্ত পদ্মাপুরাণ পড়া হয়, কিন্তু পুঁথি সমাপ্ত করা হয় না। লখিন্দরের পুনর্মিলন ও মনসা-বন্দনা বলিয়া শেষ দুইটি পরিচ্ছেদ রাখিয়া দেওয়া হয় এবং তাহা পড়া হয় মনসা পূজার পরের দিন সকালে, সেদিন মালোর জাল বাহিতে যায় না। খুব করিয়া পদ্মাপুরাণ গায় আর খোল করতাল বাজায়।
শেষ দিন বনমালীর গলাটা ভাঙ্গিয়া গেল। এক হাতে গলি চাপিয়া ধরিয়া, চোখ দুইটা বড় করিয়া, গলায় যথাসম্ভব জোর দিয়া শেষ দিশা তুলিল, ‘বিউনি হাতে লৈয়া বিপুলায়ে বলে, কে নিবি বিউনি লক্ষটেকার মূলে।’ কিন্তু স্বরে আর জোর বাঁধিল না; ভাঙ্গা বাঁশের বাঁশীর মত বেসুরে বাজিল। অন্যান্য যারা দোহার ধরিবে তাদের গলা অনেকের আগেই ভঙ্গিয়া গিয়াছে তারাও চেষ্টা করিয়া দেখিল স্বর বাহির হয় না। তারা পদ্মাপুরাণ পড়া শেষ করিল। বেহুলা বিজনী বেচিতে আসিয়াছে, জায়েদের নিকটে গোপনে ডোমনীর বেশ ধরিয়া। শেষে পরিচয় হইল এবং চাঁদসদাগরের পরাজয় হইল; সে মনসা পূজা করিয়া ঘরে ঘরে মনসার পূজা খাওয়ার পথ করিয়া দিল।
বন্দন শেষ করিয়া পুঁথিখানা বাঁধা হইতেছে। এক বৎসরের জন্য উহাকে রাখিয়া দেওয়া হইবে। আবার শ্রাবণ আসিলে খোলা হইবে। একটা লোক ঝড়ি হইতে বাতাস ও খই বিতরণ করিতেছে। লোকে এক একজন করিয়া খষ্ট বাতাসা লইয়া প্রস্থান করিতেছে। যাহাদের তামাকের পিপাসা আছে তাহারা দেরি করিতেছে। এদিকে পূজার ঘরের অবস্থা দেখিলে কান্না পায়। আগের দিন পূজা হইয়াছে। তখন দীপ জ্বলিয়াছিল, ধূপ জ্বলিয়াছিল; দশ বারোটি তেপায়ায় নৈবেদ্য সাজাইয়া রাখা হইয়াছিল। সদ্য রঙদেওয়া মনসামূর্তি যেন জীবন্ত হইয়া হাসিতেছিল; আর তার সাপ দুইটা বুঝিব। গলা বাড়াইয়া আসিয়া অনন্তকে ছোবলই দিয়া বসে—এমনি চকচকে ঝকঝকে ছিল। আজ তাদের রঙ অন্তরকম। অনিপুণ কারিগরের সস্তায় তৈয়ারী একদিনের জৌলুস, রঙচটা হইয় মান হইয়া গিয়াছে। কোন অসাবধান পূজার্থীর কাপড়ের খুটে লাগিয়া একটা সাপের জিব ও আরেকটা সাপের ল্যাজ ভাঙ্গিয়৷ গিয়াছে। এখন তাহাদের দিকে চাহিলে অনুকম্প জাগে। রাশি রাশি সাপলা ছিল মূর্তির দুই পাশে। ছেলেরা আনিয়া এখন খোসা ছাড়াইয়া খাইতেছে আর অটুট খোসাটার মধ্যে ফু দিয়া বোতল বানাইতেছে। কেউ কেউ সাপলা দিয়া মালা বানাইয়া গলায় পরিতেছে। অনন্ত এতক্ষণ চুপ করিয়া বসিয়াছিল। একটি ছোট মেয়ে তেমনি কয়েক ছড়া মালা বানাইয়া কাহার গলায় পরাইবে ভাবিতেছিল। অনন্তর দিকে চোখ পড়াতে তাহারই গলায় পরাইয়া দিল। অনন্ত চট করিয়া খুলিয়া আবার মেয়েটির খোঁপায় জড়াইয়া থুইল। চক্ষুর নিমিষে এই কাণ্ডটি ঘটিয়া গেল। মেয়েটির দিকে চাহিলে প্রথমেই চোখ পড়িবে এই খোঁপার উপর। ছোট মেয়ের তুলনায় অনেক বড় সে-খোঁপা। সাত মাথার চুল এক মাথায় করিয়া যেন মা বাঁধিয়া দিয়াছে।
খুশি হইয়া মেয়েটি জিজ্ঞাসা করিল, ‘কোনদিন ত দেখি নাই তোমারে; তোমার নাম কি?’
‘অনন্ত। আমার নাম অনন্ত।’
‘দূর, তা কেমনে হয়! ঠিক কইরা কও, তোমার নাম কি?’
‘ঠিক কথাই কই। আমার নাম অনন্ত।’
‘তবে আমার মত তোমার খোঁপা নাই কেনে; আমার মত তুমি এইরকম কইরা শাডি পর না কেনে? তোমার নাক বিন্ধা নাই কেনে, কান বিন্ধাইয়া কাঠি দেয় নাই কেনে; গোধানি কই, হাতের চুড়ি কই তোমার?’
‘আরে, আমি যে পুরুষ। তুমি ত মাইয়া।’
‘তবে তোমার নাম অনন্ত না?’
‘না! কেনে?’
‘অনন্ত যে আমার নাম। তোমার এই নাম হইতে পারে না।’
‘পারে না? ওমা, কেনে পারে না?’
‘তুমি পুরুষ। আমার নাম কি তোমার নাম হইতে পারে?’
‘হইতে পারে না যদি, তবে এই নাম আমার রাখল কেনে। আমার মা নিজে এই নাম রাখছে। মাসীও জানে।’
‘কেবল মাসী জানে? আর কেউ না?’
‘যে-বাড়িতে আছি, তারা দুই ভাই-ভইনেও জানে।’
‘এই! আর কেউ না! ওমা, শুন’ তবে। আমার নাম রাখছে গণক ঠাকুরে। জানে আমার মায় বাবায়, সাত কাকায়, আর পাঁচ কাকীয়ে; আব ছয় দাদা আর তিন দিদিয়ে, চার মাসী দুই পিসিয়ে।’
‘ও বাব্বা৷ ‘
‘আরো কত লোকে যে জানে। আর কত আদর যে করে। কেউ মারে না আমারে।’
‘আমারেও কেউ মারে না। এক বুড়ি মারত, মাসী তারে আটকাইত।’
‘মাসী আটকাইত, ত মা আটকাইত না?’
‘আমার মা নাই।’
মেয়েটি এইবার বিগলিত হইয়া উঠিল, ‘নাই! হায়গো কপাল! মানুষে কয়, মা নাই যার ছাড় কপাল তার।’