- হরিদাসের গুপ্তকথা
- প্রথম পরিচ্ছেদ : কিসের মন্ত্রণা?
- দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ : এরা কে?
- তৃতীয় পরিচ্ছেদ : কূপে-কমল!
- চতুর্থ পরিচ্ছেদ : আজব চিঠি!
- পঞ্চম পরিচ্ছেদ : বাবু দেবীপ্রসাদ।
- ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ : ভয়ানক ব্যাপার!
- সপ্তম পরিচ্ছেদ : বিষম সন্দেহ।
- অষ্টম পরিচ্ছেদ : আলেকসাই ফকির।
- নবম পরিচ্ছেদ : পীরের দরগা।
- দশম পরিচ্ছেদ : মোহিত বাবু।
- একাদশ পরিচ্ছেদ : ভূঁড়ো-কর্ত্তা।
- দ্বাদশ পরিচ্ছেদ : গুণের খানসামা।
- ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ : মাষ্টার মহাশয়।
- চতুর্দ্দশ পরিচ্ছেদ : গোমিস্ সাহেব।
- পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ : আখড়া।
- ষোড়শ পরিচ্ছেদ : গ্রেপ্তার।
- সপ্তদশ পরিচ্ছেদ : দারোগা সাহেব।
- অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ : হাজত বা হাবুজখানা।
- ঊনবিংশ পরিচ্ছেদ : কূপে-কমল।
- বিংশ পরিচ্ছেদ : হাজতে দ্বিতীয় রাত্রিবাস।
- একবিংশ পরিচ্ছেদ : আমার বিচার।
- দ্বাবিংশ পরিচ্ছেদ : বিচারালয়।
- ত্রয়োবিংশ পরিচ্ছেদ : এ কথা কি সত্য?
- চতুর্ব্বিংশ পরিচ্ছেদ : ব্রহ্মচারী মহাশয়।
- পঞ্চবিংশ পরিচ্ছেদ : গুপ্তকথা।
- ষড়বিংশ পরিচ্ছেদ : পাপের পরিণাম।
- সপ্তবিংশ পরিচ্ছেদ : নবাব বাহাদুর।
- অষ্টবিংশ পরিচ্ছেদ : নীলমণি বসাক।
- ঊনত্রিংশ পরিচ্ছেদ : উদ্যোগপৰ্ব্ব।
- ত্রিংশ পরিচ্ছেদ : আশা মিটিল।
- একত্রিংশ পরিচ্ছেদ : দীক্ষা।
- দ্বাত্রিংশ পরিচ্ছেদ : লক্ষ্মীনারায়ণ বাবু।
- উপসংহার
সপ্তম পরিচ্ছেদ
বিষম সন্দেহ।
আমি আমার শয্যার উপর শয়ন করিলাম বটে, কিন্তু কিছুতেই আমার সুনিদ্রা হইল না। এই সমস্ত ঘোর কপট ছদ্মবেশী পাপাত্মাদের কার্য্যকলাপ আমার স্মৃতিপথে উদয় হওয়ায় ব্যাত্যাবিক্ষোভিত রত্নাকরের ন্যায় আমার অন্তর নিতান্ত আকুল হ’য়ে উঠল। আমি আঁচে অনেকটা বুঝিতে পারিলাম যে, এই ধনবান্ যুবককে ঠকাইয়া টাকা লইবার জন্য এই উদ্যোগ হ’য়েছে, খুব বেশী রকম টাকা পাইবার অভিপ্রায়ে ঠাকুর সাহেবকে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র সাজালেন। এই যুবককে প্রবঞ্চনা জালে জড়িত করবার আশায় বুধবারে বাবু ও বক্সীতে এই পরামর্শ হ’য়েছিল, এই যুবক যদি সচ্চরিত্র ও ন্যায়পরায়ণ হ’তেন, তাহ’লে কখনই এ সব ভয়ঙ্কর লোকের সহিত সংস্রব রাখতেন না, এরূপ জঘন্য স্থানে এসে জুয়া খেলতে স্বীকৃত হ’তেন না, নিশ্চয় ইহার অন্তর কলুষিত হ’য়েছে, সেই জন্য লোভে আক্রান্ত হ’য়ে এরূপ অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্জ্জন করতে এসেছিলেন, বক্সী যে তাঁকে খুব প্রলোভন দেখিয়েছিলেন, তাহাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নাই। বোধ হয় ব’লেছিলেন যে, একজন পাড়াগেঁয়ে রাজা এসেছে, কিছু মোহর সঙ্গে করিয়া যদি যাওয়া যায়, তাহ’লে অনেক মোহর জিতে আনতে পারা যাবে, এই হিতাহিত জ্ঞানশূন্য লোভী যুবক সেই কথা সত্য জ্ঞান করিয়া এখানে এসেছিলেন, তারপর হিতে বিপরীত ঘটলো, একটা মানুষ খুন হ’লো; ওঃ পাপিষ্ঠেরা না পারে এমন কোন অকাৰ্য্য জগতে নাই। আমার মনে এই চিন্তাই প্রবল হ’লো, কাজেই সে রাত্রে আর আমার সুনিদ্ৰা হ’লো না, আমি সম্পুর্ণ জাগ্রত অবস্থায় নিশি অতিবাহিত করিলাম।
ক্রমে রজনী প্রভাত হ’লো, পূর্ব্বদিক আরক্তিম হ’য়ে উঠলো; শীতল সমীরণ মৃদু পদ-সঞ্চারে কুসুমের পরিমল অপহরণের জন্য অগ্রসর হ’লো, কুসুম কুল হাস্য মুখে মস্তক সঞ্চালনে না না বলতে লাগলো; পক্ষীগণ পবনের এই তস্কর-বৃত্তি দর্শনে ধিক্কার দিতে দিতে স্ব স্ব নীড় পরিত্যাগ করল। সংসারে সুখ ও সৌভাগ্যের অনিত্যতা দেখবার জন্য। প্রফুল্লমুখে কুমুদিনী পুনরায় মুদিতা হ’লো ও পতি সোহাগিনী পদ্মিনী সতী তাহার স্থান অধিকার ক’রে হাস্যমুখে সরোবরের শোভা বৃদ্ধি করতে লাগলেন।
মানবের মধুর বাল্যকালের ন্যায় দিবার এই শৈশব সময় অতীব মনোহর ও নয়ন-রঞ্জক। এই মধুর সময়ে ভক্তিপরায়ণ ভক্তদের পবিত্র হৃদয় সৰ্ব্ব-নিয়ন্তা ঈশ্বরের প্রেমরসে আপ্লুত হয়, চিররোগীর অসহনীয় যন্ত্রণা ক্ষণেকের জন্য প্রশমিত হ’য়ে যায় ও ঈশ্বরদ্বেষী স্বেচ্ছাচারী পাপাত্মার নীরস হৃদয়েও ঈশ্বর ভক্তির ছায়া নিপতিত হয়ে থাকে।
আমি প্রভাতে শয্যা ত্যাগ করিয়া বাহিরে আসিলে, গিন্নীর সহিত সাক্ষাৎ হ’লো। আমি বালসুলভ চাপল্যের বশীভূত হয়ে গিন্নীকে গত রাত্রের সমস্ত ঘটনা আমূল বর্ণনা করিলাম। আমার কথা শেষ হ’লে ক্ষণেকের জন্য বরিষণহীন মেঘের ন্যায় গিন্নীর মুখখানা গম্ভীর মূর্ত্তি ধারণ করিল এবং পরক্ষণেই সেইরূপ কাষ্ঠহাসি হাসিয়া কহিল, হাঁ, আমি কর্ত্তার কাছে শুনেছি; কি হয়েছে তা জানো? সেই লোকটার মৃগী রোগ ছিল, সে যখন বাড়ী যাওয়ার জন্য উঠিয়া দাঁড়ায় সেই সময় তার রোগ উপস্থিত হ’য়েছিল, কাজেই মেজের উপর পড়ে গিয়ে মাথা ফেটে যায়, তাতেই লোকটা মারা গেছে।
গিন্নীর এই কৈফিয়তে আমি আর হাসি রাখিতে পারিলাম না কারণ আমি পিস্তলের আওয়াজ শুনেছিলাম, স্বচক্ষে রহিম মোল্লার রক্তাক্ত শব দেখেছি, তবু কিনা গিন্নী আমাকে খোকা বিবেচনা ক’রে কেমন জলের মতন বুঝিয়ে দিলেন। আমি গিন্নীর এই কথায় হাসিয়া ফেলিলাম বটে, কিন্তু উত্তর করিলাম না; মনে মনে ভাবতে লাগলাম যে, কর্ত্তার উপযুক্ত গিন্নী না হ’লে কখনই ইহাদের প্রণয় হ’তো না।
তখন তো আমি জানি না যে, কর্ম্ম সহিত প্রণয়ের নিত্য সম্বন্ধ না থাকলে, অন্তর ধর্ম্মের আলোকে সম্যক্ প্রকারে আলোকিত না হ’লে, কখনই তাতে অসার সংসারের সার বস্তু প্রণয় সঞ্চারিত হ’তে পারে না। স্বার্থপর কপট ভণ্ড পাপাত্মারা যথার্থ প্রণয়ের মূল্য জানে না, হৃদয়ের দ্বার উন্মুক্ত করতে কুণ্ঠিত হয়; যাহারা আত্মসুখ অন্বেষণে সতত তৎপর, তাহারা জঘন্য পশুবৃত্তি চরিতার্থ করাকে প্রণয় শব্দে অভিহিত করে, সুতরাং জন্মান্ধ ব্যক্তি যেমন প্রকৃতি সুন্দরীর অপার সুষমা সন্দর্শনে বঞ্চিত হয়; তেনি আত্মসুখী স্বার্থপর পাপাত্মারা অমূল্য প্রণয়ের মূল্য বুঝিতে সমর্থ নহে।
আমি গিন্নীর নিকট দাঁড়াইয়া আছি, এমন সময় খোদ কৰ্ত্তা সেখানে এসে উপস্থিত হ’লেন। আমি দেখলাম যে কর্ত্তার মুখমণ্ডল যেন প্ৰসন্ন ও শারদীয়া পূর্ণিমা রজনীর ন্যায় বিমল, তাহার অন্তরে কোনরূপ চিন্তা নাই। গত রাত্রে তাঁহার বাটীতে যে কোন দুর্ঘটনা ঘটেছিল, তাহা তাঁহার মুখের ভাব দেখে কিছুতেই বোধ হয় না। কর্ত্তা গিন্নীর নিকটে আসিলে আমি সেস্থান হতে প্রস্থান করিলাম; আমি পুস্তক লইয়া বাহির বাটীতে আসিতেছি, হঠাৎ পথিমধ্যে নির্ম্মলার সঙ্গে সাক্ষাৎ হইল। আমি দেখলাম যে বিভূতি আচ্ছাদিত অগ্নির ন্যায় সেই স্বর্গীয় লাবণ্য অনেকটা হীনপ্রভা হ’য়েছে, গ্রহণের চাঁদের ন্যায় মলিন মুখমণ্ডলে বিষাদের লক্ষণ সকল স্পষ্ট পরিলক্ষিত হ’চ্ছে, কুরঙ্গনিন্দিত শোভার আস্পদ সেই নয়নযুগল অনবরত অশ্রু পতনে তরুণ তপন সম আরক্তিম হ’য়ে উঠছে; মানসিক কষ্টের প্রধান লক্ষণ উষ্ণ দীর্ঘ নিশ্বাসে সেই সুকোমল বক্ষঃস্থল কম্পিত কচ্ছে।
আমি নিৰ্ম্মলার বাহ্যিক লক্ষণ দেখে স্থির করলাম যে, কুসুমে-কীটের ন্যায় তাহার সরল মানস-ভূমিতে কোন দুশ্চিন্তা প্রবেশ করেছে, প্রশান্ত অন্তর-সাগরে প্রবল ঝটিকা নিরন্তর প্রবাহিত হচ্ছে।
আমি নিৰ্ম্মলার চিত্ত-বিকারের প্রকৃত কারণ জানিবার জন্য নিতান্ত কৌতুহলাক্রান্ত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলাম, “নির্ম্মলা! আজ তোমার মুখখানি এত শুকনো শুকনো দেখছি কেন? কেঁদে কেঁদে যেন চক্ষু দু’টি লাল ক’রেছ, ইহার কারণ কি? মা কি তোমাকে বকেছেন?” আমার কথা শুনে কর-পরশনে লজ্জাবতী লতার ন্যায় নিৰ্ম্মলা অবনতমুখী হইল, তরুণ-তপন সম তাহার গণ্ডস্থল আরক্তিম হইয়া উঠিল; প্রকাশ্যে আমার প্রশ্নের কোন উত্তর দিতে পারিল না। আমি অনেকটা আবেগ ভরে কহিলাম, “নিৰ্ম্মলা! তুমি আমার মনের ভাব, অন্তরের ধারণা হয়তো জান না, সেই জন্য আমার নিকট হৃদয়ের দ্বার উন্মুক্ত করতে কুণ্ঠিত হ’চ্ছ; তুমি যদি আমাকে তোমার ব্যথার ব্যথি ব’লে জ্ঞান করতে, তাহ’লে কখনই আমার নিকট তোমার মনোভাব গোপন করতে না।
আমার এই কথা শুনে নিৰ্ম্মলা নিতান্ত লজ্জিতা হ’ল, ভ্রমর-ভয়ে কুসুম-গুচ্ছের ন্যায় মুখখানি তার অবনত হ’য়ে পড়ল এবং অতি মৃদুস্বরে কলি, “হরিদাস! তোমার নিকট আমার কোন কথা গোপন করবার আবশ্যক নাই, কিন্তু এখন নয়; দুপুর বেলায় মা যখন ঘুমাবেন, সেই সময় আমি এসে তোমার নিকট আমার প্রাণের কথা ও মনের ভাব প্রকাশ ক’রে বলব।”
নিৰ্ম্মলা এই কথা বলে আর উত্তরের জন্য অপেক্ষা না ক’রে সে স্থান হ’তে প্রস্থান করিল, কাজেই তখনকার মত আমাকে নিরস্ত হ’তে হ’লো।
ক্ষণপ্রভার প্রভা লয় হ’লে পথিকের পক্ষে যেমন দ্বিগুণ অন্ধকার বুদ্ধি হয়, তেমনি নির্ম্মলা প্রস্থান করিলে আমার চক্ষে এই বিশ্বসংসার যেন ঘোর অন্ধকারে নিমগ্ন হ’লো। আমি বৈঠকখানার বারাণ্ডায় পুস্তক খুলিয়া বসিলাম বটে, কিন্তু পাঠে বিন্দুমাত্র মনঃসংযোগ করিতে পারিলাম না; নানাপ্রকার চিন্তা আসিয়া আমার অন্তরার্ণবকে উদ্বেলিত করিয়া তুলিল। আমি ভাবিতে লাগিলাম যে, কৰ্ত্তা ও গিন্নী নিৰ্ম্মলাকে প্রাণের অপেক্ষা ভালবাসেন, নিজের দেহের ন্যায় যত্ন করেন, এমন কি একমাত্র নিৰ্ম্মলাই তাঁদের সংসারাকাশের পূর্ণচন্দ্র, আনন্দ সাগরের উত্তাল তরঙ্গ। তাহ’লে শুভ্র বসনখণ্ডে মসী বিন্দুর ন্যায় সন্তোষের নিত্য নিকেতন সেই সরলার সরল মানসে কিসের বিপ্লব উপস্থিত হ’য়েছে? প্রভাতের শশীসম রবি-তাপে ম্রিয়মাণ কিশলয় সন্নিভ সেই বিধু মুখখানি যেন মলিন হয়ে পড়েছে। আহা! জলভারাক্রান্ত মেঘের ন্যায় শোভার আপদ আকর্ণ-বিস্তৃত সচঞ্চল চক্ষু দু’টি ছল্ ছল্ করছে; বিনা বাতাসে যখন নদীতে তরঙ্গ ওঠে না, তখন নিৰ্ম্মলার এই আকস্মিক চিত্তবিকার কখনই নিরর্থক নহে, নিশ্চয় ইহার মূলে কোন গুপ্ত রহস্য আছে। আমার একান্ত বিশ্বাস যে, নিৰ্ম্মলা আমার নিকট অকপটে তাহার প্রাণের কথা প্রকাশ ক’রে বলবে, কোন বিষয় গোপন করবে না; কিন্তু কোথা হ’তে এ বিশ্বাস টুকু যে এলো, কেন যে আমার অন্তরে বদ্ধমূল হয়ে বসল, তা আমি নিজে ঠিক জানি না; তবে অনুমানে বোধ হয়, আমার দুটো চোখ ও পোড়া মনটা কতক কতক জানে; তবে তারা স্পষ্ট ক’রে আমাকে কোন কথা বলে না, কাজেই আমি ও কথায় কোন সদুত্তর দিতে পারলেম না।
আমি নিজের কথা একেবারে ভুলে গেলাম, সকল প্রকার পার্থিব চিন্তা অন্তর হ’তে অন্তরিত হ’লো, কেবল নির্ম্মলার মনের কথা শুনিবার সাধ নিতান্ত প্রবল হ’য়ে উঠলো; কাজেই আমি নিতান্ত অস্থির অবস্থায় অবস্থান করিতে লাগিলাম।
আহারের পর কর্ত্তা কাপড় চোপড় পরিয়া একখানি পাল্কীতে চড়িয়া কোথায় চলিয়া গেলেন। তিনি বাটীতে সাধারণ বাঙ্গালীদের ন্যায় ধুতি পরিধান করিতেন, কিন্তু বাহিরে যাইবার সময় সম্পূর্ণরূপে ভোল ফিরাইতেন। তখন একটি ঢিলে পা-জামা ধুতির স্থান অধিকার করিত, গায়ে একটি চাপকান ও তার উপর কার্পা কিম্বা চোগা শোভা পাইত, মাথায় প্রায় আধ থান কাপড়ের একটি বিরাট পাগড়ি বাঁধিতেন এবং এক জোড়া জরীর লপেটা জুতা শ্রীপদ আচ্ছাদন করিয়া রাখিত।
কর্ত্তা বাহিরে যাবার সময় বৈঠকখানা ঘরে দুটো তালা বন্ধ করিলেন। আমি তাহার সেই অতিরিক্ত সাবধান হইবার কারণ বুঝিতে পারিলাম, কিন্তু কাহাকেও কিছু না বলিয়া কেবল মনে মনে হাসিলাম এবং কতক্ষণে নিৰ্ম্মলার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় তাহাই এক মনে ভাবিতে লাগিলাম।
ক্রমে মধ্যাহ্নকাল উপস্থিত হ’লো, দেব দিবাকর মধ্য-গগণে উদিত হ’য়ে কৃশাণুসম কিরণরাশি ধরাতলে বরিষণ করতে লাগলেন। প্রভাতের সেই নয়ন-রঞ্জন রম্যমূর্ত্তি এখন সম্পূর্ণরূপে তিরোহিত হ’লো; মানবের মধুর বাল্যকালের পর প্রচণ্ড যৌবনের উদয়ে যেমন প্রকৃতি সম্যক্রূপে পরিবর্ত্তিত হয়, অন্তরে বাসনার বহ্নি রাত্রদিন প্রজ্জ্বলিত থাকে, তেমনি এই যৌবনকালে দিনমণির সেই মধুরতা স্থানে ভীষণতা বিরাজ করছে ও নিজের সেই অপরূপ রূপ যেন প্রজ্জ্বলিত অগ্নিকুণ্ডের ন্যায় পরিদৃশ্যমান হ’চ্ছে। এ সময় পিপাসার এত আতিশয্য যে স্বয়ং সহস্রকর সহস্র করে সরসীর সলিল-রাশি শোষণ করেন, জলের যে জীবন নাম, তাহা এই সময়েই সার্থক হ’য়ে থাকে। এখন কোলাহল-পূর্ণ জগৎ যেন জনশূন্য প্রান্তরের ন্যায় নিস্তব্ধ, প্রকৃতি দেবী স্থির, কেবল ক্বচিৎ তরুপর কোন পক্ষীর বিকট চীৎকার ও এক প্রকার অস্ফুট ঝিল্লী-রবে কথঞ্চিৎ তাহার গাম্ভীৰ্য্য ভঙ্গ হ’চ্ছে; অসাধুর সংস্রবে যেমন নিতান্ত সাধু ব্যক্তিও কলুষিত হয়, তেমনি রৌদ্রের সহবাসে জগজ্জীবন পবনও এক্ষণে একান্ত দুর্ব্বিসহ হ’য়েছে ও তাহার স্বভাবসিদ্ধ শৈত্যগুণ এখন তিরোহিত হ’য়েছে। এ সময় প্রসূতি নয়ন-পুতুলি সদৃশ স্নেহের আধার পুত্ত্রকে ক্রোড়ে লইতে অনিচ্ছুক, শিশু শান্তি-নিকেতন তুল্য মাতৃ অঙ্কারোহণে বীতস্পৃহ।
নূতন অস্ত্রের ধার যেমন তীক্ষ্ণ হয়, তেমনি এই নূতন চিন্তা আমার পক্ষে নিতান্ত মর্মান্তিক হ’য়ে উঠেছে; কাজেই ব্যাহ্যিক তাপ অপেক্ষা আমার অন্তরের তাপ সমধিক প্রবল, সেইজন্য আমি ততদূর গ্রীষ্মানুভব করতে পারলাম না; কতক্ষণে যে নিৰ্ম্মলার সহিত সাক্ষাৎ হবে, তাহাই এক মনে ভাবতে লাগলাম।
প্রথমতঃ আহারাদির পর নির্ম্মলা গিন্নির ঘরে গিয়া শয়ন করিল এবং বোধ হয় গিন্নীর নিদ্রার অপেক্ষায় রহিল।
অল্পক্ষণ পরে নির্ম্মলার ভূষণ ধ্বনি শ্রুত হওয়া গেল, আমি যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলুম, বিপুল আনন্দে আমার সর্ব্বশরীর কণ্টকিত হ’য়ে উঠলো, বুক গুরগুর্ করতে লাগলো এবং সহসা স্বেদজলে কপোলদেশ আপ্লুত হ’য়ে উঠলো। এমন সময় আমার হৃদয়ানন্দ-দায়িনী নিৰ্ম্মলা সে স্থানে এসে উপস্থিত হ’লো। আমি তখন শয্যা হ’তে উঠিয়া বসিলাম এবং নিৰ্ম্মলাকে বসিতে বলিলাম, কিন্তু নিৰ্ম্মলা, শয্যায় না বসিয়া মেজের উপর নিরাসনে উপবেশন করিল। আমিই প্রথমে কহিলাম, “আমাকে যা বলবে বলেছিলে, এইবার বল।” অবনতমুখী নিৰ্ম্মলা লজ্জা জড়িত-স্বরে খুব আস্তে আস্তে উত্তর করিল, “হরি দাদা! কি বলব, বলবার কথা নয়, আর হা তোমার শোনবার আবশ্যক কি—পরের কথা শুনলে কি হবে?”
আমি বলিলাম, “তুমি নেহাৎ পরের মতন কথাগুলো বললে, কিন্তু আমি যদি সে রকম পর ভাবতাম, তাহ’লে কখনই এরূপ দুরাশা আমার অন্তরে উদয় হ’তো না। মানুষ যদি মানুষের মনের কথা ঠিক বুঝতে পারতো; তাহ’লে এই পাপময় সংসার যথার্থ অমরাবতীতে পরিণত হ’তো। হায়! এ জগতে কে আপন, কে পর, তা ঠিক করা কি সোজা কাজ?”
আমায় কথায় নিৰ্ম্মলা যেন একটু অপ্রতিভ হ’য়ে সেইরূপ মৃদুস্বরে কহিল, “হরি দাদা! তোমার তুল্য বিশ্বাসের পাত্র এ জগতে আর আমার কেহই নাই। তোমাকে অকপটে সকল কথা প্রকাশ করতে পারি, তাতে আমার কোনরূপ হানি হবে না; কিন্তু তাতে তো তোমার কোন লাভ হবে না।
আমি বলিলাম, “সে কথা সত্য, তোমার মুখখানি মলিন দেখলে, আমার অন্তরে কষ্ট হয়, সেইজন্য তোমার আকস্মিক এই বিষণ্নতার কারণ জানবার ইচ্ছা এত বলবতী হ’য়েছে, কিন্তু আমার ন্যায় পরের অন্তরের কেন যে এরূপ ইচ্ছা উদয় হ’লো, তা আমি ভেবে কিছুতেই স্থির করতে পারছি না।”
মেঘের কোলে যেমন বিজলী খেলে, তেমনি ঈষৎ হাস্যের রেখা নিৰ্ম্মলার অধরদেশ প্রকটিত হ’য়ে তখনি লয় হ’য়ে গেল এবং সেইরূপ মস্তক নত ক’রে খুব মৃদুস্বরে উত্তর করিল, “তুমি যে পর, তা কে তোমাকে বলে? এতদিনের পর কেন তোমার মনে এ ভাবের উদয় হ’লো?”
আমি একটি দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলিয়া কহিলাম, “নিৰ্ম্মলা! এত দিন বেশ ছিলাম, ভাবনা চিন্তা কাহাকে বলে আদৌ জানতাম না। সংসারকে শান্তি-নিকেতন ব’লে জ্ঞান করতাম; কিন্তু সম্প্রতি আমার সেই সুখ-স্বপ্ন ভঙ্গ হ’য়েছে। যে হৃদয় পূর্ব্বে সন্তোষে পরিপূর্ণ ও প্রশান্ত সাগরের ন্যায় স্থির ছিল, সহসা এক ঝটিকা উত্থিত হ’য়ে এক্ষণে পূর্ণমাত্রায় তথায় অশান্তি বিরাজ করছে। জগতে এমন লোক নাই যে, তার কাছে প্রাণের দ্বার উন্মোচন ক’রে অন্তরের অন্তঃস্থল অবধি দেখাই। যাকে দেখাবার ইচ্ছা ছিল, সে যখন পর ভাবে, তখন আর উপায় কি?”
আমার কথা শুনিয়া নির্ম্মলা তাহার আকর্ণ-বিস্তৃত নয়ন উত্তোলন ক’রে আমার মুখের দিকে চাহিল, আমি দেখিলাম যে সেই চাউনিতে কোনরূপ কুটিলতা কি জ্বালাময়ী কোন উৎকট বাসনার লেশমাত্র নাই, কেবল সলজ্জভাবের সহিত বেশ কাতরতা তাতে মাখানো আছে। নিৰ্ম্মলা পুনরায় পূর্ব্বের ন্যায় নম্রমুখী হ’য়ে কহিল, “হরি দাদা! রাগ ক’রো না, তোমাকে আমি অনায়াসে প্রাণের কথা প্রকাশ ক’রে বলতে পারি, তাতে বিন্দুমাত্র ক্ষতি নাই, কিন্তু সে ভয়ানক কেলেঙ্কারীর কথা যে জগতে আর কাহার কর্ণগোচর হয়, তা আমার ইচ্ছা নহে; আমার প্রাণের জ্বালা, মনের কষ্ট আমার মনঃমধ্যে লুক্কায়িত থাক্।”
এই কথায় আমার মনের কৌতুহল শতগুণে পরিবর্দ্ধিত হ’লো, কাজেই নিতান্ত অস্থিরভাবে কহিলাম, “আমি ঠিক বুঝেছি যে, আমার ন্যায় তুমিও অশান্তির ক্রোড়ে শায়িত হয়েছে, বোধ হয় দুইজনে এক কারণে উদ্বিগ্ন হ’য়েছি?”
নিৰ্ম্মলা সেইরূপ স্থিরভাবে কহিল, “তুমি কি জন্য উদ্বিগ্ন হ’য়েছে, তোমার মনের এরূপ ভাবান্তর হবার কারণ কি?”
আমি রাত্রিকালে কর্ত্তা গিন্নীর যে সকল কথাবার্ত্তা শুনিয়াছিলাম তাহা অকপটে বর্ণনা করিলাম, আমার কথা শুনিয়া নিৰ্ম্মলার নয়নযুগল ভাদ্রমাসের ভাগীরথীর ন্যায় অশ্রুজলে আপ্লুত হইল এবং মুক্তাফলের ন্যায় দুই বিন্দু অশ্রু আরক্তিম গণ্ডস্থল দিয়া গড়াইয়া পড়িল। আমি এক দৃষ্টে অশ্রুমুখী নির্ম্মলার সৌন্দর্য্যের এক প্রকার অভিনবত্ব দেখিতে লাগিলাম।
অল্পক্ষণ পরে নিৰ্ম্মলা অনেকটা সংযত হ’য়ে অশ্রুজল মুছিয়া কহিল, “হরি দাদা! এতদিন আমার মনে কোনরূপ সন্দেহের উদয় হয় নাই, অভাগীকে মা বলিয়া জানিতাম, কিন্তু সম্প্রতি তোমার ন্যায় তাদের মুখের কথা শুনিয়া আমি ঠিক বুঝেছি যে, ইনি আমার মা নয়, সম্পর্কে আমার যে কে হয়, তা ঠিক্ বলতে পারি না। তবে বাবা, ছোট বউ ব’লে ডাকলেন, তাতেই অভাগিনী খুড়িমা হবে বোধ হয়। আমি নিৰ্ম্মলার কথা শুনে অনেকটা উৎসাহিত ভাবে কহিলাম, “আমার মনেও অবিকল সেই সন্দেহের উদয় হ’য়েছে। তবে সব কথা আমি তলিয়ে বুঝতে পারি নাই! যাই হোক্, তোমরা কি যথার্থ জাতিতে কনোজী ব্ৰাহ্মণ?”
নিৰ্ম্মলা। তাই বা আমি ঠিক ক’রে কিরূপে বলবো, যখন একটা মিথ্যা ব’লে জানতে পেরেছি, তখন আর কোন কথাই সত্য ব’লে বোধ হয় না।
হরিদাস। আচ্ছা, তোমাদের দেশ কোথায় তা জান?
নিৰ্ম্মলা। না, আমার জ্ঞান হওয়া অবধি চিরকাল এইখানে আছি; কখন দেশের নামমাত্র শুনি নাই! ওঁদের কথার আঁচে বুঝেছি যে, বঙ্গদেশের কোন স্থানে আমাদের দেশ ছিল; তারপর কুলে কালি দিয়ে আমাকে নিয়ে দেশ থেকে চ’লে এসেছে। গতিক দেখে বোধ হয় যে, ইহজীবনে আর কখন আত্মীয় স্বজনের নিকট পোড়ার মুখ দেখাতে পারবে না। সেইজন্য এই সহর ছেড়ে একদিনের তরেও কোথায় যায় নাই। হায়! কি লজ্জার কথা, আমি এতদিন যাকে মা বলে জানতাম, তিনি কুক্কুরী অপেক্ষাও অধম; কারণ নারীজীবনের সার সম্পত্তি অমূল্য সতীত্বধন হেলায় হারিয়েছে? সুধা বোধে অগ্নিকুণ্ডে ঝাঁপ দিয়েছে, সুতরাং পরিণামে কখনই শুভ ফল প্রসব করবে না; নিশ্চয় এক সময় এই সকল মহাপাতকের প্রায়শ্চিত্তের কাল সমাগত হবে। হায়! আমি যারে মা ব’লে জানি, তাঁর দশা যখন এরূপ শোচনীয়, তখন না জানি আমার দশা—” নিৰ্ম্মলা এইটুকু বলিয়াই নীরব হইল; কেবল প্রভাতের শিশির বিন্দুর ন্যায় দুই ফোটা অশ্রুজল তাহার বদনকমলে শোভা পাইল।
নিৰ্ম্মলার চক্ষের জল পড়িলে আমার হৃদয় মধ্যে একখানি শাণিত ছুরিকা প্রোথিত হয়, আমি মনে মনে অত্যন্ত যাতনা অনুভব ক’রে থাকি। কাজেই আমার মনে মনে ইচ্ছা হ’লো যে, কোঁচার খুটে নিৰ্ম্মলার চ’খের জল মুছাইয়া দিই, কিন্তু পাছে নিৰ্ম্মলা কিছু মনে করে, আমার মনের কোনরূপ দুর্ব্বলতা প্রকাশ পায়, এই আশঙ্কায় সাহস কুলাইল না, কাজেই আমাকে নিরস্ত হ’তে হ’লো।
আমাকে নীরব দেখিয়া নিৰ্ম্মলা সেইরূপ মৃদুস্বরে কহিল, “দেখ হরি দাদা! এইজন্য লোকে বলে যে, পাপ কথা কখনই চিরকাল ছাপা থাকে না। তার সাক্ষ্য দেখ না যে, আমাদের দু’জনকে অন্ধকারে রাখতে ওদের খুব ইচ্ছা ছিল, কিন্তু ধর্ম্মের কৌশলে আমরা দু’জনেই ওদের মুখে নিজেদের গুণের কথা শুনেছি। যাই হোক্, আমাদের এই সব কেলেঙ্কারীর কথা ছাড়া তুমি কি তোমার নিজের কোন কথা শুনেছ?”
আমি। না, বিশেষ কিছুই শুনি নাই; তবে সে দিনের কথার ভাবে এটা বেশ বুঝেছি যে, আমি এ বাড়ীর ছেলে নই, এঁরা আমাকে প্রতিপালন করছেন।
নিৰ্ম্মলা ঈষৎ ভ্রুকুটি করিয়া কহিল, “কেন প্রতিপালন করছেন, তার কোন কারণ জান?”
আমি অতীব আগ্রহের সহিত কহিলাম, “না, তাহা আমি কিরূপে জানব, তবে সে দিন কর্ত্তার মুখে কেবল একবার শুনেছিলাম যে, গুরুদেবের হুকুম ব’লে রেখেছি, তারপর গিন্নীকে খুব চুপি চুপি আরো কত কথা বলে ছিলেন, কিন্তু তাহার এক বর্ণও আমি বুঝিতে পারি নাই; তবে তুমি যদি আরো কিছু শুনে থাক দয়া ক’রে বল, শুনিবার জন্য আমার অন্তর অত্যন্ত ব্যাকুল হয়েছে।”
একটি দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে নিৰ্ম্মলা কহিল, “হরি দাদা! আমি শুনেছি, তবে সব কথা স্পষ্ট বুঝিতে পারি নাই, কাজেই তোমার মনের কৌতূহলকে নির্ব্বাণ করতে পারব না। আমি তোমার হ্যায় গোপনে এইমাত্র শুনেছি যে, বাবার গুরুদেব তোমাকে তাঁর কাছে প্রতিপালনের জন্য রেখে গেছেন। সময় উপস্থিত হ’লে তিনি আবার নিয়ে যাবেন। কিন্তু তিনি তোমাকে কোথায় পেয়েছেন, কি জন্য এখানে রেখেছেন, তা আমি কিছু মাত্র জানি নাই। তবে এইমাত্র শুনেছি যে, বাবার গুরুদেব ৺কাশীধামে বাস করেন এবং তাঁহার নাম অভয়ানন্দ স্বামী, ইহা ভিন্ন আমি কিছুই জানি না। এই সকল কথা শুনলে তোমার মনের উৎকণ্ঠা অনর্থক বৃদ্ধি হবে, সেইজন্য তোমাকে কোন কথা বলি নাই। আজ বিশেষ পীড়াপীড়ি করলে ব’লে আর গোপন করতে পারলাম না। বিশেষ যখন তুমি, নিজেই কিছু কিছু শুনেছ। যাই হোক্, ওসব কথা আর মনে ভেবো না তাতে কোন ফল হবে না, কেবল অনর্থক মনঃকষ্ট সহ্য করবে। তবে চিরকাল এইভাবে যাবে না, একদিন নিশ্চয় সকল কথা বুঝতে পারবে। তার উপর তুমি পুরুষ মানুষ, তোমার আর ভয় কি? যেখানে যে অবস্থায় থাক না, এক রকম সুখে থাকবে—” নির্ম্মলার আর বাক্যস্ফুরিত হ’লো না, সে নীরবে মস্তক নত করিয়া রহিল, কেবল বর্ষাকালের সরোবরের ন্যায় চক্ষু দু’টা অশ্রুজলে পরিপূর্ণ হইয়া উঠিল এবং বদন কমলে ঈষৎ লজ্জার ছায়া নিপতিত হইল।
আমার আরও কিছু বলিবার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু তাহা ফলে পরিণত হ’লো না, কারণ গিন্নীর কণ্ঠস্বর শ্রুত হওয়া গেল, কাজেই নিৰ্ম্মলা আর ক্ষণমাত্র অপেক্ষা না ক’রে সেস্থান হইতে প্রস্থান করিল। আমি সেই শয্যার উপর আড় হ’য়ে অপার চিন্তাহ্রদে নিমগ্ন হ’লাম।
প্রবল ঝড়ে যেমন দীপ নিৰ্ব্বাণ হ’য়ে যায়, তেমনি আমার মনের স্বভাবসিদ্ধ সেই প্রফুল্ল ভাবটুকু লয় হ’লো এবং বিষম সন্দেহে চিত্তভূমি সমাক্রান্ত হ’লো, কাজেই কিছুতেই আর শান্তিলাভে সমর্থ হ’লাম না।