- গ্রন্থপরিচয়
- বিজ্ঞাপন
- বাঘ ও বক
- দাঁড়কাক ও ময়ূরপুচ্ছ
- শিকারি কুকুর
- অশ্ব ও অশ্বপাল
- সর্প ও কৃষক
- কুকুর ও প্রতিবিম্ব
- ব্যাঘ্র ও মেষশাবক
- মাছি ও মধুর কলসী
- সিংহ ও ইঁদুর
- কুকুর, কুক্কুট, ও শৃগাল
- ব্যাঘ্র ও পালিত কুকুর
- খরগস ও কচ্ছপ
- কচ্ছপ ও ঈগল পক্ষী
- রাখাল ও ব্যাঘ্র
- শৃগাল ও কৃষক
- কাক ও জলের কলসী
- একচক্ষু হরিণ
- উদর ও অন্য অন্য অবয়ব
- দুই পথিক ও ভালুক
- সিংহ, গর্দ্দভ, ও শৃগালের শিকার
- খরগস ও শিকারি কুকুর
- কৃষক ও কৃষকের পুত্রগণ
- নেকড়ে বাঘ ও মেষের পাল
- লাঙ্গূলহীন শৃগাল
- বৃদ্ধা নারী ও চিকিৎসক
- শশকগণ ও ভেকগণ
- কৃষক ও সারস
- গৃহস্থ ও তাহার পুত্রগণ
- অশ্ব ও অশ্বারোহী
- নেকড়ে বাঘ ও মেষ
- কুক্কুরদষ্ট মনুষ্য
- পথিকগণ ও বটবৃক্ষ
- কুঠার ও জলদেবতা
- সিংহ ও অন্য অন্য জন্তুর শিকার
- কুকুর ও অশ্বগণ
- বৃষ ও মশক
- মৃণ্ময় ও কাংস্যময় পাত্র
- রোগী ও চিকিৎসক
- ইঁদুরের পরামর্শ
- সিংহ ও মহিষ
- চোর ও কুকুর
- সারসী ও তাহার শিশু সন্তান
- পথিক ও কুঠার
- ঈগল ও দাঁড়কাক
- দুঃখী বৃদ্ধ ও যম
- পক্ষী ও শাকুনিক
- সিংহ, শৃগাল, ও গর্দ্দভ
- হরিণ ও দ্রাক্ষালতা
- কৃপণ
- সিংহ, ভালুক, ও শৃগাল
- পীড়িত সিংহ
- সিংহ ও তিন বৃষ
- শৃগাল ও সারস
- সিংহচর্ম্মাবৃত গর্দ্দভ
- টাক ও পরচুলা
- ঘোটকের ছায়া
- অশ্ব ও গর্দ্দভ
- লবণবাহী বলদ
- হরিণ
- জ্যোতিৰ্বেত্তা
- বালকগণ ও ভেকসমূহ
- বাঘ ও ছাগল
- গর্দ্দভ, কুক্কুট, ও সিংহ
- অশ্ব ও গর্দ্দভ
- সিংহ ও নেকড়ে বাঘ
- বৃদ্ধ সিংহ
- মেষপালক ও নেকড়ে বাঘ
- পিপালিকা ও পারাবত
- কাক ও শৃগাল
- সিংহ ও কৃষক
- জলমগ্ন বালক
- শিকারী ও কাঠুরিয়া
- বানর ও মৎস্যজীবী
- অশ্ব ও বৃদ্ধ কৃষক
- শৃগাল ও দ্রাক্ষাফল
- পায়রা ও চীল
- শৃগাল ও ছাগল
- পিপীলিকা ও তৃণকীট
- কুক্কুট ও মুক্তাফল
- ঈগল্ ও শৃগালী
কথামালা
বৃদ্ধা নারী ও চিকিৎসক
এক বৃদ্ধা নারীর চক্ষু নিতান্ত নিস্তেজ হইয়া গিয়াছিল; এজন্য, তিনি কিছুই দেখিতে পাইতেন না। নিকটে এক প্রসিদ্ধ চিকিৎসক ছিলেন। বৃদ্ধা তাঁহার নিকটে গিয়া কহিলেন, কবিরাজ মহাশয়! আমার চক্ষুর দোষ জন্মিয়াছে, আমি কিছুই দেখিতে পাই না; আপনি আমার চক্ষু ভাল করিয়া দেন; আমি আপনাকে বিলক্ষণ পুরস্কার দিব; কিন্তু, ভাল করিতে না পারিলে, আপনি কিচুই পাইবেন না।
চিকিৎসক, বৃদ্ধার প্রস্তাবে সম্মত হইয়া, পর দিন, প্রাতঃকালে, তাঁহার আলয়ে উপস্থিত হইলেন। বৃদ্ধার গৃহ নানাবিধ দ্রব্যে পরিপূর্ণ দেখিয়া, চিকিৎসকের অতিশয় লোভ জন্মিল। তিনি স্থির করিলেন, প্রতিদিন, ইহাকে দেখিতে আসিব, এবং এক একটি দ্রব্য লইয়া যাইব। এজন্য, যাহাতে শীঘ্র তাহার পীড়ার শান্তি হইতে পারে, সেরূপ ঔষধ না দিয়া, কিছু দিন গোলমাল করিয়া কাটাইলেন। পরে, একে একে সমস্ত দ্রব্য লইয়া গিয়া, তিনি রীতিমত ঔষধ দিতে আরম্ভ করিলেন। বৃদ্ধার চক্ষু, অল্প দিনেই, পূর্ব্ববৎ, নির্দ্দোষ হইল। তিনি দেখিলেন, তাঁহার গৃহে যে নানাবিধ দ্রব্য ছিল, তাহার একটিও নাই; অনুসন্ধান দ্বারা জানিতে পারিলেন, চিকিৎসক, একে একে, সমুদয় লইয়া গিয়াছেন। এক দিন, চিকিৎসক বৃদ্ধাকে কহিলেন, আমার চিকিৎসায় তোমার পীড়ার শান্তি হইয়াছে। পীড়ার শান্তি হইলে, আমায় পুরস্কার দিবে, বলিয়াছিলে; এক্ষণে, প্রতিশ্রুত পুরস্কার দিয়া, সন্তুষ্ট করিয়া, আমায় বিদায় কর। বৃদ্ধা, চিকিৎসকের আচরণে, অতিশয় অসন্তুষ্ট হইয়া ছিলেন; এজন্য, কোনও উত্তর দিলেন না। চিকিৎসক, বারংবার চাহিয়াও, পুরস্কার না পাইয়া, বৃদ্ধার নামে বিচারালয়ে অভিযোগ করিলেন। বৃদ্ধা বিচারকদিগের সম্মুখে উপস্থিত হইলেন; এবং, চিকিৎসককে স্পষ্ট বাক্যে চোর না বলিয়া, কৌশল করিয়া বলিলেন, কবিরাজ মহাশয় যাহা কহিতেছেন, তাহা যথার্থ বটে। আমি অঙ্গীকার করিয়াছিলাম, যদি আমার চক্ষু পূর্ব্ববৎ হয়, কোনও দোষ না থাকে, তবে উঁহাকে পুরস্কার দিব। উনি কহিতেছেন, আমার চক্ষু নির্দ্দোষ হইয়াছে; কিন্তু, আমি যেরূপ দেখিতেছি, তাহাতে আমার চক্ষু এখনও নির্দ্দোষ হয় নাই। কারণ, যখন আমার চক্ষুর দোষ জন্মে নাই, আমার গৃহে যে নানাবিধ দ্রব্য ছিল, সে সমস্ত দেখিতে পাইতাম। পরে, চক্ষুর দোষ জন্মিলে, সে সকল দেখিতে পাই নাই; এখনও, সে সব দেখিতে পাইতেছি না। ইহাতে, উঁহার চিকিৎসায়, আমার চক্ষু নির্দ্দোষ হইয়াছে, আমার সেরূপ বোধ হইতেছে না। এক্ষণে, আপনাদের বিচারে, যাহা কর্ত্তব্য হয়, করুন।
বিচারকেরা, বৃদ্ধার উত্তরবাক্যের মর্ম্ম বুঝিতে পারিয়া, হাস্যমুখে, তাঁহাকে বিদায় দিলেন, এবং, যথোচিত তিরস্কার করিয়া, চিকিৎসককে, বিচারালয় হইতে, চলিয়া যাইতে বলিলেন।