» » প্রথম-পর্ব

বর্ণাকার

তৃতীয় পরিচ্ছেদ

এদিকে হামিদা বরাবর তাহাদের বাড়িতে আসিয়া ভোলার মার খোঁজ করিত। ভোলার মা প্রৌঢ়া বিধবা; ভোলা তাহার যুবক পুত্র। মা নিজে পুঁজিপাটা সর্বস্ব বেচিয়া বাছিয়া বাছিয়া ভোলাকে এক সুন্দরী বউ আনিয়া দিয়াছে। বউ ২/৩ বছরে যুবতী হইয়া উঠিলে, ভোলা সেই মনোমোহিনীর অসৎ-পরামর্শে গৃহস্থালীর ব্যয় লাঘবের জন্য মাতাকে গৃহতাড়িত করিয়া দিয়াছে। ভোলার মা এক্ষণে হামিদাদিগের বাড়িতে কাজকর্ম করিয়া খায়। ভোলার মা একান্ত সরলা, বুদ্ধিশুদ্ধি মন্দ নয়, দোষের মধ্যে কানে একটু কম শুনে। সে হামিদাকে খুব ভালবাসে এবং দশ কাজ ফেলিয়া তাহার হুকুম তামিল করে। হামিদা খুঁজিয়া ভোলার মাকে তাহাদের কূপের নিকট পাইল এবং অপরে না শুনে এমন ভাবে কহিল, “ভোলার মা, আমার সইদিগের খিড়কীর ঘাটে সোজা পূর্বপারে একখানি পাসী নৌকা লাগান আছে, সেই নৌকায় ঠিক তোমাদের দুলামিঞার মত কে যেন দাঁড়াইয়া আছেন—দেখিয়া আসিলাম; তুমি গোপনে যাইয়া তত্ত্ব জানিয়া আইস, তিনিই কিনা?”

ভোলার মা আদেশ পালনে রওয়ানা হইল।

এদিকে হামিদা তাহার পাঠাগারে বসিয়া চিন্তা করিতে লাগিল,—কলিকাতা হইতে দু’বেলা তাহার দু’খানি চিঠি পাইলাম, আজ তিনি এখানে তাহাও কি হয়? বোধহয় তাঁহার মত অন্য কোন লোককে দেখিয়াছি। আবার ভাবিল, তিনি এবার কলিকাতা যাইবার সময় বলিয়াছেন, যে সকল বিবাহিতা যুবতী আদরে সোহাগে অধিকাংশ সময় পিত্রালয়ে থাকে, তাহারা স্বাধীন-প্রকৃতি হইয়া বে-পর্দায় চলাফেরা করে। দেখিও, তুমি যেন সেরূপ না হও; কারণ আমি কলিকাতা গেলেই তুমি মধুপুরে পার হইবে।’ আমি তখন চোখ রাঙ্গাইয়া গর্বভরে বলিয়াছিলাম, ‘তুমি আমাকে কি মনে কর? আমি আর মধুপুরে যাইব না, এখানেও থাকিব না, কলিকাতায় যাইব।’ তিনি দমিয়া গিয়া আমাকে আদর করিয়া বলিয়াছিলেন, ‘না, না; তুমি মধুপুরে যাইও, না যাইলে আম্মাজান ভাত-পানি ছাড়িবেন। আমি আর তোমাকে এমন কথা বলিব না।’ আমার প্রেমগর্ব তখনি পানি হইল। বোধহয় তিনি আমার প্রেমাভিমানের সত্যতা পরীক্ষার নিমিত্ত চালাকি করিয়া কলিকাতা হইতে চিঠি লিখিয়া তৎপূর্বে এইখানে আসিয়াছেন। পরীক্ষা তো এইরূপ পাইলেন, আমি অনাবৃত মস্তকে লোকচক্ষুর দর্শনীয় স্থানে বসিয়া সইয়ের সহিত গল্প করিতেছি, তিনি নৌকার ভিতর চুপ করিয়া থাকিয়া আমার বেপর্দাভাব স্বচক্ষে দেখিলেন। এখন উপায়? তাঁহার কাছে মুখ দেখাইব কিরূপে? যদি এই দোষে তিনি আমাকে ঘৃণার সহিত উপেক্ষা করেন, তবে কি করিব?

হামিদা আবার ভাবিল, তিনি আমাকে যেরূপ ভালবাসেন ও বিশ্বাস করেন, এই বলিয়া ট্রাঙ্ক হইতে বৈকালের প্রাপ্ত চিঠিখানা বাহির করিয়া পড়িতে লাগিল, “সুখ শান্তির আধার প্রাণের হামি”, এইটুকু পড়িতেই তাহার চোখের জল টস্ টস্ করিয়া চিঠিতে পড়িতে লাগিল। সে অতি কষ্টে অঞ্চলে চোখ মুছিয়া আবার পড়িতে লাগিল, “আমাদের ল-ক্লাস বন্ধ হইতে আর তিন সপ্তাহ বাকি, কিন্তু এই তিন সপ্তাহ তিন বৎসর বলিয়া মনে হইতেছে। ছুটির দিন যতই নিকটবর্তী হইতেছে, তোমাকে দেখিবার আকাঙ্ক্ষা ততই বাড়িয়া উঠিতেছে।” এ পর্যন্ত পড়িয়া আর পড়িতে পারিল না। প্রেমাশ্রু অনিবার্য-বেগে তাহার বক্ষবসন সিক্ত করিতে লাগিল। হামিদা পত্রহস্তে বালিশে মুখ রাখিয়া কাঁদিতে লাগিল।

বৃষ্টির পর আকাশ যেমন লঘু ও পরিষ্কার হয়, ক্রন্দনেও সেইরূপ দুঃখ লাঘব হয়। তাহা না হইলে সংসার চলিত না। হামিদার দুঃখের তাপ কমিয়া আসিলে সে পুনরায় গালে হাত দিয়া ভাবিতে লাগিল,—যিনি তাঁহার দাসীকে এত ভালবাসেন, তাহার মনে কি দাসীর প্রতি সন্দেহ হইতে পারে? কখনই নয়। চেহারার মত চেহারা কি নাই? আমি তাহার মূর্তিতে নিশ্চয়ই অন্য লোককে দেখিয়াছি। এইরূপ বিতর্ক করিয়া হামিদা কথঞ্চিত আস্বস্ত হইল এবং আগ্রহের সহিত ভোলার মার প্রতীক্ষা করিতে লাগিল।

ভোলার মা একখানি ডিঙ্গি নৌকায় খাল পার হইয়া দুলা-মিয়াকে দেখিবার জন্য পাস নৌকার নিকট উপস্থিত হইল। দেখিল, নৌকার সম্মুখভাগে একহারা আধাবয়সী লোক চা’র পানি গরম করিবার নিমিত্ত উনুন ধরাইতেছে। এইটি যুবকের পাচক। বাঘ-মহিষের যুদ্ধের ন্যায় উনুন মধ্যে ভাদুরে খড়ি ও আগুন পরস্পর যুদ্ধ বাঁধাইয়া তীব্র ধূম্রপুঞ্জে পাচকবরকে ত্যক্ত-বিরক্ত ও অন্ধীভূত করিয়া তুলিতেছিল। এই সময় ভোলার মা তাহাকে জিজ্ঞাসা করিল, “বাবা তোমরা কোথা হইতে আসিয়াছ?” পাচক ক্রোধভরে কহিল, “ কেন? আমরা বেলগাঁও হইতে আসিয়াছি।” ভোলার মা শুনিল, ‘আমরা বেতা হইতে আসিয়াছি।’ বেতা হামিদার শ্বশুর-বাড়ি। পাচকের ক্রোধের প্রতি ভোলার মার ভ্রূক্ষেপও নাই। সে পুনরায় জিজ্ঞাসা করিল, “নায়ে চড়নদার কে?” পাচক বিরক্ত হইয়া উঠিল। কিন্তু ভোলার মা নাছোড়বান্দা হওয়ায় সে ষোল আনা ক্রোধ জাগাইয়া এবার কহিল, “তোমাদের দুলা মিঞা আছে।” পাচক ভাবিল–মাগীকে শক্ত গালি দিয়াছি। মাগী ভাবিল—চড়নদার দুলা মিঞা বটে!

এই সময় দুলা-মিঞা নৌকার ভিতর দুগ্ধ-ফেননিভ শয্যায় শায়িতভাবে ‘রোমিও জুলিয়টে’ হাতে করিয়া বালিকাদ্বয়ের কথোপকথনের বিষয় চিন্তা করিতেছিলেন। তিনি ভাবিতে লাগিলেন বিবাহিতার মুখে অবিবাহিতার গুণের পরিচয় পাইলাম, পরন্তু স্বচক্ষে যাহা দেখিলাম তাহাতে এতকাল ধরিয়া যেমনটির জন্য প্রাণ লালায়িত হইয়া আছে, এই সর্বাংশে তদুপযুক্তই বটে, কিন্তু হায়! তাহার বিবাহের যে প্রস্তাব শুনিলাম তাহাতে বাসনা-সিদ্ধির আশা কোথায়? হায়, হায়, এমন রত্নও নরকে নিক্ষিপ্ত হইবে?

এদিকে ভোলার মা ফিরিয়া গিয়া হাসিতে হাসিতে হামিদাকে কহিল, “নৌকায় চড়নদার বেলতার দুলা-মিঞা। তাহাকে বাড়ির উপর আনিতে মা-জানকে খবর দেইগে।” ভোলার মা হামিদার মাকে মা-জান বলিয়া ডাকিত। হামিদা কহিল, “তাঁহার আসার সংবাদ কাহাকেও বলিও না, নিজ কাজে যাও।” ভোলার মা মলিন মুখে কূপের ধারে চলিয়া গেল। হামিদা ঘরের দরজা ঠেলিয়া দিয়া, আকাশ পাতাল ভাবিতে ভাবিতে অবসন্ন হইয়া পড়িল।

এক প্রহর বেলা অতীত হইল। হামিদার মা হামিদাকে উঠানে চলাফেরা করিতে না দেখিয়া এবং এত বেলায়ও বালিকা স্নানাহার করিতেছে না বলিয়া, তিনি তাহার পড়ার ঘরে খোঁজ করিলেন। দেখিলেন, বালিকা নিতান্ত মলিন মুখে চৌকিতে শুইয়া আছে। তিনি চমকিয়া উঠিয়া বলিলেন, “মা, অসুখ করিয়াছে কি?” হামিদা আন্তরিক ভাব গোপন করিয়া সলজ্জে কহিল, “না”। মা কহিলেন, “তবে অসময় শুইয়া আছ কেন? বেলা হইয়া গেল, গোসল করিয়া খাইতে আইস।” হামিদা কহিল, “যাও আসি।” মা চলিয়া গেলে, হামিদা পাশ ফিরিয়া শয়ন করিল। অনেকক্ষণ অতীত হইল, তথাপি হামিদা ঘর হইতে বাহির হইল না; মা মেয়েকে না দেখিয়া পুনরায় ডাকিতে আসিলেন, এবার বালিকা বলিল, “আমার ক্ষিদে পায় নাই। এখন খাইব না, তুমি খাওগে।” মার মুখ ভার হইল। তিনি চিন্তা করিতে লাগিলেন, ‘মেয়ে কাল উপর্যুপরি কলিকাতার দুইখানি চিঠি পাইয়াছে, বুঝি বা জামাতার কোন অমঙ্গল-সংবাদ আসিয়াছে। আমি জিজ্ঞাসা করিলেও মেয়ে কিছু বলিবে না। যত কথা তার সই-এর নিকট ব্যক্ত করে আজ প্রাতেও সেখানে অনেকক্ষণ ছিল, আচ্ছা তাহাকে জিজ্ঞাসা করিয়া আসি।’ এই ভাবিয়া তিনি আনোয়ারাদিগের আঙ্গিনায় গেলেন।

এদিকে আনোয়ারা শিরঃপিড়ায় কাতর হইয়া শয্যায় আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছে। তথাপি সে শয়ন করিয়া চিন্তা করিতেছে—ইনিই কি তিনি? চেহারা ঠিক সেইরূপ; কিন্তু তাঁহার পরিচ্ছদ এরূপ ছিল না। তাঁহাকে মূল্যবান আচ্‌কান পায়জামা পরিহিত দেখিয়াছি মনে হইতেছে, সুতরাং ইনি তিনি নন।’ আবার ভাবিল, ইঁহাকে যেন সই-এর স্বামী বলিয়া মনে হইল, তাঁহার চেহারা ঠিক এইরূপ।’ পর মুহূর্তে মনে হইল, ‘তিনি ত’ এমন সুন্দর কোরান শরীফ পড়িতেন না! বিশেষত সই কাল কলিকাতা হইতে তাহার চিঠি পাইয়াছে, আজ তিনি এখানে আসিবেন কিরূপে? সুতরাং ইনি সই-এর স্বামীও হইতে পারেন না। তবে ইনি কে?’—এইরূপ নানা চিন্তার ঘাত-প্রতিঘাতে বালিকার কোমল হৃদয় নিষ্পেষিত হইতে লাগিল; ধমনীর রক্ত ঊর্ধ্বগামী হইয়া মস্তিষ্ক আক্রমণ করিল, চক্ষু লাল হইয়া উঠিল, সঙ্গে সঙ্গে শরীর গরম হইয়া জ্বর আসিল। জ্বরোত্তাপে বালিকা ছটফট করিতে আরম্ভ করিল। এই সময় হামিদার মা তথায় আসিলেন। তিনি আনোয়ারার গায়ে হাত দিয়া কহিলেন, “ইস্! গা যে আগুনের মত গরম হইয়াছে, হঠাৎ এরূপ জ্বর হওয়ার কারণ কি?” মুখের দিকে চাহিয়া কহিলেন, “মেয়ের চোখ যে জবাফুলের মত লাল হইয়াছে, সমস্ত রক্ত যেন একযোগে মাথায় উঠিয়া গিয়াছে।”

আনোয়ারার দাদিমা কাছে বসিয়াছিলেন, তিনি কহিলেন, “কি জানি মা, কিসে যে কি হইল কে বলিবে? বৌয়ের দিনরাত কথার খোঁচায় বাছার আমার কলেজা ছিদ্র হইয়া গিয়াছে। গত রাত্রিতে ভাত খাইতে দেরী হওয়ায়, বৌ মেয়েকে অকারণে যেরূপ ঘেন্না দিয়া কথা বলিয়াছে, তাহা শুনিলে বুক ফাটিয়া যায়। গালাগালির ঘেন্নায় বাছা আমার উপোসে রাত কাটাইয়াছে, মনের কষ্টে শেষ রাতে বাছা ‘মা, মা’ বলিয়া কাঁদিয়া উঠিয়াছিল। মা, দুঃখের কথা কত বলিব, রূপসী বৌ ঘরে আনিয়া খোরশেদ আমার সব খোয়াইতে বসিয়াছে।”

আনোয়ারার পিতার নাম খোরশেদ আলী ভূঞা। ইনি দ্বিতীয়বার জামতাড়া গ্রামের জাফর বিশ্বাসের কন্যাকে বিবাহ করিয়াছেন।

আনোয়ারার দাদিমা হামিদার মাকে কহিলেন, “মা! পাট, ধান, কলাই যে খন্দের যা বাড়িতে আসে তাহার আধাআধি জামতাড়া যায়। তাহাছাড়া বৌ কত জিনিস চুরি করিয়া বিক্রি করে, তাহার সীমা নাই। ভাল কাপড়-চোপড় ঘটি-বাটি পর্যন্ত বৌ চুপে চুপে বাপের বাড়ি পার করিয়াছে। সেদিন খোরশেদ বেরামপুর হইতে বৌ-এর ফরমাইস মত বাদশার জন্য ছাতি, জুতা, কোট আনিয়াছে। (বাদশা বৌ-এর পূর্ব স্বামীর ঔরসজাত পুত্ৰ) সেই সঙ্গে এই ছুঁড়িটার জন্যও একটা কোর্তা আনিয়াছিল। বৌ কোর্তা দেখিয়া জিজ্ঞাসা করিল, ‘এটা কার জন্য?’ প্রশ্ন শুনিয়াই খোরশেদের মুখ শুকাইয়া গেল। শেষে বাধ্য হইয়া কহিল, মেয়েটাকে কিছু দেওয়া হয় না, এটা তাহারই জন্য আনিয়াছি।’ মা, লজ্জার কথা, বৌ খোরশেদকে যে কতরকম খারাপভাবে ঠাট্টা বিদ্রূপ করিল, তা বলা যায় না। মেয়েটা শুনিয়া তখনই কোর্তা বৌ-এর ঘরে ফিরাইয়া দিয়া আসিল। ইহাতে খোরশেদ টু শব্দটি করিল না। কয়েকদিন পরে জানা গেল কোর্তা জামতাড়ায় আজিমুল্লার মেয়ে তছিরনের গায়ে উঠিয়াছে। মা, আমি দু’কথা বুঝাইয়া বলিলে, খোরশেদ শুনিয়াও শুনে না। বৌ যা বলে অপরাধী লোকের ন্যায় সে তাহাই করে। আমার সোনার চাঁদ খোরশেদ নেকাহ করিয়া যে এমন বৌ- বশ হইবে তা আমি মনেও করি নাই। আমার মালুম হয় বৌ ছেলেকে যাদু করিয়াছে।” এই সময় আনোয়ারা চীৎকার করিয়া উঠিল—”দাদি, মাথা গেল—পানি—ইনিই কি তিনি?” হামিদার মা পানি দিলেন।

হামিদার মা কহিলেন, “আমিও আনোয়ারার বাপের মতিগতি দেখিয়া বাড়িতে বলিয়াছিলাম, ‘বাদশার মা ভূঞা সাহেবকে যাদু করিয়াছে।’ হামিদার বাপ এ কথা শুনিয়া কহিলেন, “ওসব কিছু না; রূপজমোহে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হইলে মানুষের মতিগতি এইরূপই হয়।’ এখন বাদশার মা ভূঞা সাহেবকে দুপোর রাত্রে পচা পুকুরে ডুব দিতে বলিলেও সে আপত্তি করিবে না। কিন্তু এর শেষ ফল বড়ই ভয়ানক; তখন চৈতন্য হইলেও নিস্তার নাই। এই সময় আনোয়ারা পুনরায় চীৎকার করিয়া পাশ ফিরিয়া শয়ন করিল এবং অস্ফুটে কহিল, ‘আমার ওস্তাদের কথা।” দাদিমা মেয়েকে জড়াইয়া ধরিয়া কহিলেন, “বুবুরে কি বকিতেছিস্? আনোয়ারা পুনরায়—”দাদি—মাথা—তিনি—উঃ—ফাটিয়া গেল” একটু পরে আবার—”মোনাজাত—কোরান—কি সুন্দর—ইনিই—কি তিনি।” হামিদার মা কহিলেন, “মেয়ে জ্বরের প্রকোপে পুস্তকের কথা আওড়াইতেছে; আপনারা সত্ত্বর ডাক্তার দেখান।” এই বলিয়া তিনি উঠিয়া বাড়িতে আসিলেন। যাহা জানিতে বা বলিতে গিয়াছিলেন, আনোয়ারার অবস্থা দেখিয়া তাহার কিছুই বলিতে পারিলেন না।

এদিকে হামিদা তাহার পাঠাগারের দ্বারে উদ্বিগ্নচিত্তে ভাবিতেছিল, তাঁর আসার সংবাদ মার নিকট বলিতে ভোলার মাকে নিষেধ করিয়া ভাল করি নাই। তিনি আসিলে পায়ে পড়িয়া ক্ষমা চাহিতাম।’ আবার ভাবিল, আর কিছুক্ষণ দেখি যদি তিনি স্বেচ্ছায় না আসেন, তবে তখন বিবেচনা করিয়া যাহা হয় করিব। এই সময় তাহার মা আসিয়া তথায় দাঁড়াইলেন; আনোয়ারার জ্বর বিকারের কথা মেয়েকে জানাইলেন না। স্নানাহারের জন্য তাহাকে রান্নাঘরের আঙ্গিনার দিকে লইয়া গেলেন।