» » আদিম আতঙ্ক

বর্ণাকার

অদ্রীশ বর্ধন

আদিম আতঙ্ক

তিন

সূর্য মজুমদার বাড়ি করেছিলেন খাসা। মাধবীর বাড়িকে ম্লান করে দিয়েছিলেন নকশার বাহাদুরিতে। পাশাপাশি দুটো বাড়ি। মাধবীর বাড়ি ছিমছাম। সূর্য মজুমদারের বাড়ি দেখলে চোখ কপালে ওঠে।

ডোরবেল পুশ করল মাধবী। মোলায়েম বাজনা বেজে উঠল ভেতরে। দরজা ছেড়ে একটু সরে এল—নিজের বাড়ি থেকে যদি কোনও ভাইরাস নিয়ে এসে থাকে—প্রতিবেশীর বাড়িতে তা ঢোকাতে চায় না। দরজায় কেউ এসে দাঁড়াল না। একসময়ে থেমে গেল মিউজিক। বেজে চলল কেবল ক্লাসিক্যাল মিউজিক। বিঠোফেনের মিউজিক। সূর্য মজুমদার বোধহয় মোহিত হয়ে রয়েছেন সুরের জগতে।

আবার বেল টেপে মাধবী। ডোরবেল মিউজিক বাজল, ধাপে ধাপে ফুলল, ধাপে ধাপে কমল, থেমে গেল। কেউ এল না দরজায়।

বেজে চলেছে বিঠোফেন।

‘বাড়িতে কেউ নেই মনে হচ্ছে,’ বললে পরী।

‘কেউ না থাকলে আলো জ্বলছে কেন, মিউজিক চলছে কেন?’

আচমকা একটা ঘূর্ণিঝড় তোলপাড় করে দিল গাড়িবারান্দার খানিকটা জায়গা। বাতাসের ঘুরন্ত ব্লেডে ছিঁড়েখুঁড়ে গেল মিষ্টি বিঠোফেন মিউজিক। বেতাল বাজনা খচমচ করে আছড়ে পড়ল কানে।

মাধবী ঠিকরে গেল দরজার সামনে। এক ঠেলায় দু’হাট করে দিল পাল্লা। আলো জ্বলছে স্টাডিরুমে—হলঘরের বাঁদিকে। দুধেলা প্রভা স্টাডির খোলা দরজা পেরিয়ে এসে পড়েছে হলঘরে—অন্ধকার লিভিংরুমের কিনারা পর্যন্ত!

‘পরমা? কুশল?’ ডাক দেয় মাধবী।

সাড়া নেই।

বিঠোফেনের বাজনা ছাড়া আর কোনও আওয়াজ নেই। ঘূর্ণিবায়ু প্রশমিত হয়েছে। মিউজিক তাল ফিরে পেয়েছে।

গলা চড়ায় মাধবী, ‘সাড়া নেই কেন? বাড়ি কি খালি?’

সিম্ফনি শেষ হয়ে গেল। নতুন মিউজিক আর শুরু হল না। নৈঃশব্দ্য।

‘সূর্যবাবু, আপনি কোথায়?’

গোটা বাড়ি নিস্তব্ধ। রজনী গাঢ়তর হচ্ছে।

পরী ঠোঁট কামড়ে ধরেই ছেড়ে দিল।

বললে, ‘দিদি, কিছু বুঝতে পারছ?’

মাধবীও তা উপলব্ধি করছিল। বললে আস্তে, ‘হ্যাঁ, পারছি। এখানে আর কেউ বা কারা রয়েছে। তাদের দেখা যাচ্ছে না।’

পেছনের লনে কেউ নেই। জানলার কাচের আড়ালে কেউ দাঁড়িয়ে আছে কি? বাইরে থেকে তাকে দেখা যাচ্ছে না— ভেতর থেকে সে কিন্তু দেখছে দুই বোনকে— মুখে চাবি দিয়ে। কিন্তু কেন?

শরীরের জার্মস পাছে বাড়ির মধ্যে চালান হয়ে যায় বলে এতক্ষণ দ্বিধা করেছিল মাধবী, এখন আর করল না। পরীর হাত ধরে ঢুকল বাড়িতে। দাঁড়াল হলঘরের ঠিক মাঝখানে। বাঁদিকের দরজা খোলা— দুটো আলো জ্বলছে সে ঘরে। সব কিছুই দেখা যাচ্ছে— শুধু মানুষ ছাড়া। ঘর ফাঁকা। সূর্য মজুমদারের ফ্যামিলির কেউ নেই ও ঘরে।

তা সত্ত্বেও প্রত্যেকের নাম ধরে ধরে ডেকে গেলে মাধবী। ফিরে এল প্রতিধ্বনি। নৈঃশব্দ্য যেন ওঁত পেতে রয়েছে মওকার অপেক্ষায়। এখুনি দেখা যাবে তার কায়া— অতিবড় দুঃস্বপ্নেও যে-কায়াকে কল্পনা করা যায় না।

হলঘরের ডানদিকের লিভিংরুমে থই থই করছে তমিস্রা। দরজা ভেজানো রয়েছে। তবুও সেইদিকেই এগিয়ে গেল মাধবী। দরজার পাশের সুইচ টিপে আলো জ্বালল। কেউ নেই লিভিংরুমে। এ ঘরেই রয়েছে টেপডেক আর স্টিরিয়ো রেকর্ড প্লেয়ার। বিঠোফেনের মিউজিক বাজছিল এখানেই। গান চালু করে দিয়ে সপরিবারে বেরিয়ে গেছেন সূর্য মজুমদার।

এ ঘরের পাশেই ডাইনিং রুম। ডাবল ডোর ঠেলে ঢুকল মাধবী।

না, এখানেও কেউ নেই। ওপরে জ্বলছে ঝাড়লণ্ঠন—নিচের টেবিলে সাজানো চারজনের খাবার। শরবতে ভাসছে বরফের টুকরো— এখনও গলে যায়নি। মাংস ঠাণ্ডা মেরে এলেও এখনও চর্বির স্তর পড়েনি।

খুব জোর আধঘণ্টা আগে লোক ছিল এ ঘরে। খাওয়া চলছিল। তারপরেই আচমকা চারজনেই চলে গেছে। একখানা চেয়ার উল্টে রয়েছে। চেয়ারের পাশে পড়ে রয়েছে একটা চামচ— ঘরের কোণে আর একটা।

নিশ্চুপ দুই বোন। অসহ্যতর হয়েছে সেই অব্যাখ্যাত অনুভূতিটা— নজরে রাখা হয়েছে দুজনকেই— তাদের দেখা যাচ্ছে না— তারা কিন্তু পলকহীন নয়নে দেখছে মাধবী আর পরীকে।

প্যারানোইয়া— মনের রোগ— মনকে প্রবোধ দেয় মাধবী।

পরী কিন্তু ফিসফিস করে বলে অন্য কথা, ‘বার্মুডা ট্র্যাঙ্গেল’ বইটা পড়েছ? মেরী সিলেস্টি… বড় জাহাজ… পাল তোলা… ১৮৭০ সাল কি ওই সময়ের কথা… হঠাৎ জাহাজটাকে ভাসতে দেখা গেছিল আটলান্টিকের মাঝখানে… টেবিলে খাবার সাজানো রয়েছে… কিন্তু মাঝিমাল্লা সব উধাও হয়ে গেছে… ঝড়ে জখম হয়নি জাহাজ… খোলে ফুটো হয়নি… লাইফবোট জাহাজেই রয়েছে… আলো জ্বলছে… পাল খাটানো রয়েছে… কোনও কারণ ঘটেনি জাহাজ ছেড়ে চলে যাওয়ার… অথচ খেতে বসেও কেউ খায়নি— আচমকা অদৃশ্য হয়ে গেছে… ঠিক এই ঘরের চারজনের মতন।’

শুকনো হেসে মাধবী বললে, ‘বই পড়ে তোর মাথা বিগড়েছে। এখানে ও সব মিস্ট্রি নেই। হাওয়ায় মিলিয়ে যায়নি চারজনে।’

‘তাহলে গেল কোথায়?’

এ বাড়ির দস্তুরই আলাদা। টেলিফোন থাকে রান্নাঘরে। খাবার ঘরের দরজা ঠেলে সে ঘরে ঢুকল দুই বোন। সুইচ টিপে আলো জ্বালল মাধবী। টেলিফোন রয়েছে বেসিনের পাশে দেওয়ালের তাকে। রিসিভার তুলে নিয়ে কানে লাগিয়ে রইল মাধবী। ডায়াল টোন আসছে না। টেলিফোন মরে গেছে।

কিন্তু একেবারে ডেড হয়নি। তাহলে কোনও শব্দ শোনা যেত না। নিজের বাড়িতে টেলিফোন তুলেও ডায়াল টোন পায়নি, শুধু একটা নরম হিসহিস আওয়াজ ছাড়া কোনও শব্দ শুনতে পায়নি। কিন্তু এখানকার লাইন সে রকম নয়, ওপেন লাইন— ইলেকট্রনিক স্ট্যাটিক্স-এর নরম হিসহিস শোনা যাচ্ছে। ডেড হলে এ-আওয়াজ তো শোনা যেত না।

রিসিভারের তলায় স্টিকারে লেখা রয়েছে দমকল আর পুলিশের ফোন নাম্বার। ডায়াল টোন না থাকা সত্ত্বেও পুলিশ নাম্বারের বোতামগুলো টিপে গেল মাধবী। কিন্তু কানেকশন পেল না।

ফের একই নাম্বারের বোতামগুলোয় আঙুল চালানোর ইচ্ছে ছিল, কিন্তু তার আগেই মনে হল, টেলিফোনে কেউ যেন আড়ি পেতে রয়েছে। কান খাড়া করে শুনচ্ছে।

‘হ্যালো!’ ডাক দেয় মাধবী।

বহুদূরের সেই স্ট্যাটিক শব্দ ছাড়া আর কোনও শব্দ নেই।

টেলিফোনের লাইন ‘ওপেন’ থাকলে নিশ্চয় এইরকম আওয়াজই শোনা যায়— মনে মনে বলে মাধবী। লাইন ‘ক্লোজড’ হলে কোনও আওয়াজ শোনা যেত না।

কেউ যেন লাইনের অপর প্রান্তে বসে রয়েছে। মটকা মেরে রয়েছে। উৎকর্ণ হয়ে রয়েছে। মাধবীর প্রতিটি কথা গিলে গিলে খাচ্ছে। নিজে টুঁ শব্দ করছে না।

এমন শীতে গা-ঘামার কথা নয়। মাধবীর গা কিন্তু ঘেমে ওঠে। চাপা চিন্তাটা ঠেলে ঠেলে ওপরে উঠে আসতে চাইছে। মুখে বলল, ‘ননসেন্স।’ বলেই, নামিয়ে রাখল রিসিভার।

টেলিফোনের অপর প্রান্তের নীরব লোকটার ব্যবহার বিচলিত করেছে মাধবীকে।

সে কি এই বাড়িরই কোথাও ঘাপটি মেরে রয়েছে? এই টেলিফোনের এক্সটেনশন লাইন কি বাড়ির অন্য ঘরে আছে? সেইখানে বসে রয়েছে রহস্যময় আততায়ী?

হুঁশিয়ার হল মাধবী। গা হিম হয়ে আসছে। তীব্রতর হচ্ছে অনুভূতিটা। অদৃশ্য সত্তা অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেছে। তার ধৈর্য ফুরিয়ে আসছে।

দ্রুত চরণে বাড়ির বাইরে চলে এল দুই বোন। শিবালয় টাউনের রাস্তায় রাস্তায়, বাড়িতে বাড়িতে আলো জ্বলছে। আলো জ্বেলে ঘুমোচ্ছে গোটা শহর। ঘুমপাড়ানি বাতাস বয়ে যাচ্ছে শহরের ওপর দিয়ে।

হাঁটাপথে দুজনে এগিয়ে যায়। পুলিশ ফাঁড়ির দিকে।

ফাঁড়িতে ঢুকেই দেওয়ালের সুইচ টিপেছিল মাধবী— জ্বলে উঠেছিল মাথার ওপরকার আলো। তৎক্ষণাৎ তেউড়ে গেছিল মাধবীর গোটা শরীর।

সুমন্ত সেন লম্বমান রয়েছে মেঝের ওপর। নীলচে-কালচে কালসিটেমারা থেঁৎলানো দেহ। ফুলে ঢোল। প্রাণহীন।

পরী দরজার কাছে দাঁড়িয়ে গেছিল। দাঁড়িয়েই রইল।

বাসন্তীর মৃতদেহে যে-যে অবস্থা দেখে এসেছে মাধবী, সেই সব অবস্থাই রয়েছে সুমন্তর দেহে। তবে একটা জিনিস অতিমাত্রায় পরিস্ফুট হয়ে রয়েছে চোখের তারায় তারায়, আতঙ্ক। নিবিড় আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে গেছিল সুমন্ত সেনের মতন ডাকাবুকো মানুষ। নিঃসীম আতঙ্কর তুহিন-মুষ্টি নিমেষে প্রাণহরণ করে নিয়ে গেছে সুমন্তর— ঠিক যে-রকমটি ঘটেছে বাসন্তীর ক্ষেত্রে।

কোমরে বাঁধা রয়েছে হোলস্টারের বেল্ট। খাপের রিভলভার পড়ে রয়েছে মেঝেতে।

নির্নিমেষে চেয়ে রইল মাধবী অস্ত্রের দিকে। মেঝেতে আছড়ে পড়েছিল সুমন্ত। সেই সময়ে রিভলভার খাপ থেকে ছিটকে পড়তে পারে মেঝের ওপর। কিন্তু মাধবীর তা মনে হল না।

সুমন্তই নিশ্চয় রিভলভার খাপমুক্ত করেছিল আততায়ীকে রুখে দেওয়ার জন্যে। তাই যদি হয়, তাহলে বিষ অথবা ব্যাধি— এই দুটোর কোনওটাই খতম করেনি সুমন্তকে।

তবে সে কে? অথবা, কী?

পরী দাঁড়িয়ে রইল দরজায়।

মাধবী ভাবছে। শিবালয় শহরের এই রহস্যময় মৃত্যু-অপদেবতার অকস্মাৎ নৃত্যের হেতু তাকে নির্ণয় করতেই হবে।

দীর্ঘ কয়েকটা সেকেণ্ড ধরে নিরীক্ষণ করে গেল মারণাস্ত্রটাকে। আসন্ন মৃত্যুর দংষ্ট্রা থেকে আত্মরক্ষা করতে চেয়েছিল সুমন্ত। নিমেষে রিভলভার টেনে বের করেছে। তারপর?

নিকষ অস্ত্র মেঝে থেকে তুলে নিয়ে হাতের চেটোয় শোয়াল মাধবী। ছ’ রাউণ্ড ক্যাপাসিটির সিলিণ্ডার। কিন্তু শূন্য রয়েছে তিনটে চেম্বার। পোড়া গান-পাউডারের কড়া গন্ধ গন্ধেন্দ্রিয়তে ধরা পড়ছে। তার মানে গুলি চলেছে সম্প্রতি। নইলে পোড়া গন্ধ এত তীব্র হত না। হয়তো আজকেই। বারুদের গন্ধ এত উৎকট যখন, তখন হয়তো ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই।

রিভলভার হাতে নিয়েই ঘরে চক্কর মারে মাধবী। চোখ আটকে যায় তিন জায়গায়। তিনটে তামার খোল। কার্তুজ। ভেতরে নেই বারুদ। নেই সিসে। কাজ শেষ করে মারণ বুলেটের খোল তিনটে গড়াগড়ি যাচ্ছে নীল মেঝের ওপর। কিন্তু কোনও বুলেটই নিক্ষিপ্ত হয়নি মেঝে লক্ষ করে। যদি হত, মেঝেতে ফুটো থাকত। দেওয়ালেও নেই বুলেট চিহ্ন, নেই কড়িকাঠে। মারণ-ধাতু আঘাত হানেনি কোত্থাও! আজব রহস্য!

জানলার কাচ অটুট… ভাঙেনি ফার্নিচার! তাজ্জব ব্যাপার!

সুমন্ত সেনকে আগে থেকেই চেনে মাধবী। ওর গুলি কখনও ফসকায় না। কথা বলতে বলতে খাপ থেকে রিভলভার টেনে পর-পর ছ’বার গুলি করে ছ’জনকে খতম করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। এখানে ছুঁড়েছে তিনটে বুলেট, তারপর আর সময় পায়নি— নিজেই খতম হয়েছে। কিন্তু বুলেট তিনটে নিশ্চয় তিনজনকে বিঁধেছে। রক্তপাত ঘটেনি কেন?

স্খলিত চরণে ভেতরের ঘরে সুমন্তর টেবিলে গিয়ে দাঁড়ায় মাধবী। এ ঘরের ফ্লোরেসেন্ট টিউব জ্বালাই ছিল। সেই আলোয় দেখা যাচ্ছে টেলিফোন। তুলে নেয় মাধবী।

ডায়াল টোন নেই। আগের দু’বারের মতন এবারেও একটানা ইলেকট্রনিক হিসহিসানি। যেন বহু পতঙ্গ মূঢ়পন্থায় সবেগে ডানা চালনা করে চলেছে। অর্থহীন সেই শব্দই বলে দিচ্ছে— লাইন ক্লোজড নয়, ওপেন রয়েছে। আর ঠিক আগের মতনই মনে হচ্ছে, লাইনের অপর প্রান্তে বাকহীন এক বদমাশ কানের পর্দায় রিসিভার লাগিয়ে বসে রয়েছে। সজোরে রিসিভার নামিয়ে রাখে মাধবী।

ঘরের পেছন দিককার দেওয়ালে রয়েছে রেডিও আর টেলিটাইপ লিঙ্ক। মাধবী জানে না কী করে অপারেট করতে হয় টেলিটাইপ। খুটখাট করেও পারল না রেডিওকে মুখর করতে। অথচ, পাওয়ার সুইচ অন পজিশনে রয়েছে। ইণ্ডিকেটর ল্যাম্প কিন্তু জ্বলছে না। মাইক্রোফোনও ডেড। সব যন্ত্রই ডেড।

দরজার বাইরে পরীর পাশে গিয়ে দাঁড়ায় মাধবী। খোয়া চাঁদ উঠেছে আকাশে। পাহাড়ের মাথায়। রাস্তার ল্যাম্পের আলো যেখানে পৌঁছোতে পারছে না, চাঁদের মরা আলো ছায়ামায়ায় ঘিরে রেখেছে সেই সব অঞ্চলকে। এর বেশি কিছু দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু রুপোলি চাদরে গা মুড়ে যেন অনেক অজানা ভয়ঙ্কর ওঁত পেতে রয়েছে— নির্নিমেষে দুই বোনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। তারা অস্পষ্ট, কিন্তু অনস্তিত্ব নয়। তারা অদৃশ্য, কিন্তু অ-প্রাণ নয়। তারা অ-জড়, কিন্তু কুহেলী নয়। তারা শুধু আতঙ্ক— কল্পনাতীত, বর্ণনাতীত।

‘গোরস্থান,’ ফিসফিস করে বললে পরী, ‘গোটা শহরটাই একটা গোরস্থান।’