☼ অদ্রীশ বর্ধন ☼
আদিম আতঙ্ক
তের
আকণ্ঠ ঠাসা প্রাতরাশ খেয়ে কুপোকাৎ হয়ে পড়েছিলেন ডক্টর উতঙ্ক চৌধুরী। দু’জন ছাত্র পড়তে এসেছিল তাঁর দু’ঘরের ফ্ল্যাটে। যত না পড়িয়েছেন, তার চেয়ে বেশি ঢুলেছেন। দুপুরের খাবার বাদ দিয়েছেন। বিকেল নাগাদ ভাবলেন এক কাপ চা তৈরি করে খাওয়া যাক, এমন সময়ে বেজে উঠল টেলিফোন।
ভুজঙ্গ বোনার্জীর ফোন, ‘ডক্টর চৌধুরী, এখুনি আসছি, সুটকেস গুছিয়ে নিন।’
‘কোথায় যাব?’
‘শিবালয় শহরে।’
‘সেটা কোথায়?’
‘গেলেই দেখতে পাবেন। হিমালয়ের কোলে। সেখানে ‘আদিম শত্রু’র আবির্ভাব ঘটেছে।’
‘কী বলছেন?’
‘জোর তদন্ত চলছে। কেউ হালে পানি পাচ্ছে না। কেউ বলছে নার্ভ গ্যাস, কেউ বলছে অণুজীবের মহামারী, কেউ বলছে ভিনগ্রহীরা পৈশাচিক কাণ্ড শুরু করে দিয়েছে।’
‘পৈ… পৈশাচিক কাণ্ড!’
‘গোটা শহরের মানুষ আর পশুপাখি রাতারাতি অদৃশ্য হয়ে গেছে। কেউ কেউ ফুলে ঢোল হয়ে পড়েছে, কারও কাটা মুণ্ডু আর কাটা হাত শুধু রয়েছে। একজন ভ্যানিশ হয়ে যাওয়ার আগে আপনার নাম আর আপনার লেখা বইয়ের নাম লিখে রেখে গেছে। বইটা বোধহয় ভদ্রলোকের পড়া ছিল। তিনিই ধরতে পেরেছিলেন, আদিম শত্রু ফের হানা দিয়েছে। তদন্তকারীরা কিন্তু এখনও ধরতে পারেনি কাণ্ডটা ঘটিয়েছে কারা, তারা কী ধরনের বিভীষিকা। ডক্টর চৌধুরী, তাই আপনার এখুনি সেখানে যাওয়া দরকার।
‘আমি গিয়ে কী করব?’
‘আদিম শত্রু নিয়ে সাধারণের উপযোগী ভাষায় লিখতে বলে দিয়েছি আপনাকে। লেখা শুরু করেছেন?’
‘আর লেখা! সকালের খাবারই হজম হয়নি এখনও।’
‘রাস্তায় বেরলেই হজম হয়ে যাবে। শুনুন। শিবালয় শহরে যা দেখবেন, যা শুনবেন, তা আপনার আগামী বইয়ের চেহারা পালটে দেবে। গোটা পৃথিবীতে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ছাড়বে আপনার ‘আদিম শত্রু’র নয়া সংস্করণ। তৈরি হয়ে নিন। পনেরো মিনিট পরেই ট্যাক্সি নিয়ে আসছি। যাবো সোজা এয়ারপোর্টে। আপনার জন্যে শিলিগুড়ির প্লেনে একটা সিট বুক করে রেখেছি।’
‘প্লেনে যাব!’
‘খরচ যোগাবে আপনার নতুন পাবলিশার। এয়ারপোর্টে আপনাকে ঘিরে ধরবে রিপোর্টাররা। তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আপনি যা জানেন, তা বলে যাবেন।’
‘প্রেস কনফারেন্স!’
‘আজ্ঞে। আজ সকালে যে সব কাহিনী আমাকে শুনিয়েছেন, সব বলে যাবেন। মায়াদের অদৃশ্য হয়ে যাওয়া, তিন হাজার চীনে সৈন্যর অন্তর্ধান। আরও কিছু ঘটনা—যদি মনে পড়ে। পড়ছে কি?’
‘অজস্র।’
‘যেমন?’
‘আমেরিকার প্রথম ব্রিটিশ কলোনি ভ্যানিশ হয়ে গেছিল রাতারাতি। রোয়ানোক আইল্যাণ্ড কলোনি।’
‘অবশ্যই সেটা বলবেন।’
‘কিন্তু আদিম শত্রুর কারসাজি ছিল তার পেছনে, সেরকম কোনও প্রমাণ তো নেই।’
‘ব্যাপারটা কী?’
‘১৫৯০-এর মার্চ মাসে স্যার ওয়াল্টার র্যালের টাকায় একটা ব্রিটিশ অভিযাত্রী দল রোয়ানোক আইল্যাণ্ডে ফিরে এসে দেখেছিল দ্বীপে কোনও প্রাণী নেই, মানুষও নেই, অথচ সবই ছিল আগে। কয়েকশো থিয়োরি হাজির করা হয়েছে, কিন্তু তা দিয়ে অবিশ্বাস্যভাবে সমস্ত মানুষ আর মনুষ্যেতর প্রাণীর উধাও হয়ে যাওয়ার কোনও ব্যাখ্যা বের করা যায়নি। যেমন ধরুন, রোয়ানোক আইল্যাণ্ডের খুব কাছেই থাকে ক্রোয়ানটোয়ান ইণ্ডিয়ানরা—এরাই এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। একটা গাছের গুঁড়িতে খুব দ্রুত ক্রোয়ানটোয়ান শব্দটা লিখে গেছিল রোয়ানোক আইল্যাণ্ডের কোনও এক ব্যক্তি, কিন্তু দিব্যি গেলে বলেছে ক্রোয়ানটোয়ানরা, এ-ব্যাপারে তাদের কোনও হাত নেই, কিছু জানেও না। তারা শান্তিপ্রিয় মানুষ। রোয়ানোক আইল্যাণ্ডে উপনিবেশ গড়তে তারা যথেষ্ট সাহায্য করেছে। সেই উপনিবেশ ধ্বংস করতে যাবে কেন? ক্রোয়ানটোয়ানরা সত্যিই যুদ্ধবাজ জাত নয়, তাদের কথা বিশ্বাস করা যায়। তা ছাড়া, গোটা আইল্যাণ্ডে কোথাও লড়াই-টড়াইয়ের কোনও চিহ্ন পাওয়া যায়নি। কারও ডেডবডিও পাওয়া যায়নি। হাড় পর্যন্ত নেই। নেই কোনও কবর।’
‘তাহলে ‘ক্রোয়ানটোয়ান’ নামটা গাছের ছালে খোদাই করা হল কেন?’ ভুজঙ্গ বোনার্জীর প্রশ্ন।
‘ক্রোয়ানটোয়ানরা নিশ্চয় জানে কারা এমন কাণ্ড ঘটাতে পারে। হয়তো তা নিছক কুসংস্কার। তবে ক্রোয়ানটোয়ানরা নিজেরাও লক্ষ করেছে, বোয়ানোক দ্বীপবাসীরা অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আশপাশের যে সব জঙ্গলে শিকার করতে যেত ক্রোয়ানটোয়ান শিকারীরা, সে সব জঙ্গল প্রাণীশূন্য হয়ে গেছে এক্কেবারে।’
‘কুসংস্কারটা কী জাতীয়?’
‘ওদের বিশ্বাস, সমস্ত অশুভ শক্তির মূল যে অশুভ শক্তি, যে-শক্তি কিছুই না অথচ সব কিছু হতে পারে, এ হল সেই শক্তির লীলা।’
‘প্রেতবিশ্বাসীরা অবশ্য এরকম কথা বলে।’
‘রোয়ানোক আইল্যাণ্ডের সব্বাইকে উড়িয়ে নিয়ে গেছে এই শক্তি—ক্রোয়ানটোয়ানদের বিশ্বাস।’
‘প্রেস কনফারেন্সে সব বলবেন। আমেরিকা একটা আশ্চর্য দেশ। সেখানে হইচই তুলতে পারলে আপনার বই মার-মার কাটকাট করে বেরিয়ে যাবে। তৈরি হয়ে নিন।’
এদিকে বৈজ্ঞানিকদের নিয়ে শহর পরিক্রমায় বেরিয়েছেন সুরেশ সাইকিয়া। দেখাচ্ছেন অদ্ভুত অসম্ভব দৃশ্যের পর দৃশ্য। কোথাও গাড়ি টাল খেয়ে রাস্তা থেকে ছিটকে গেছে। সব ক’টা জানলার কাচ তোলা। দরজাগুলোও ভেতর থেকে লক করা। অথচ গাড়ি যে চালাচ্ছে, সে মরে গিয়ে ফুলে ঢোল হয়ে আটকে রয়েছে স্টিয়ারিং আর সিটের ফাঁকে। কোথাও একটা গাড়ি আর একটা গাড়িকে ওভারটেক করতে গিয়ে সংঘর্ষ ঘটিয়ে গায়ে গা লাগিয়ে ব্রেক কষেছে রাস্তার ওপরেই। দুটো গাড়িরই সব কাচ তোলা, দরজাগুলো ভেতর থেকে লক করা, চালকরা কিন্তু মরে ঢোল।
কর্নেল ডিসুজা ইউটিলিটি বেল্ট থেকে ছোট্ট গাইগার কাউন্টার বের করে শেষের দুটো গাড়িকে পরখ করলেন। বিকিরণের লক্ষণ পেলেন না। চালকেরা বিকিরণের ফলে মারা যায়নি।
সুরেশ সাইকিয়া বললেন, ‘দেখে তো মনে হচ্ছে, গাড়ি নিয়ে অনেকেই পালাতে গেছিল শহর ছেড়ে। বিষ গ্যাসের ভয়ে সব কাচ তুলে দিয়েও রেহাই পায়নি।’
‘কার ভয়ে?’ মাধবীর প্রশ্ন।
ডিসুজা নীরব।
মাধবী সঙ্গে এসেছে শহরের রাস্তাঘাট তার চেনা বলে। একটা বাড়ির সামনের দরজা দু’হাট খোলা দেখে এগিয়ে গেল নিজেই। থমকে গেল দোরগোড়ায়। হাতছানি দিয়ে ডাকল কর্নেলকে। তিনি কাছে আসতেই বললে, ‘রিটায়ার্ড আর্মি অফিসার। দেখুন কী অবস্থা করেছেন নিজের।’
উঁকি দিয়ে দেখলেন ডিসুজা। থ হয়ে গেলেন।
নিজের অটোমেটিক মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে গুলি চালিয়ে দিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক অফিসার। কিন্তু কিসের ভয়ে?
পাশের বাড়ির বসবার ঘরে আর একটা দৃশ্য। সাদা দেওয়ালে আয়োডিন দিয়ে লেখা হয়েছে P R O। শেষ অক্ষরটার আধখানা লিখেই প্রাণ বেরিয়ে গেছে মেমসাহেব লেখিকার। প্রৌঢ়া। লুটিয়ে রয়েছে মেঝেতে।
বুলেট।
দু’খানা বাড়ির পরের বাড়িটা মাধবীর বান্ধবীর বাড়ি। বাড়ি ফাঁকা। কিন্তু রান্নাঘরের মেঝেতে শুধু বুলেট আর বুলেট। পুরো কার্তুজ নয়। শুধু সিসে। পেতলের খোল বাদ দিয়ে।
যেহেতু পেতলের খোল নেই ঘরের মধ্যে, অতএব বন্দুকের লড়াই হয়নি ওখানে। গান পাউডারের গন্ধও নেই। দেওয়ালে বা ক্যাবিনেটে বুলেটের গর্তও নেই।
শুধু বুলেট। যাদুমন্ত্রবলে যেন খসে পড়েছে হাওয়া থেকে।
এক মুঠো বুলেট তুলে নিয়েছিলেন সুরেশ সাইকিয়া। কোনও বুলেটই দুমড়ে থেঁৎলে ফেটে যায়নি। আরও দেখলেন, রকমারি আগ্নেয়াস্ত্রর বুলেট ছড়িয়ে মেঝেতে, একটা বিশেষ আগ্নেয়াস্ত্রের নয়। বেশির ভাগই সাবমেশিনগানের বুলেট। যে টাইপের বুলেট আর সাবমেশিনগান রয়েছে কর্নেল ডিসুজার রক্ষীবাহিনীর কাছে।
সার্জেন্ট যোশীর সাবমেশিনগানের বুলেট নয় তো? লকারের মধ্যে ঢুকে বেধড়ক গুলি চালিয়েছিল। মেঝেতে শুধু খালি খোল পড়ে থাকতে দেখা গেছে। সিসের গুলি পাওয়া যায়নি একটাও। যাকে টিপ করে গুলি চালিয়েছিল সার্জেন্ট যোশী, সে কি সিসেগুলো লুফে নিয়ে ছড়িয়ে রেখেছে এই রান্নাঘরের মেঝেতে?
কপাল কুঁচকে রইলেন কর্নেল ডিসুজা। তিনি বিলক্ষণ হতভম্ব হয়েছেন।
হাতের বুলেট মেঝেতে ফেলে দিয়ে নতুন কয়েকটা সিসে তুললেন কর্নেল। আরও হতভম্ব হলেন। এ যে তাঁর নিজের রিভলভারের বুলেটের মতন।
ফেলে দিলেন মেঝেতে। তুললেন অন্য সিসের গুলি। রকমারি পয়েন্টের কার্তুজ।
হাজত দারোগা সুমন্ত সেনও মরবার আগে গুলিবর্ষণ করেছিল। তার সিসেগুলোও উড়ে এসে এখানে পড়ে নেই তো?
কাদের সঙ্গে লড়তে নেমেছেন কর্নেল ডিসুজা?
বাড়িটা অসাধারণ পরিষ্কার-পরিছন্ন। কিন্তু অস্বস্তি জাগিয়ে তোলে সুরেশ সাইকিয়ার মনে। সবুজ আর হলুদ রঙের বড্ড বাড়াবাড়ি। কার্পেট সবুজ তো দেওয়াল হলুদ। সোফায় হলদে সবুজ পাতা আর ফুল, চেয়ারগুলোয় মরকত সবুজ ঢাকনি, চীনেমাটির ল্যাম্পশেড হলুদ তো ঝুমকোগুলো সবুজ। দুটো বড় ছবি ঝুলছে দেওয়ালে, দুটোতেই সবুজ মাঠ আর হলুদ ফুলের ছড়াছড়ি। সবচেয়ে বাজে শোবার ঘর। চোখ ঝলসানো উৎকট ওয়াল পেপার দিয়ে মোড়া চারটে দেওয়াল।
ডেডবডি পড়ে নেই কোথাও। সেইটাই রক্ষে। রঙের ধাক্কাতেই চোখ আর মন কাহিল, ডেডবডি দেখলে অবস্থা হত আরও শোচনীয়।
রান্নাঘরের সিঙ্কটা পর্যন্ত সবুজ আর হলুদ রঙের। এরকম উৎকট বর্ণবাতিক সচরাচর দেখা যায় না। তাই কর্নেল ডিসুজা এগিয়ে গেছিলেন সিঙ্কের সামনে। থমকে গেছিলেন। হাত নেড়ে ডেকেছিলেন সুরেশ সাইকিয়া আর মাধবীকে।
সিঙ্ক ভরতি শুধু জড়োয়া গয়না আর হাতঘড়ি। বিয়ের আংটি গাদা গাদা। দামি দামি হাতঘড়ি অজস্র। মূল্যবান পাথরের নেকলেস থেকে আরম্ভ করে যত রকমের অলঙ্কার হতে পারে, সব দিয়ে বোঝাই করা হয়েছে সিঙ্ক।
ঘষঘষে গলায় বললেন ভিসুজা, ‘গাড়ির মধ্যে যাদের ডেডবডি দেখলাম, আর বাইরে যত ডেডবডি দেখেছি, কারও হাতে হাতঘড়ি দেখিনি, গয়নাগাঁটিও দেখিনি।’
মাধবী বললে, ‘এরকম খুনীও পৃথিবীতে দেখা যায়নি যে খুন করে, গয়নাগাঁটি গা থেকে খুলে নেয় কিন্তু থলি ভরে সঙ্গে নিয়ে যায় না, অবহেলায় ফেলে যায় রান্নাঘরের সিঙ্কে।’
সুরেশ সাইকিয়া বললেন, ‘যারা মিসিং, তাদের গয়না আর রিস্টওয়াচ এখানে নিশ্চয় আছে। বডিগুলো গেল কোন চুলোয়? কোন নরকে?’
জবাব নেই। ঝিকমিক করে যেন বিদ্রুপ করে গেল সিঙ্কভরতি দামি গয়নাগাঁটি আর হাতঘড়িগুলো।
কমপিউটার টারমিনাল অন করে দিয়ে গাংচিলের চিৎকার এবার নিজেই শুনলেন কর্নেল ডিসুজা।
সেইসঙ্গে কুকুরের অবিরাম গজরানি। ঘেমে গেলেন কর্নেল।
আচমকা মিউ মিউ করে উঠল একটা বেড়াল। পরক্ষণেই ঘোড়ার হ্রেষারব।
মোবাইল-ল্যাবের এ-কোণ ও-কোণ দেখে নিলেন কর্নেল। কোনও চিহ্ন দেখতে পেলেন না।
র্যাটল স্নেকের খটখট কড়মড় বাদ্যি আরম্ভ হয়ে গেল এরপরেই।
ভনভন করছে মৌমাছি।
আচমকা স্তব্ধ হল মৌমাছি গুঞ্জন। কচি গলায় শুরু হল ‘আবোল তাবোল’ ছড়া…
আজগুবি নয়, আজগুবি নয়,
সত্যিকারের কথা—
ছায়ার সাথে কুস্তি করে
গাত্রে হল ব্যথা।
কর্নেল কিংকর্তব্যবিমূঢ়। গলাটা মানুষের, না না-মানুষের তা বোঝা যাচ্ছে না, মানুষের গলায় থাকে প্রাণের ছোঁয়া, এ গলায় তা নেই।
আচমকা খিলখিল করে হেসে উঠে এবার যে ছড়া বলে গেল, তা সুকুমার রায়ের ‘ছায়াবাজি’ ছড়া থেকে বিশেষ বিশেষ শব্দ তুলে নিয়ে স্বরচিত:
ছায়াবাজি নয় রে বোকা,
এ যে আসল মায়া,
রোদের ছায়া চাঁদের ছায়া,
শিশিরভেজা সদ্য ছায়া—
মায়া… মায়া… সবই মায়া।
গ্রীষ্মকালে শুকনো ছায়া, কাগের
ছায়া, বগের ছায়া
হালকা মেঘের পানসে ছায়া,
গাছের ছায়া, পাৎলা ছায়া—
মায়া… মায়া… স্রেফ মায়া।
খামোকা লড়ে মরবি মর—
আমার খিদে মেটার পর।
ছায়া-মায়া কায়া কিছুই আমার নেই কো নেই,
আমি নিমর্ম, আমি ভীষণ, আমি শূন্য—কিন্তু আমিই সেই।
ছড়া থেমে গেল। আর কোনও আওয়াজ নেই। ঘামছে এখন প্রত্যেকেই।
টিকেন্দ্রনগর থেকে খবরটা এল ঠিক সেই সময়ে—নাটকীয়ভাবে। ‘আদিম শত্রু’ নামে একটা বই লিখেছিলেন ডক্টর উতঙ্ক চৌধুরী। লোকে তাঁকে বলত আধপাগল। কারণ তিনি ওই বইতে অনেক তথ্য তুলে ধরে বলতে চেয়েছিলেন, এই পৃথিবীর মাটি থেকে, এমনকী সমুদ্রের জল থেকেও মাঝে মাঝে মানুষ আর প্রাণী যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে দলে দলে। এই অদৃশ্যকরণের মূলে রয়েছে এক আদিম আতঙ্ক।
বইটা আর পাওয়া যায় না। বাথরুমের আয়নায় এই বই লেখকের নাম লিখেই আদিম আতঙ্কর পাল্লায় পড়েছেন একজন—নাম তাঁর বিনয় চৌধুরী।
লেখক স্বয়ং আসছেন শিবালয় শহরে।