» সতের

চারিদিকে চাহিয়া কমল স্তব্ধ হইয়া রহিল। ঘরের একি চেহারা ! এখানে যে মানুষ বাস করিয়া আছে সহজে যেন প্রত্যয় হয় না। লোকের সাড়া পাইয়া সতেরো-আঠারো বছরের একটি হিন্দুস্থানী ছোকরা আসিয়া দাঁড়াইল; রাজেন্দ্র তাহার পরিচয় দিয়াContinue Reading

» আঠার

ইন্‌ফ্লুয়েঞ্জা এদেশে সম্পূর্ণ নূতন ব্যাধি নহে, ‘ডেঙ্গু’ বলিয়া মানুষে কতকটা অবজ্ঞা ও উপহাসের চক্ষেই দেখিত। দিন দুই-তিন দুঃখ দেওয়া ভিন্ন ইহার আর কোন গভীর উদ্দেশ্য নাই, ইহাই ছিল লোকের ধারণা। কিন্তু সহসা এমন দুর্নিবার মহামারীরূপেওContinue Reading

» উনিশ

হরেন্দ্র ও কমল আশুবাবুর গৃহে আসিয়া যখন উপস্থিত হইল তখন বেলা অপরাহ্ণপ্রায়। শয্যার উপরে অর্ধশায়িতভাবে বসিয়া অসুস্থ গৃহস্বামী সেইদিনের পাইয়োনিয়ার কাগজখানা দেখিতেছিলেন। দিনকয়েক হইতে আর জ্বর ছিল না, অন্যান্য উপসর্গও সারিয়া আসিতেছিল, শুধু শরীরের দুর্বলতাContinue Reading

» কুড়ি

প্রায় মাসাধিক-কাল গত হইয়াছে। আগ্রায় ইন্‌ফ্লুয়েঞ্জার মহামারী মূর্তিটা শান্ত হইয়াছে;স্থানে স্থানে দুই-একটা নূতন আক্রমণের কথা না শুনা যায় তাহা নয়,তবে,মারাত্মক নয়। কমল ঘরে বসিয়া নিবিষ্টচিত্তে সেলাই করিতেছিল,হরেন্দ্র প্রবেশ করিল। তাহার হাতে একটা পুঁটুলি,নিকটে মেঝের উপরContinue Reading

» একুশ

বেলার মুখের প্রতি চাহিয়া আশুবাবু একটু হাসিলেন, কহিলেন, কেমন, বর্ণনা আমার মিললো তো? বুড়োবয়সে extravagance বলে উপহাস করা যে উচিত হয়নি, মানলে ত? মহিলাটি নির্বাক হইয়া রহিলেন। আশুবাবু কমলের হাতখানি বার-কয়েক নাড়াচাড়া করিয়া বলিতে লাগিলেন,Continue Reading

» বাইশ

সংসারে সাধারণের একজন মাত্র,—এর বেশী দাবী আশুবাবু বোধ করি তাঁর সৃষ্টিকর্তার কাছে একদিনও করেন নাই। পৈতৃক বিপুল ধন-সম্পদও যেমন শান্ত আনন্দের সহিত গ্রহণ করিয়াছিলেন, বিরাট দেহ-ভার ও আনুষঙ্গিক বাত-ব্যাধিটাও তেমনি সাধারণ দুঃখের মতই স্বীকার করিয়াContinue Reading

» তেইশ

অজিত কহিল, জল থামবার ত কোন লক্ষণ নেই। হরেন্দ্র কহিল, না। অতএব আবার দুজনে সেই ভাঙ্গা ছাতির মধ্যে মাথা গুঁজে সমানাধিকার-তত্ত্বের সত্যতা সপ্রমাণ করতে করতে অন্ধকারে পথ চলা এবং অবশেষে আশ্রমে পৌঁছানো। অবশ্য, তার পরেরContinue Reading

» চব্বিশ

দশ-বারো দিন কমল আগ্রা ছাড়িয়া কোথায় চলিয়া গেছে, অথচ আশুবাবুর তাহাকে অত্যন্ত প্রয়োজন। কম-বেশি সকলেই চিন্তিত, কিন্তু উদ্বেগের কালো মেঘ সবচেয়ে জমাট বাঁধিল হরেন্দ্রর ব্রহ্মচর্যাশ্রমের মাথার উপর। ব্রহ্মচারী হরেন্দ্র-অজিত উৎকণ্ঠার পাল্লা দিয়া এমনিই শুকাইয়া উঠিতেContinue Reading

» পঁচিশ

শীতের সূর্য অস্ত গেল। সায়াহ্ন-ছায়ায় ঘরের মধ্যেটা ঝাপসা হইয়াছে, একটা জরুরী সেলাইয়ের বাকীটুকু কমল আলো জ্বালার পূর্বেই সারিয়া ফেলিতে চায়। অদূরে চৌকিতে বসিয়া অজিত। ভাবে বোধ হয় কি-একটা বলিতে বলিতে যেন হঠাৎ থামিয়া গিয়া সেContinue Reading

» ছাব্বিশ

আট-দশ দিন পরে কমল আশুবাবুর বাটীতে দেখা করিতে আসিল। যাঁহাদের লইয়া এই আখ্যায়িকা তাঁহাদের জীবনে এই কয়দিনে একটা বিপর্যয় ঘটিয়া গেছে। অথচ, আকস্মিকও নয়, অপ্রত্যাশিতও নয়। কিছুকাল হইতে এলোমেলো বাতাসে ভাসিয়া টুকরা মেঘের রাশি আকাশেContinue Reading

» সাতাশ

বাড়িয়ালা এইমাত্র পুরা মাসের ভাড়া চুকাইয়া লইয়া গেল। ইতস্ততঃ-বিক্ষিপ্ত জিনিসপত্রের মাঝখানে, বিশৃঙ্খল কক্ষের একধারে ক্যাম্বিশের ইজিচেয়ারে অজিত চোখ বুজিয়া শুইয়া। মুখ শুষ্ক, দেখিলেই বোধ হয় চিন্তাগ্রস্ত মনের মধ্যে সুখের লেশমাত্র নাই। কমল বাঁধা-ছাঁদা জিনিসগুলার ফর্দContinue Reading

» আটাশ

আহারান্তে অক্ষয় কমলকে একমুহূর্ত নিরালায় পাইয়া চুপি চুপি বলিল, শুনতে পেলাম আপনারা চলে যাচ্চেন। পরিচিত সকলের বাড়িতেই আপনি এক-আধবার গেছেন,শুধু আমারই ওখানে— আপনি! কমল অতিমাত্রায় বিস্মিত হইল। শুধু কণ্ঠস্বরের পরিবর্তনে নয়,‛তুমি’ বলিয়া তাহাকে সবাই ডাকে,Continue Reading

» দেবদাস

দেবদাস শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত একটি প্রণয়ধর্মী বাংলা উপন্যাস। দেবদাস শরৎচন্দ্রের প্রথমদিককার উপন্যাস। রচনার সমাপ্তিকাল সেপ্টেম্বর ১৯০০, কিন্তু প্রথম গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ১৬ই আষাঢ়, ১৩২৪ বঙ্গাব্দ (৩০শে জুন, ১৯১৭ খৃষ্টাব্দ)। উপন্যাসটি নিয়ে শরৎচন্দ্রের দ্বিধা ছিল বলেContinue Reading

» প্রথম পরিচ্ছেদ

একদিন বৈশাখের দ্বিপ্রহরে রৌদ্রেরও অন্ত ছিল না, উত্তাপেরও সীমা ছিল না। ঠিক সেই সময়টিতে মুখুয্যেদের দেবদাস পাঠশালা-ঘরের এক কোণে ছেঁড়া মাদুরের উপর বসিয়া, শ্লেট হাতে লইয়া, চক্ষু চাহিয়া, বুজিয়া, পা ছড়াইয়া, হাই তুলিয়া, অবশেষে হঠাৎContinue Reading

» দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

দেবদাসকে পরদিন খুব মারধর করা হইল—সমস্তদিন ঘরে রুদ্ধ করিয়া রাখা হইল। তাহার পর, তাহার জননী যখন ভারী কান্নাকাটি করিতে লাগিলেন, তখন দেবদাসকে ছাড়িয়া দেওয়া হইল। পরদিন ভোরবেলায় সে পলাইয়া আসিয়া পার্বতীর ঘরের জানালার নিকট দাঁড়াইল—ডাকিল,Continue Reading

» তৃতীয় পরিচ্ছেদ

দিনের পর দিন যায়-এ দুটি বালক-বালিকার আমোদের সীমা নাই-সমস্ত দিন ধরিয়া রোদে রোদে ঘুরিয়া বেড়ায়, সন্ধ্যার সময় ফিরিয়া আসিয়া মারধর খায়, আবার সকালবেলায় ছুটিয়া পলাইয়া যায়-আবার তিরস্কার-প্রহার ভোগ করে। রাত্রে নিশ্চিন্ত-নিরুদ্বেগে নিদ্রা যায়; আবার সকালContinue Reading

» বাঙলা বইয়ের দুঃখ

কুমার মুনীন্দ্রদেব রায় মহাশয়ের বক্তৃতা শুনে আর কিছু না হোক অন্ততঃ একটি উপকার আমরা পেয়েছি। ইউরোপের নানা গ্রন্থাগার সম্বন্ধে তিনি যা বললেন হয়ত তার অনেক কথাই আমাদের মনে থাকবে না। কিন্তু আজ তাঁর বক্তৃতা শুনেContinue Reading

» ভাগ্য-বিড়ম্বিত লেখক-সম্প্রদায়

সেদিন গুণে দেখলাম—সত্যিকার সাধনা যাঁরা করেন, সাহিত্য যাঁদের শুধু বিলাস নয়, সাহিত্য যাঁদের জীবনের একমাত্র ব্রত, বাঙলাদেশে তাঁরা ক’জনই বা, সংখ্যা আঙুলে গোণা যায়। এই-সব সাহিত্যসেবী অক্লান্ত পরিশ্রম করে অনাহারে অনিদ্রায় দেশের জন্য দশের জন্যContinue Reading

» সাহিত্যের মাত্রা

কল্যাণীয়েষু,—শ্রাবণের [১৩৪০] ‘পরিচয়’ পত্রিকায় শ্রীমান্‌ দিলীপকুমারকে লিখিত রবীন্দ্রনাথের পত্র—সাহিত্যের মাত্রা—সম্বন্ধে তুমি [‘পরিচারক’-সম্পাদক শ্রীঅতুলানন্দ রায়] আমার অভিমত জানতে চেয়েছ। এ চিঠি ব্যক্তিগত হলেও যখন সাধারণ্যে প্রকাশিত হয়েছে, তখন এরূপ অনুরোধ হয়ত করা যায়, কিন্তু অনেক চার-পাতা-জোড়াContinue Reading

» সাহিত্যের আর একটা দিক

কল্যাণীয়া জাহান-আরা। তোমার বার্ষিক পত্রিকায় সামান্য কিছু একটা লিখে দিতে অনুরোধ করেছ। আমার বর্তমান অসুস্থতার মধ্যে হয়ত সামান্যই একটু লেখা চলে। ভাবছিলাম, সাহিত্যের ধর্ম, রূপ, গঠন, সীমানা, এর তত্ত্ব প্রভৃতি নিয়ে মাঝে মাঝে অল্প-বিস্তর আলোচনাContinue Reading