এমন সময়ে একটা গোল উঠিল যে, কামান, বন্দুক, গোলাগুলি লইয়া, সসৈন্য ফৌজদার বিদ্রোহীদিগের দমনার্থ আসিতেছেন। গোলাগুলির কাছে ঢালসড়কি কি করিবে? বলা বাহুল্য যে, নিমেষমধ্যে সেই জোয়ানের দল অদৃশ্য হইল। যে নিরস্ত্র বীরপুরুষেরা তাঁহাদের আশ্রয়ে থাকিয়া লড়াই ফতে করিতেছি বলিয়া কোলাহল করিতেছিলেন, তাঁহারা বলিলেন, “আমরা ত বারণ করিয়াছিলাম!” এই বলিয়া আর পশ্চাদ্দৃষ্ট না করিয়া ঊর্ধশ্বাসে গৃহাভিমুখে ধাবিত হইলেন। যাহারা দাঙ্গার কোন সংস্রবে ছিল না, তাহারা ‘চোরা গোরুর অপরাধে কপিলার বন্ধন’ সম্ভাবনা দেখিয়া সীতারাম গঙ্গারামকে নানাবিধ গালিগালাজ করিয়া আর্ত্তনাদপূর্বক পলাইতে লাগিল। অতি অল্পকালমধ্যে সেই লোকারণ্য অন্তর্হিত হইল। প্রান্তর যেমন জনশূন্য ছিল, তেমনই জনশূন্য হইল। লোকজনের মধ্যে কেবল সেই বৃক্ষতলে চন্দ্রচূড়, সীতারাম, গঙ্গারাম আরমূর্ছিতাভূতলস্থা শ্রী।

সীতারাম গঙ্গারামকে বলিলেন, “তুমি যে আমার ঘোড়া চুরি করিয়া পলাইয়াছিলে, সে ঘোড়া কি করিলে? বেচিয়া খাইয়াছ?”

গঙ্গারাম হাসিয়া বলিল, “আজ্ঞে না। ঘোড়া মাঠে ছাড়িয়া দিয়াছি-ধরিয়া দিতেছি।”

সী। ধরিয়া, তাহার উপর একবার চড়িয়া পলায়ন কর।

গ। আপনাদের ছাড়িয়া?

সী। তোমার ভগিনীর জন্য ভাবিও না।

গ। আপনাকে ত্যাগ করিয়া আমি যাইব না।

সী। তুমি বড় নদী পার হইয়া যাও। শ্যামপুর চেন ত?

গ। তা চিনি না?

সী। সেইখানে অতি দ্রুতগতি যাও। সেইখানে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ হইবে; নচেৎ তোমার নিস্তার নাই।

গ। আমি আপনাকে ত্যাগ করিয়া যাইব না।

সীতারাম ভ্রূকুটি করিলেন।

গঙ্গারাম সীতারামের ভ্রূকুটি দেখিয়া নিস্তব্ধ হইল; এবং সীতারাম কিছু ধমক চমক করায় ভীত হইয়া অশ্বের সন্ধানে গেল।

চন্দ্রচূড় ঠাকুর সীতারামের ইঙ্গিত পাইয়া তাহার অনুবর্তী হইলেন। শ্রী এদিকে চেতনাযুক্ত হইয়া ধীরে ধীরে উঠিয়া বসিয়া মাথার ঘোমটা টানিয়া দিল। তার পর এদিকে ওদিকে চাহিয়া উঠিয়া দাঁড়াইল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *