🕮
তৃতীয় খণ্ড
- তৃতীয় খণ্ড : বিবাহে বিকল্প
- প্রথম পরিচ্ছেদ : বক ও হংসীর কথা
- দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ : অনন্ত মিশ্র
- তৃতীয় পরিচ্ছেদ : মিশ্র ঠাকুরের নারায়ণস্মরণ
- চতুর্থ পরিচ্ছেদ : মাণিকলাল
- পঞ্চম পরিচ্ছেদ : চঞ্চলকুমারীর পত্র
- ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ : মাতাজীকি জয়!
- সপ্তম পরিচ্ছেদ : নিরাশা
- অষ্টম পরিচ্ছেদ : মেহেরজান
- নবম পরিচ্ছেদ : প্রভুভক্তি
- দশম পরিচ্ছেদ : রসিকা পানওয়ালী
ষষ্ঠ খণ্ড
- ষষ্ঠ খণ্ড - অগ্নির উৎপাদন
- প্রথম পরিচ্ছেদ - অরণিকাষ্ঠ–উর্বশী
- দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ - অরণিকাষ্ঠ–পুরুরবা
- তৃতীয় পরিচ্ছেদ - অগ্নিচয়ন
- চতুর্থ পরিচ্ছেদ - সমিধসংগ্রহ–উদিপুরী
- পঞ্চম পরিচ্ছেদ - সমিধসংগ্রহ–স্বয়ং যম
- ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ - পুনশ্চ সমিধসংগ্রহের জন্য
- সপ্তম পরিচ্ছেদ - সমধিসংগ্রহ–জেব-উন্নিসা
- অষ্টম পরিচ্ছেদ - সব সমান
- নবম পরিচ্ছেদ - সমিধ-সংগ্রহ–দরিয়া
অষ্টম খণ্ড
- অষ্টম খণ্ড - আগুনে কে কে পুড়িল?
- প্রথম পরিচ্ছেদ - বাদশাহের দাহনারম্
- দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ - দাহনে বাদশাহের বড় জ্বালা
- তৃতীয় পরিচ্ছেদ - উদিপুরীর দাহনারম্ভ
- চতুর্থ পরিচ্ছেদ - জেব-উন্নিসার দাহনারম্ভ
- পঞ্চম পরিচ্ছেদ - অগ্নিতে ইন্ধনক্ষেপ–জ্বালা বাড়িল
- ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ - শাহজাদী ভস্ম হইল
- সপ্তম পরিচ্ছেদ - দগ্ধ বাদশাহের জলভিক্ষা
- অষ্টম পরিচ্ছেদ - অগ্নিনির্বাণের পরামর্শ
- নবম পরিচ্ছেদ - অগ্নিতে জলসেক
- দশম পরিচ্ছেদ - অগ্নিনির্বাণকালে উদিপুরী ভস্ম
- একাদশ পরিচ্ছেদ - অগ্নিকাণ্ডে তৃষিতা চাতকী
- দ্বাদশ পরিচ্ছেদ - অগ্নি পুনর্জ্বালিত
- ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ - মবারকের দহানারম্ভ
- চতুর্দশ পরিচ্ছেদ - অগ্নির নূতন স্ফুলিঙ্গ
- পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ - মবারক ও দরিয়া ভস্মীভূত
- ষোড়শ পরিচ্ছেদ - পূর্ণাহুতি–ইষ্টলাভ
- উপসংহার - গ্রন্থকারের নিবেদন
রাত্রি একটু বেশী হইলে যোধপুরী বেগম নির্মলকে উপযুক্ত উপদেশ দিয়া, একজন তুর্কী (তাতারী) প্রহরিণী সঙ্গে দিয়া জেব-উন্নিসার কাছে পাঠাইয়া দিলেন। নির্মল জেব-উন্নিসার কক্ষমধ্যে প্রবেশ করিয়া আতর-গোলাপের, পুষ্পরাশির, এবং তামাকুর সদ্গন্ধে বিমুগ্ধ হইল। নানাবিধ রত্নরাজিখচিত হর্ম্যতলে, শয্যাভরণ এবং গৃহাভরণ দেখিয়া বিস্মিত হইল। সর্বাপেক্ষা জেব-উন্নিসার বিচিত্র, রত্নপুষ্পমিশ্রিত অলঙ্কারপ্রভায়, চন্দ্রসূর্যতুল্য উজ্জ্বল সৌন্দর্যপ্রভায় চমকিত হইল। এই সকলে সজ্জিতা পাপিষ্ঠা জেব-উন্নিসাকে দেবলোকবাসিনী অপ্সরা বলিয়া বোধ হইতে লাগিল।
কিন্তু অপ্সরার তখন চক্ষু ঢুলু ঢুলু; মুখ রক্তবর্ণ; চিত্ত বিভ্রান্ত; দ্রাক্ষাসুধার তখন পূর্ণাধিকার। নির্মলকুমারী তাঁহার সম্মুখে দাঁড়াইলে, তিনি জড়িত রসনায় জিজ্ঞাসা করিলেন, “কে তুই?”
নির্মলকুমারী বলিল, “আমি উদয়পুরের রাজমহিষীর দূতী |”
জে। মোগল বাদশাহের তক্তে তাউস লইয়া যাইতে আসিয়াছিস?
নি। না। চিঠি লইয়া আসিয়াছি।
জে। চিঠি কি হইবে? পুড়াইয়া রোশনাই করিবি?
নি । না। উদিপুরী বেগম সাহেবাকে দিব।
জে। সে বাঁচিয়া আছে, না মরিয়া গিয়াছে?
নি । বোধ হয় বাঁচিয়া আছেন।
জে। না। সে মরিয়া গিয়াছে। এ দাসীটিকে কেহ তাহার কাছে লইয়া যা।
জেব-উন্নিসার উন্মত্ত প্রলাপবাক্যের উদ্দেশ্য যে, ইহাকে যমের বাড়ী পাঠাইয়া দাও। কিন্তু তাতারী প্রহরিণী তাহা বুঝিল না। সাদা অর্থ বুঝিয়া নির্মলকুমারীকে উদিপুরী বেগমের কাছে লইয়া গেল।
সেখানে নির্মল দেখিল, উদিপুরীর চক্ষু উজ্জ্বল, হাস্য উচ্চ, মেজাজ বড় প্রফুল্ল। নির্মল খুব একটা বড় সেলাম করিল। উদিপুরী জিজ্ঞাসা করিলেন, “কে আপনি?”
নির্মল উত্তর করিল, “আমি উদয়পুরের রাজমহিষীর দূতী। চিঠি লইয়া আসিয়াছি |”
উদিপুরী বলিল, “না। না। তুমি ফার্সী মুলুকের বাদশাহ। মোগল বাদশাহের হাত হইতে আমাকে কাড়িয়া লইতে আসিয়াছ |”
নির্মলকুমারী, হাসি সামলাইয়া চঞ্চলের পত্রখানি উদিপুরীর হাতে দিল। উদিপুরী তাহা পড়িবার ভাণ করিয়া বলিতে লাগিলেন, “কি লিখিতেছে? লিখিতেছে, ‘অয় নাজ্নী! পিয়ারী মেরে! তোমার সুরৎ ও দৌলত শুনিয়া একেবারেই বেহোস্ ও দেওয়ানা হইয়াছি। তুমি শীঘ্র আসিয়া আমার কলিজা ঠাণ্ডা করিবে |’ আচ্ছা, তা করিব। হুজুরের সঙ্গে আলবৎ যাইব। আপনি একটু অপেক্ষা করুন–আমি একটু শরাব খাইয়া লই। আপনি একটু শরাব মোলাহেজা করিবেন? আচ্ছা শরাব! ফেরেঙ্গের এল্চি ইহা নজর দিয়াছে। এমন শরাব আপনার মুলুকেও পয়দা হয় না |”
উদিপুরী পিয়ালা মুখে তুলিলেন, সেই অবসরে নির্মলকুমারী বহির্গত হইয়া যোধপুরী বেগমের কাছে উপস্থিত হইল। এবং যোধপুরীর জিজ্ঞাসামত যেমন যেমন ঘটিয়াছিল, তাহা বলিল। শুনিয়া যোধপুরী বেগম হাসিয়া বলিল, “কাল পত্রখানা ঠিক হইয়া পড়িবে। তুমি এই বেলা পলায়ন কর। নচেৎ কাল একটা গণ্ডগোল হইতে পারে। আমি তোমার সঙ্গে একজন বিশ্বাসী খোজা দিতেছি। সে তোমাকে মহালের বাহির করিয়া তোমার স্বামীর শিবিরে পৌঁছাইয়া দিবে। সেখানে যদি তোমার আত্মীয়-স্বজন কাহাকেও পাও, তার সঙ্গে আজই দিল্লীর বাহিরে চলিয়া যাইও। যদি শিবিরে কাহাকেও না পাও, তবে ইহার সঙ্গে দিল্লীর বাহিরে যাইও। তোমার স্বামী বোধ হয়, দিল্লী ছাড়াইয়া কোথাও তোমাদের জন্য অপেক্ষা করিতেছেন। পথে তাঁহার সঙ্গে যদি সাক্ষাৎ না হয়, তাহা হইলে এই খোজাই তোমাকে উদয়পুর পর্যন্ত রাখিয়া আসিবে। খরচ-পত্র তোমার কাছে না থাকে, তবে তাহাও আমি দিতেছি। কিন্তু সাবধান! আমি ধরা না পড়ি |”
নির্মল বলিল, “হজরৎ সে বিষয়ে নিশ্চিন্ত থাকুন। আমি রাজপুতের মেয়ে |”
তখন যোধপুরী বনাসী নামে তাঁহার বিশ্বাসী খোজাকে ডাকাইয়া যাহা করিতে হইবে, তাহা বুঝাইয়া বলিলেন। জিজ্ঞাসা করিলেন, “এখনই যাইতে পারিবে ত?”
বনাসী বলিল, “তা পারিব। কিন্তু বেগম সাহেবার দস্তখাতি একখানা পরওয়ানা না পাইলে এত করিতে সাহস হইতেছে না |”
যোধপুরী তখন বলিলেন, “যেরূপ পরওয়ানা চাহি, লিখাইয়া আন, আমি বেগম সাহেবার দস্তখত করাইতেছি |”
খোজা পরওয়ানা লিখাইয়া আনিল। তাহা সেই তাতারী প্রহরিণীর হাতে দিয়া রাজমহিষী বলিলেন, “ইহাতে বেগম সাহেবার দস্তখত করাইয়া আন |”
প্রহরিণী জিজ্ঞাসা করিল, “যদি জিজ্ঞাসা করে, কিসের পরওয়ানা?”
যোধপুরী বলিলেন, “বলিও, ‘আমার কোতলের পরওয়ানা |’ কিন্তু কালি কলম লইয়া যাইও। আর পাঞ্জা ছেপত করিতে ভুলিও না |”
প্রহরিণী কালি কলম সহিত পরওয়ানা লইয়া গিয়া জেব-উন্নিসার কাছে ধরিল। জেব-উন্নিসা পূর্বভাবাপন্ন জিজ্ঞাসা করিল, “কিসের পরওয়ানা?”
প্রহরিণী বলিল, “আবার কোতলের পরওয়ানা |”
জে। কি চুরি করেছিস্?
প্রহরিণী। হজরৎ উদিপুরী বেগমের পেশওয়াজ।
জে। আচ্ছা করেছিস–কোতলের পর পরিস।
এই বলিয়া বেগম সাহেবা পরওয়ানা দস্তখত করিয়া দিলেন। প্রহরিণী মোহর ছেপত করিয়া লইয়া যোধপুরী বেগমকে দিল। বনসী সেই পরওয়ানা এবং নির্মল কে লইয়া যোধপুরী মহাল হইতে যাত্রা করিল। নির্মল কুমারী অতি প্রফুল্লমনে খোজার সঙ্গে চলিলেন।
কিন্তু সহসা সে প্রফুল্লতা দূর হইল–রঙমহালের ফটকের নিকট আসিয়া খোজা ভীত, স্তম্ভিত হইয়া দাঁড়াইল। বলিল, “কি বিপদ্! পালাও! পালাও!” এই বলিয়া খোজা ঊর্ধ্বশ্বাসে পলাইল।
কিন্তু অপ্সরার তখন চক্ষু ঢুলু ঢুলু; মুখ রক্তবর্ণ; চিত্ত বিভ্রান্ত; দ্রাক্ষাসুধার তখন পূর্ণাধিকার। নির্মলকুমারী তাঁহার সম্মুখে দাঁড়াইলে, তিনি জড়িত রসনায় জিজ্ঞাসা করিলেন, “কে তুই?”
নির্মলকুমারী বলিল, “আমি উদয়পুরের রাজমহিষীর দূতী |”
জে। মোগল বাদশাহের তক্তে তাউস লইয়া যাইতে আসিয়াছিস?
নি। না। চিঠি লইয়া আসিয়াছি।
জে। চিঠি কি হইবে? পুড়াইয়া রোশনাই করিবি?
নি । না। উদিপুরী বেগম সাহেবাকে দিব।
জে। সে বাঁচিয়া আছে, না মরিয়া গিয়াছে?
নি । বোধ হয় বাঁচিয়া আছেন।
জে। না। সে মরিয়া গিয়াছে। এ দাসীটিকে কেহ তাহার কাছে লইয়া যা।
জেব-উন্নিসার উন্মত্ত প্রলাপবাক্যের উদ্দেশ্য যে, ইহাকে যমের বাড়ী পাঠাইয়া দাও। কিন্তু তাতারী প্রহরিণী তাহা বুঝিল না। সাদা অর্থ বুঝিয়া নির্মলকুমারীকে উদিপুরী বেগমের কাছে লইয়া গেল।
সেখানে নির্মল দেখিল, উদিপুরীর চক্ষু উজ্জ্বল, হাস্য উচ্চ, মেজাজ বড় প্রফুল্ল। নির্মল খুব একটা বড় সেলাম করিল। উদিপুরী জিজ্ঞাসা করিলেন, “কে আপনি?”
নির্মল উত্তর করিল, “আমি উদয়পুরের রাজমহিষীর দূতী। চিঠি লইয়া আসিয়াছি |”
উদিপুরী বলিল, “না। না। তুমি ফার্সী মুলুকের বাদশাহ। মোগল বাদশাহের হাত হইতে আমাকে কাড়িয়া লইতে আসিয়াছ |”
নির্মলকুমারী, হাসি সামলাইয়া চঞ্চলের পত্রখানি উদিপুরীর হাতে দিল। উদিপুরী তাহা পড়িবার ভাণ করিয়া বলিতে লাগিলেন, “কি লিখিতেছে? লিখিতেছে, ‘অয় নাজ্নী! পিয়ারী মেরে! তোমার সুরৎ ও দৌলত শুনিয়া একেবারেই বেহোস্ ও দেওয়ানা হইয়াছি। তুমি শীঘ্র আসিয়া আমার কলিজা ঠাণ্ডা করিবে |’ আচ্ছা, তা করিব। হুজুরের সঙ্গে আলবৎ যাইব। আপনি একটু অপেক্ষা করুন–আমি একটু শরাব খাইয়া লই। আপনি একটু শরাব মোলাহেজা করিবেন? আচ্ছা শরাব! ফেরেঙ্গের এল্চি ইহা নজর দিয়াছে। এমন শরাব আপনার মুলুকেও পয়দা হয় না |”
উদিপুরী পিয়ালা মুখে তুলিলেন, সেই অবসরে নির্মলকুমারী বহির্গত হইয়া যোধপুরী বেগমের কাছে উপস্থিত হইল। এবং যোধপুরীর জিজ্ঞাসামত যেমন যেমন ঘটিয়াছিল, তাহা বলিল। শুনিয়া যোধপুরী বেগম হাসিয়া বলিল, “কাল পত্রখানা ঠিক হইয়া পড়িবে। তুমি এই বেলা পলায়ন কর। নচেৎ কাল একটা গণ্ডগোল হইতে পারে। আমি তোমার সঙ্গে একজন বিশ্বাসী খোজা দিতেছি। সে তোমাকে মহালের বাহির করিয়া তোমার স্বামীর শিবিরে পৌঁছাইয়া দিবে। সেখানে যদি তোমার আত্মীয়-স্বজন কাহাকেও পাও, তার সঙ্গে আজই দিল্লীর বাহিরে চলিয়া যাইও। যদি শিবিরে কাহাকেও না পাও, তবে ইহার সঙ্গে দিল্লীর বাহিরে যাইও। তোমার স্বামী বোধ হয়, দিল্লী ছাড়াইয়া কোথাও তোমাদের জন্য অপেক্ষা করিতেছেন। পথে তাঁহার সঙ্গে যদি সাক্ষাৎ না হয়, তাহা হইলে এই খোজাই তোমাকে উদয়পুর পর্যন্ত রাখিয়া আসিবে। খরচ-পত্র তোমার কাছে না থাকে, তবে তাহাও আমি দিতেছি। কিন্তু সাবধান! আমি ধরা না পড়ি |”
নির্মল বলিল, “হজরৎ সে বিষয়ে নিশ্চিন্ত থাকুন। আমি রাজপুতের মেয়ে |”
তখন যোধপুরী বনাসী নামে তাঁহার বিশ্বাসী খোজাকে ডাকাইয়া যাহা করিতে হইবে, তাহা বুঝাইয়া বলিলেন। জিজ্ঞাসা করিলেন, “এখনই যাইতে পারিবে ত?”
বনাসী বলিল, “তা পারিব। কিন্তু বেগম সাহেবার দস্তখাতি একখানা পরওয়ানা না পাইলে এত করিতে সাহস হইতেছে না |”
যোধপুরী তখন বলিলেন, “যেরূপ পরওয়ানা চাহি, লিখাইয়া আন, আমি বেগম সাহেবার দস্তখত করাইতেছি |”
খোজা পরওয়ানা লিখাইয়া আনিল। তাহা সেই তাতারী প্রহরিণীর হাতে দিয়া রাজমহিষী বলিলেন, “ইহাতে বেগম সাহেবার দস্তখত করাইয়া আন |”
প্রহরিণী জিজ্ঞাসা করিল, “যদি জিজ্ঞাসা করে, কিসের পরওয়ানা?”
যোধপুরী বলিলেন, “বলিও, ‘আমার কোতলের পরওয়ানা |’ কিন্তু কালি কলম লইয়া যাইও। আর পাঞ্জা ছেপত করিতে ভুলিও না |”
প্রহরিণী কালি কলম সহিত পরওয়ানা লইয়া গিয়া জেব-উন্নিসার কাছে ধরিল। জেব-উন্নিসা পূর্বভাবাপন্ন জিজ্ঞাসা করিল, “কিসের পরওয়ানা?”
প্রহরিণী বলিল, “আবার কোতলের পরওয়ানা |”
জে। কি চুরি করেছিস্?
প্রহরিণী। হজরৎ উদিপুরী বেগমের পেশওয়াজ।
জে। আচ্ছা করেছিস–কোতলের পর পরিস।
এই বলিয়া বেগম সাহেবা পরওয়ানা দস্তখত করিয়া দিলেন। প্রহরিণী মোহর ছেপত করিয়া লইয়া যোধপুরী বেগমকে দিল। বনসী সেই পরওয়ানা এবং নির্মল কে লইয়া যোধপুরী মহাল হইতে যাত্রা করিল। নির্মল কুমারী অতি প্রফুল্লমনে খোজার সঙ্গে চলিলেন।
কিন্তু সহসা সে প্রফুল্লতা দূর হইল–রঙমহালের ফটকের নিকট আসিয়া খোজা ভীত, স্তম্ভিত হইয়া দাঁড়াইল। বলিল, “কি বিপদ্! পালাও! পালাও!” এই বলিয়া খোজা ঊর্ধ্বশ্বাসে পলাইল।