মাণিকলালের কাছে নির্মল শুনিল যে, চঞ্চলকুমারী রাজমহিষী হইলেন। কিন্তু কবে বিবাহ হইল, বিবাহ হইয়াছে কি না, তাহা মাণিকলাল কিছুই বলিতে পারিল না। নির্মল তখন স্বয়ং চঞ্চলকুমারীকে দেখিতে আসিলেন।
অনেক দিনের পর নির্মলকে দেখিয়া চঞ্চলকুমারী অত্যন্ত আনন্দিতা হইলেন। সে দিন নির্মলকে যাইতে দিলেন না। রূপনগর পরিত্যাগ করার পর যাহা যাহা ঘটিয়াছিল, তাহা পরস্পর পরস্পরের কাছে সবিস্তারে বলিলেন। নির্মলের সুখ শুনিয়া চঞ্চলকুমারী আহ্লাদিতা হইলেন। সুখ–কেন না, মাণিকলাল রাণার কাছে অনেক পুরস্কার পাইয়াছিলেন–অনেক টাকা হইয়াছে; তার পর, মাণিকলাল রাণার অনুগ্রহে সৈন্যমধ্যে অতি উচ্চ পদে প্রতিষ্ঠিত হইয়াছেন; এবং রাজসম্মানে গৌরবান্বিত হইয়াছেন; নির্মলের উচ্চ অট্টালিকা, ধন-দৌলত, দাস-দাসী সব হইয়াছে, এবং মাণিকলাল তাঁহার কেনা গোলাম হইয়াছে। পক্ষান্তরে, নির্মল চঞ্চলকুমারীর দু:খ শুনিয়া অতিশয় মর্মাহত হইল। এবং চঞ্চলকুমারীর পিতা-মাতা, রাজসিংহ এবং চঞ্চলকুমারীর উপর অতিশয় বিরক্ত হইল। চঞ্চলকুমারীকে সে মহারাণী বলিয়া ডাকিতে অস্বীকৃত হইল–এবং মহারাণার সাক্ষাৎ পাইলে, তাঁহাকে দুই এক শুনাইয়া দিবে, প্রতিজ্ঞা করিল। চঞ্চলকুমারী বলিল, “সে সকল এখন থাক। আমার সঙ্গে আমার একটি চেনা লোক নাই। আত্মীয়-স্বজন কেহ নাই। আমি এ অবস্থায় এখানে থাকিতে পারি না। যদি ভগবান তোমাকে মিলাইয়াছেন, তবে আমি তোমাকে ছাড়িব না। তোমাকে আমার কাছে থাকিতে হইবে |”
শুনিয়া, প্রথমে নির্মলের বোধ হইল, যেন বুকের উপর পাহাড় ভাঙ্গিয়া পড়িল। এই সে সবে স্বামী পাইয়াছে–নূতন প্রণয়, নূতন সুখ, এ সব ছাড়িয়া কি চঞ্চলকুমারীর কাছে আসিয়া থাকা যায়? নির্মলকুমারী হঠাৎ সম্মত হইতে পারিল না–কোন মিছা ওজর করিল না–কিন্তু আসল কথা ভাঙ্গিয়াও বলিতে পারিল না। বলিল, “ও বেলা বলিব |”
চঞ্চলকুমারীর চক্ষে একটু জল আসিল; মনে মনে বলিল, “নির্মল ও আমায় ত্যাগ করিল! হে ভগবান! তুমি যেন আমায় ত্যাগ করিও না |” তার পর চঞ্চলকুমারী একটু হাসিল, বলিল, “নির্মল , তুমি আমার জন্য একা পদব্রজে রূপনগর হইতে চলিয়া আসিয়া মরিতে বসিয়াছিলে! আর আজ! আজ তুমি স্বামী পাইয়াছ!”
নির্মল অধোবদন হইল। আপনাকে শত ধিক্কার দিল; বলিল, “আমি ও বেলা আসিব, যাহাকে মালিক করিয়াছি, তাহাকে একবার জিজ্ঞাসা করিতে হইবে। আর একটা মেয়ে ঘাড়ে পড়িয়াছে, তাহার একটা ব্যবস্থা করিতে হইবে |”
চঞ্চল। মেয়ে না হয়, এখানে আনিলে?
নির্মল । সে খ্যান্-খ্যান্ প্যান্-প্যান্ এখানে কাজ নাই। একটা পাতান রকম পিসী আছে–সেটাকে ডাকিয়া বাড়ীতে বসাইয়া আসিব।
এই সকল পরামর্শের পর নির্মলকুমারী বিদায় লইল। গৃহে গিয়া মাণিকলালকে সমস্ত বৃত্তান্ত জানাইল। মাণিকলালও নির্মলকে বিদায় দিতে বড় কষ্ট বোধ করিল। কিন্তু সে নিতান্ত প্রভুভক্ত, আপত্তি করিল না। পিসীমা আসিয়া কন্যাটির ভার লইলেন।
অনেক দিনের পর নির্মলকে দেখিয়া চঞ্চলকুমারী অত্যন্ত আনন্দিতা হইলেন। সে দিন নির্মলকে যাইতে দিলেন না। রূপনগর পরিত্যাগ করার পর যাহা যাহা ঘটিয়াছিল, তাহা পরস্পর পরস্পরের কাছে সবিস্তারে বলিলেন। নির্মলের সুখ শুনিয়া চঞ্চলকুমারী আহ্লাদিতা হইলেন। সুখ–কেন না, মাণিকলাল রাণার কাছে অনেক পুরস্কার পাইয়াছিলেন–অনেক টাকা হইয়াছে; তার পর, মাণিকলাল রাণার অনুগ্রহে সৈন্যমধ্যে অতি উচ্চ পদে প্রতিষ্ঠিত হইয়াছেন; এবং রাজসম্মানে গৌরবান্বিত হইয়াছেন; নির্মলের উচ্চ অট্টালিকা, ধন-দৌলত, দাস-দাসী সব হইয়াছে, এবং মাণিকলাল তাঁহার কেনা গোলাম হইয়াছে। পক্ষান্তরে, নির্মল চঞ্চলকুমারীর দু:খ শুনিয়া অতিশয় মর্মাহত হইল। এবং চঞ্চলকুমারীর পিতা-মাতা, রাজসিংহ এবং চঞ্চলকুমারীর উপর অতিশয় বিরক্ত হইল। চঞ্চলকুমারীকে সে মহারাণী বলিয়া ডাকিতে অস্বীকৃত হইল–এবং মহারাণার সাক্ষাৎ পাইলে, তাঁহাকে দুই এক শুনাইয়া দিবে, প্রতিজ্ঞা করিল। চঞ্চলকুমারী বলিল, “সে সকল এখন থাক। আমার সঙ্গে আমার একটি চেনা লোক নাই। আত্মীয়-স্বজন কেহ নাই। আমি এ অবস্থায় এখানে থাকিতে পারি না। যদি ভগবান তোমাকে মিলাইয়াছেন, তবে আমি তোমাকে ছাড়িব না। তোমাকে আমার কাছে থাকিতে হইবে |”
শুনিয়া, প্রথমে নির্মলের বোধ হইল, যেন বুকের উপর পাহাড় ভাঙ্গিয়া পড়িল। এই সে সবে স্বামী পাইয়াছে–নূতন প্রণয়, নূতন সুখ, এ সব ছাড়িয়া কি চঞ্চলকুমারীর কাছে আসিয়া থাকা যায়? নির্মলকুমারী হঠাৎ সম্মত হইতে পারিল না–কোন মিছা ওজর করিল না–কিন্তু আসল কথা ভাঙ্গিয়াও বলিতে পারিল না। বলিল, “ও বেলা বলিব |”
চঞ্চলকুমারীর চক্ষে একটু জল আসিল; মনে মনে বলিল, “নির্মল ও আমায় ত্যাগ করিল! হে ভগবান! তুমি যেন আমায় ত্যাগ করিও না |” তার পর চঞ্চলকুমারী একটু হাসিল, বলিল, “নির্মল , তুমি আমার জন্য একা পদব্রজে রূপনগর হইতে চলিয়া আসিয়া মরিতে বসিয়াছিলে! আর আজ! আজ তুমি স্বামী পাইয়াছ!”
নির্মল অধোবদন হইল। আপনাকে শত ধিক্কার দিল; বলিল, “আমি ও বেলা আসিব, যাহাকে মালিক করিয়াছি, তাহাকে একবার জিজ্ঞাসা করিতে হইবে। আর একটা মেয়ে ঘাড়ে পড়িয়াছে, তাহার একটা ব্যবস্থা করিতে হইবে |”
চঞ্চল। মেয়ে না হয়, এখানে আনিলে?
নির্মল । সে খ্যান্-খ্যান্ প্যান্-প্যান্ এখানে কাজ নাই। একটা পাতান রকম পিসী আছে–সেটাকে ডাকিয়া বাড়ীতে বসাইয়া আসিব।
এই সকল পরামর্শের পর নির্মলকুমারী বিদায় লইল। গৃহে গিয়া মাণিকলালকে সমস্ত বৃত্তান্ত জানাইল। মাণিকলালও নির্মলকে বিদায় দিতে বড় কষ্ট বোধ করিল। কিন্তু সে নিতান্ত প্রভুভক্ত, আপত্তি করিল না। পিসীমা আসিয়া কন্যাটির ভার লইলেন।