(সুন্দরী)

কেন না হইলি তুই, যমুনার জল,
রে প্রাণবল্লভ!
কিবা দিবা কিবা রাতি,    কূলেতে আঁচল পাতি
শুইতাম শুনিবারে, তোর মৃদুরব।।
রে প্রাণবল্লভ!

কেন না হইলি তুই, যমুনাতরঙ্গ,
মোর শ্যামধন!
দিবারাতি জলে পশি,    থাকিতাম কালো শশি,
করিবারে নিত্য তোর, নৃত্য দরশন ।।
ওহে শ্যামধন!

কেন না হইলি, তুই, মলয় পবন,
ওহে ব্রজরাজ!
আমার অঞ্চল ধরি,       সতত খেলিতে হরি,
নিশ্বাসে যাইতে মোর, হৃদয়ের মাঝ।।
ওহে ব্রজরাজ!

কেন না হইলি তুই, কাননকুসুম,
রাধাপ্রেমাধার।
না ছুঁতেম অন্য ফুলে,    বাঁধিতাম তোরে চুলে,
চিকণ গাঁথিয়া মালা, পরিতাম হার।।
মোর প্রাণাধার!

কেন না হইলে তুমি, চাঁদের কিরণ,
ওহে হৃষীকেশ!
বাতায়নে বিষাদিনী,     বসিতে যবে গোপিনী,
বাতায়নপথে তুমি, লভিতে প্রবেশ।।
আমার প্রাণেশ!

কেন না হইলে তুমি, চিকণ বসন,
পীতাম্বর হরি!
নীলবাস তেয়াগিয়ে,   তোমারে পরি কালিয়ে,
রাখিতাম যত্ন কর্যে  হৃদয় উপরি ।।
পীতাম্বর হরি!

কেন না হইলে শ্যাম, যেখানে যা আছে,
সংসারে সুন্দর।
ফিরাতেম আঁখি যথা,      দেখিতে পেতেম তথা,
মনোহর এ সংসারে, রাধামনোহর।
শ্যামল সুন্দর!
(সুন্দর)

কেন না হইনু আমি, কপালের দোষে,
যমুনার জল।
লইয়া কম কলসী,       সে জল মাঝারে পশি,
হাসিয়া ফুটিত আসি, রাধিকা-কমল-
যৌবনেতে ঢল ঢল।।

কেন না হইনু আমি, তোমার তরঙ্গ,
তপননন্দনি!
রাধিকা আসিলে জলে, নাচিয়া হিল্লোল ছলে,
দোলাতাম দেহ তার, নবীন নলিনী-
যমুনাজলহংসিনী।।

কেন না হইনু আমি, তোর অনুরূপী
মলয় পবন!
ভ্রমিতাম  কুতূহলে,  রাধার কুন্তল দলে,
কহিতাম কানে কানে, প্রণয় বচন-
সে আমার প্রাণধন।।

কেন না হইনু, হায়! কুসুমের দাম,
কণ্ঠের ভূষণ।
এক নিশা স্বর্গ সুখে,  বঞ্চিয়া রাধার বুকে,
ত্যজিতাম নিশি গেলে জীবন যাতন-
মেখে শ্রীঅঙ্গচন্দন।।

কেন না হইনু আমি, চন্দ্রকরলেখা,
রাধার বরণ।
রাধার শরীরে থেকে,    রাধারে ঢাকিয়ে রেখে,
ভুলাতাম রাধারূপে,    অন্যজনমন-
পর ভুলান কেমন?

কেন না হইনু আমি চিকণ বসন,
দেহ আবরণ।
তোমার অঙ্গেতে থেকে,  অঙ্গের চন্দন মেখে,
অঞ্চল হইয়ে দুলে, ছুঁতেম চরণ,-
চুম্বি ও চাঁদবদন।।

কেন না হইনু আমি, যেখানে যা আছে,
সংসারে সুন্দর।
কে হতে না অভিলাষে, রাধা যাহা ভালবাসে,
কে মোহিতে নাহি চাহে, রাধার অন্তর-
প্রেম-সুখরত্নাকর?

Leave a Reply