ইসলাম এবং কুফরীর দন্দ্ব ঐ দিন থেকে শুরু হয়েছে যেদিন ইবলীস আল্লাহ্‌র নির্দেশ অমান্য করে আদম (আ.)-কে সেজদা করতে অস্বীকার করেছিল এবং বিতাড়িত হয়েছিল, বিতাড়িত হওয়ার পর সে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিল যে,

قَالَ فَبِمَا أَغْوَيْتَنِي لَأَقْعُدَنَّ لَهُمْ صِرَاطَكَ الْمُسْتَقِيمَ ١٦ ثُمَّ لَآتِيَنَّهُمْ مِنْ بَيْنِ أَيْدِيهِمْ وَمِنْ خَلْفِهِمْ وَعَنْ أَيْمَانِهِمْ وَعَنْ شَمَائِلِهِمْ ۖ وَلَا تَجِدُ أَكْثَرَهُمْ شَاكِرِينَ  ١٧

অর্থ— সে বলল, আপনি আমাকে যেমন উদ্‌ভ্রান্ত করেছেন, আমিও অবশ্যই তাদের জন্য আপনার সরল পথে বসে থাকব। এরপর তাদের নিকট আসব তাদের সামনের দিক থেকে, পেছন দিক থেকে, ডান দিক থেকে এবং বাম দিক থেকে। (সূরা আ’রাফ-১৬,১৭)

ইবলীসের এ প্রতীজ্ঞার পর থেকে মানব ইতিহসের রাত ও দিন কখনো ইসলাম ও কুফুরের দন্দ্ব থেকে মুক্ত ছিল না, কখোনো এ দন্দ্ব নূহ (আ.) এবং তাঁর কাউমের সরদারদের মাঝে ছিল, কখনো ইবরাহীম (আ.) এবং নমরূদের মাঝে ছিল, আবার কখনো হুদ (আ.) এবং তাঁর কাউমের সরদারদের মাঝে ছিল, আবার কখনো সালেহ (আঃ) এবং তাঁর কাউমের সরদারদের মাঝে ছিল, সর্বশেষে এ দন্দ্ব মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং কোরাইশদের সরদারদের মাঝে সংঘটিত হয়েছিল।

আল্লাহ্ তা’য়ালা কোরআ’ন মাজীদে সম্মানীত নবীগণের সাথে কাফের নেতাদের দন্দ্বের কথা বিভিন্ন স্থানে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন, যা অধ্যায়নে কাফেরদের ইসলামের সাথে শত্রুতা, সত্যের প্রতি উগ্রমনভাব, ঈমানদারদের বিরুদ্ধে যোগসাজেস এবং চক্রান্ত, ঈমানদারদের প্রতি যুলম, তাদেরকে কষ্ট দেয়া, তাদেরকে পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার পরিকল্পনা, এর বিপরীতে ঈমানদারগণের দৃঢ়মনোভাব এবং ধৈর্য, ঈমানদারদের জন্য আল্লাহ্‌র সাহায্য এবং সংরক্ষণ, সর্বশেষে কাফেরদের দৃষ্টান্তমূলক পরিণতি ইত্যাদি থেকে বস্তবতাকে বুঝা অত্যন্ত সহজ হয়ে যায়। এবাস্তব সত্য থেকে দু’টি বিষয় স্পষ্ট হয়—

১ম, ইসলাম এবং কুফরের মাঝে দন্দ্ব আবহমানকাল থেকেই শুরু হয়েছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকবে, আল্লামা ইকবাল বলেছেন—

ইসলাম ও জাহেলিয়াতের দন্দ্ব আবহমানকাল থেকে আজ পর্যন্ত চলে আসছে, মোস্তফার (ইসলামের) আলোর সাথে আবু লাহাবের দন্দ্ব।

২য়, ইসলাম এবং কুফরের মাঝের দন্দ্বের মূল কারণ আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান আনা।

“তা’লিমাত কোরআ’ন” বিষয়টি এত ব্যাপক যে, কয়েকশ পৃষ্ঠার গ্রন্থে তা আলোচনা করা সম্ভব ছিল না, আমি বর্তমান আবস্থার আলোকে শুধু ঐ সমস্থ শিক্ষাগুলোর উপরে আলোকপাত করার চেষ্টা করেছি যে, যে বিষয়গুলো ইসলামের শত্রুরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঠাট্টা বিদ্রুপের নিদর্শনে পরিণত করেছে। উল্লেখিত শিক্ষাগুলো ছাড়াও আক্বীদা, গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ এবং নিষেধাবলীর উল্লেখ করা হয়েছে, আশা করছি এতে এ গ্রন্থ থেকে উপকার হাসিলে আরো অধিক সুবিধা হবে, ইন্‌শাআল্লাহ্।

এগ্রন্থের ভাল দিকগুলো আল্লাহ্ তা’য়ালার দয়া এবং আনুগ্রহের ফল, আর ভুলভ্রান্তিসমূহ আমার নিজের গোনাহের কারণে। আমি আল্লাহ্ তা’য়ালার নিকট দোয়া করছি যে, তিনি যেন আমার জীবনের গোনাহ এবং অকল্যাণসমূহ স্বীয় দয়া ও অনুগ্রহে আবৃত করে দেন, নিশ্চয় তিনি অত্যন্ত অনুগ্রহকারী এবং ক্ষমাশীল ও দয়াকারী।

এ গ্রন্থ প্রস্তুতির ব্যাপারে সহযোগিতাকারী উলামাগণের জন্য উদার মনে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি যে, আল্লাহ্ তাদের ইলম ও আমলে বরকত দিন, দুনিয়া এবং আখেরাতে তাদেরকে তাঁর অসীম রহমতে রহম করুন আমীন!

বিজ্ঞজনের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা যে, তাদের চোখে এ গ্রন্থের যেখানেই কোন ভুল দৃষ্টি গোচর হবে উদার চিত্তে তারা তা আমাকে অবগত করাবেন, আমি তাদের জন্য দোয়া করব এবং পরবর্তী সংস্করণে তা সংশোধন করে আমি আনন্দ উপভোগ করব। (আল্লাহ্ তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দিন।)

আমার মোহতারাম বন্ধু জনাব সেকান্দার আব্বাসী সাহেব, (হায়দারাবাদ সিন্দ)-এর জন্য বিশেষ কৃতজ্ঞাতার হকদার এজন্য যে, সে তাফহিমুসসুন্নাহ্ সিরিজের সমস্ত বই অত্যন্ত কষ্ট স্বীকার করে এবং যথেষ্ট যত্নসহকারে শুধু সিন্ধী ভাষায় অনুবাদই করে নি বরং তার প্রকাশনা এবং বণ্টেনের দায়িত্বও পালন করছে, আল্লাহ্ তার সুস্থতা এবং জীবনে বরকত দিন, তিনি তাকে আরো একনিষ্ঠ এবং দৃঢ়তার সাথে হাদীস প্রচার এবং প্রসারের তাওফিক দিন, আমীন!

ভাই আযীয খালেদ মাহমুদ কিলানী, হাদীস পাবলিকেশন্সের ম্যানেজার এবং ভাই আযীয হারুনুর রশীদ কিলানী ডিজাইনার, তারা তাদের নিজ দায়িত্বের চেয়ে আরো অধিক গুরুত্ব দিয়ে নিষ্ঠার সাথে কাজ করায় আমার অগ্রহ আরো জোরদার হয়েছে। এ দু’ভাইয়ের রাতদিনের পরিশ্রমে গ্রন্থসমূহ যথাযথ নিয়মে প্রকাশিত হচ্ছে। আল্লাহ্ তা’য়ালা এ ভাতৃদ্বয়কে দুনিয়া এবং আখেরাতে কল্যাণ দান করুন। তাদের ধন-সম্পদ এবং পরিবার পরিজনে বরকত দান করুন। আমীন!

সাউদী আরবে তাফহিমুসসুন্নাহ্ প্রকাশ ও প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী হাফেজ আবেদ এলাহী সাহেব (মুদীর, মাক্তাবা বাইতুস্‌সালাম) অত্যন্ত কষ্ট স্বীকার করে এ দায়িত্বে আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন, দোয়া করছি যে, আল্লাহ্ তাঁকে দুনিয়া ও আখেরাতে উত্তম প্রতিদান দান করুন। আমীন!

আমি আমার ঐ সমস্ত বন্ধুদেরর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি যারা তাফহিমুস্‌সুন্নার প্রকাশনার জন্য গত বিশ বছর ধরে অত্যন্ত নিষ্ঠা এবং দৃঢ়তার সাথে ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে, বিশেষ করে প্রিয় পাঠকগণেরও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি যারা এহাদীস গ্রন্থসমূহ থেকে উপকৃত হওয়ার পর আমার জন্য কল্যাণের দোয়া করছে, আল্লাহ্ তাদের সকলকে দুনিয়া ও আখেরাতে উচ্চ মর্যাদা দান করুন। আমীন!

হে বিশ্ব প্রতিপালক! হাদীস প্রচারণার এ ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাকে তুমি অনুগ্রহ করে কবুল কর, এটাকে তুমি আমার জন্য, আমার পিতা-মাতার জন্য, অনুবাদকদের জন্য, প্রকাশকদের জন্য, সহযোগিতাকারীদের জন্য, পাঠকদের জন্য, সাদকা জারিয়া কর এবং ঐ দিন তোমার রহমত হাসিলের যারিয়া কর যেদিন তোমার রহমত ব্যতীত মাগফিরাতের আর কোন রাস্তা থাকবে না।

وصلى الله على نبينا محمد صلى الله عليه وسلم وآله واصحابه اجمعين، برحمتك يا ارحم الراحمين.

১৬ রবিউস্‌সানী ১৪২৭হিঃ,

মোতাবেক ১৪ মে ২০০৬ইং।

মোহাম্মদ ইকবাল কিলানী (আফাল্লাহু আনহু)

রিয়াদ, সাউদী আরব