প্রথম পরিচ্ছেদ
হরিদ্রাগ্রামে এক ঘর বড় জমীদার ছিলেন। জমীদার বাবুর নাম কৃষ্ণকান্ত রায়। কৃষ্ণকান্ত রায় বড় ধনী; তাঁহার জমীদারীর মুনাফা প্রায় দুই লক্ষ টাকা। এই বিষয়টা তাঁহার ও তাঁহার ভ্রাতা রামকান্ত রায়ের উপার্জিত। উভয় ভ্রাতা একত্রিত হইয়াContinue Reading
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
ব্রহ্মানন্দ স্নানাহার করিয়া নিদ্রার উদ্যোগে ছিলেন, এমত সময়ে বিস্ময়াপন্ন হইয়া দেখিলেন যে, হরলাল রায়। হরলাল আসিয়া তাহার শিওরে বসিলেন। ব্র। সে কি, বড় বাবু যে? কখন বাড়ী এলে? হ। বাড়ী এখনও যাই নাই। ব্র। একেবারেContinue Reading
তৃতীয় পরিচ্ছেদ
সন্ধ্যার পর ব্রহ্মানন্দের উইল লিখিয়া ফিরিয়া আসিলেন। দেখিলেন যে, হরলাল আসিয়া বসিয়া আছেন। হরলাল জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি হইল?” ব্রহ্মানন্দ একটু কবিতাপ্রিয়। তিনি কষ্টে হাসিয়া বলিলেন, “মনে করি চাঁদা ধরি হাতে দিই পেড়ে। বাবলা গাছে হাতContinue Reading
চতুর্থ পরিচ্ছেদ
ঐ দিবস রাত্রি আটটার সময়ে কৃষ্ণকান্ত রায় আপন শয়নমন্দিরে পর্যঙ্কে বসিয়া উপাধানে পৃষ্ঠ রক্ষা করিয়া, সটকায় তামাক টানিতেছিলেন এবং সংসারে একমাত্র ঔষধ–মাদকমধ্যে শ্রেষ্ঠ–অহিফেন ওরফে আফিমের নেশায় মিঠে রকম ঝিমাইতেছিলেন। যেন হরলাল তিন টাকা তের আনাContinue Reading
পঞ্চম পরিচ্ছেদ
পরদিন প্রাতে রোহিণী আবার রাঁধিতে বসিয়াছে, আবার সেখানে হরলাল উঁকি মারিতেছে। ভাগ্যশঃ ব্রহ্মানন্দ বাড়ী ছিল না–নহিলে কি একটা মনে করিতে পারিত। হরলাল ধীরে ধীরে রোহিণীর কাছে গেল–রোহিণী বড় চাহিয়া দেখে না। হরলাল বলিল, “চাহিয়া দেখ,Continue Reading
ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ
তুমি, বসন্তের কোকিল! প্রাণ ভরিয়া ডাক, তাহাতে আমার কিছুমাত্র আপত্তি নাই, কিন্তু তোমার প্রতি আমার বিশেষ অনুরোধ যে, সময় বুঝিয়া ডাকিবে। সময়ে অসময়ে, সকল সময়ে ডাকাডাকি ভাল নহে। দেখ, আমি বহু সন্ধানে, লেখনী মসীপাত্র ইত্যাদিরContinue Reading
সপ্তম পরিচ্ছেদ
বারুণী পুষ্করিণী লইয়া আমি বড় গোলে পড়িলাম–আমি তাহা বর্ণনা করিয়া উঠিতে পারিতেছি না। পুষ্করিণীটি অতি বৃহৎ–নীল কাচের আয়না মত ঘাসের ফ্রেমে আঁটা পড়িয়া আছে। সেই ঘাসের ফ্রেমের পরে আর একখানা ফ্রেম—বাগানের ফ্রেম,–পুষ্করিণীর চারি পাশে বাবুদেরContinue Reading
অষ্টম পরিচ্ছেদ
রোহিণী সকাল সকাল পাককার্য সমাধা করিয়া, ব্রহ্মানন্দকে ভোজন করাইয়া, আপনি অনাহারে শয়নগৃহে দ্বার রুদ্ধ করিয়া গিয়া শয়ন করিল। নিদ্রার জন্য নহে–চিন্তার জন্য। তুমি দার্শনিক এবং বিজ্ঞানবিদগণের মতামত ক্ষণকাল পরিত্যাগ করিয়া, আমার কাছে একটা মোটা কথাContinue Reading
নবম পরিচ্ছেদ
সেই অবধি নিত্য কলসী কক্ষে রোহিণী বারুণী পুষ্করিণীতে জল আনিতে যায়; নিত্য কোকিল ডাকে, নিত্য সেই গোবিন্দলালকে পুষ্পকাননমধ্যে দেখিতে পায়, নিত্য সুমতি কুমতিতে সন্ধিবিগ্রহ উভয়ই ঘটনা হয়। সুমতি কুমতির বিবাদ বিসংবাদ মনুষ্যের সহনীয়; কিন্তু সুমতিContinue Reading
দশম পরিচ্ছেদ
সেই রাত্রের প্রভাতে শয্যাগৃহে মুক্ত বাতায়নপথে দাঁড়াইয়া, গোবিন্দলাল। ঠিক প্রভাত হয় নাই–কিছু বাকি আছে। এখনও গৃহপ্রাঙ্গনস্থ কামিনীকুঞ্জে, কোকিল প্রথম ডাক ডাকে নাই। কিন্তু দোয়েল গীত আরম্ভ করিয়াছে। ঊষার শীতল বাতাস উঠিয়াছে–গোবিন্দলাল বাতায়নপথ মুক্ত করিয়া, সেইContinue Reading
একাদশ পরিচ্ছেদ
গোবিন্দলাল কৃষ্ণকান্ত রায়ের সদর কাছারিতে দর্শন দিলেন। কৃষ্ণকান্ত প্রাতঃকালেই কাছারিতে বসিয়াছিলেন। গদির উপর মসনকদ করিয়া বসিয়া, সোণার আলবোলায় অম্বুরি তামাকু চড়াইয়া, মর্ত্যলোকে স্বর্গের অনুকরণ করিতেছিলেন। এক পাশে রাশি রাশি দপ্তরে বাঁধা চিঠা, খতিয়ান, দাখিলা, জমাওয়াশীল,Continue Reading
দ্বাদশ পরিচ্ছেদ
গোবিন্দলাল অন্তঃপুরে আসিয়া দেখিলেন যে, ভ্রমর, রোহিণীকে লইয়া চুপ করিয়া বসিয়া আছে। ভাল কথা বলিবার ইচ্ছা, কিন্তু পাছে এ দায় সম্বন্ধে ভাল কথা বলিলেও রোহিণীর কান্না আসে, এ জন্য তাহাও বলিতে পারিতেছে না। গোবিন্দলাল আসিলেনContinue Reading
ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ
ভ্রমর শ্বশুরকে কোন প্রকার অনুরোধ করিতে স্বীকৃত হইল না–বড় লজ্জা করে, ছি! অগত্যা গোবিন্দলাল স্বয়ং কৃষ্ণকান্তের কাছে গেলেন। কৃষ্ণকান্ত তখন আহারান্তে পালঙ্কে অর্ধশয়নাবস্থায়, আলবোলার নল হাতে করিয়া–সুষুপ্ত। এক দিকে তাঁহার নাসিকা নাদসুরে গমকে তানমূর্ছনাদি সহিতContinue Reading
চতুর্দ্দশ পরিচ্ছেদ
রোহিণী, গোবিন্দলালের অনুমতিক্রমে খুড়ার সঙ্গে বিদেশ যাওয়ার বন্দোবস্ত করিতে আসিল। খুড়াকে কিছু না বলিয়া, ঘরের মধ্যস্থলে বসিয়া পড়িয়া, রোহিণী কাঁদিতে বসিল। “এ হরিদ্রাগ্রাম ছাড়িয়া আমার যাওয়া হইবে না–না দেখিয়া মরিয়া যাইব। আমি কলিকাতায় গেলে, গোবিন্দলালকেContinue Reading
পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ
দৈনিক কার্য সমস্ত সমাপ্ত করিয়া, প্রাত্যহিক নিয়মানুসারে গোবিন্দলাল দিনান্তে বারুণীর তীরবর্তি পুষ্পোদ্যানে গিয়া বিচরণ করিতে লাগিলেন। গোবিন্দলালের পুষ্পোদ্যানভ্রমণ একটি প্রধান সুখ। সকল বৃক্ষের তলায় দুই চারি বার বেড়াইতেন। কিন্তু আমরা সকল বৃক্ষের কথা এখন বলিবContinue Reading
ষোড়শ পরিচ্ছেদ
গোবিন্দলাল তৎক্ষণাৎ জলে নামিয়া ডুব দিয়া, রোহিণীকে উঠাইয়া, সোপান উপরি শায়িত করিলেন। দেখিলেন, রোহিণী জীবিত আছে কি না সন্দেহ; সে সংজ্ঞাহীন; নিশ্বাসপ্রশ্বাসরহিত। উদ্যান হইতে গোবিন্দলাল একজন মালীকে ডাকিলেন। মালীর সাহায্যে রোহিণীকে বহন করিয়া উদ্যানস্থ প্রমোদগৃহেContinue Reading
সপ্তদশ পরিচ্ছেদ
রোহিণীর নিশ্বাস প্রশ্বাস বহিতে লাগিলে, গোবিন্দলাল তাহাকে ঔষধ পান করাইলেন। ঔষধ বলকারক–ক্রমে রোহিণীর বলসঞ্চার হইতে লাগিল। রোহিণী চাহিয়া দেখিল–সজ্জিত রম্য গৃহমধ্যে মন্দ মন্দ শীতল পবন বাতায়নপথে পরিভ্রমণ করিতছে–এক দিকে স্ফটিকাধারে স্নিগ্ধ প্রদীপ জ্বলিতেছে–আর এক দিকেContinue Reading
অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ
গোবিন্দলাল গৃহে প্রত্যাগমন করিলে, ভ্রমর জিজ্ঞাসা করিল, “আজি এত রাত্রি পর্যন্ত বাগানে ছিলে কেন?” গো। কেন জিজ্ঞাসা করিতেছ? আর কখনও কি থাকি না? ভ্র। থাক–কিন্তু আজি তোমার মুখ দেখিয়া, তোমার কথার আওয়াজে বোধ হইতেছে, আজিContinue Reading
ঊনবিংশ পরিচ্ছেদ
গোবিন্দলাল বাবু জ্যেঠা মহাশয়ের সঙ্গে বৈষয়িক কথোপকথনে প্রবৃত্ত হইলেন। কথোপকথনচ্ছলে কোন্ জমীদারীর কিরূপ অবস্থা, তাহা সকল জিজ্ঞাসা করিতে লাগিলেন। কৃষ্ণকান্ত গোবিন্দলালের বিষয়ানুরাগ দেখিয়া সন্তুষ্ট হইয়া বলিলেন, “তোমরা যদি একটু একটু দেখ শুন, তবে বড় ভালContinue Reading