প্রথম পরিচ্ছেদ : দেবমন্দির
৯৯৭ বঙ্গাব্দের নিদাঘশেষে একদিন একজন অশ্বারোহী পুরুষ বিষ্ণুপুর হইতে মান্দারণের পথে একাকী গমন করিতেছিলেন। দিনমণি অস্তাচলগমনোদ্যোগী দেখিয়া অশ্বারোহী দ্রুতবেগে অশ্ব সঞ্চালন করিতে লাগিলেন। কেন না, সম্মুখে প্রকাণ্ড প্রান্তর; কি জানি, যদি কালধর্মে প্রদোষকালে প্রবল ঝটিকাContinue Reading
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ : আলাপ
প্রথমে যুবক নিজ কৌতূহলপরবশতা প্রকাশ করিলেন। বয়োজ্যেষ্ঠাকে সম্বোধন করিয়া কহিলেন, “অনুভবে বুঝিতেছি, আপনারা ভাগ্যবানের পুরস্ত্রী, পরিচয় জিজ্ঞাসা করিতে সঙ্কোচ হইতেছে; কিন্তু আমার পরিচয় দেওয়ার পক্ষে যে প্রতিবন্ধক, আপনাদের সে প্রতিবন্ধক না থাকিতে পারে, এজন্য জিজ্ঞাসাContinue Reading
তৃতীয় পরিচ্ছেদ : মোগল পাঠান
নিশীথকালে জগৎসিহ শৈলেশ্বরের মন্দির হইতে যাত্রা করিলেন। আপাততঃ তাঁহার অনুগমনে অথবা মন্দিরাধিষ্ঠাত্রী মনোমোহিনীর সংবাদ কথনে পাঠক মহাশয়দিগের কৌতূহল নিবারণ করিতে পারিলাম না। জগৎসিংহ রাজপুত, কি প্রয়োজনে বঙ্গদেশে আসিয়াছিলেন, কেনই বা প্রান্তরমধ্যে একাকী গমন করিতেছিলেন, তৎপরিচয়Continue Reading
চতুর্থ পরিচ্ছেদ : নবীন সেনাপতি
শৈলেশ্বর-মন্দির হইতে যাত্রা করিয়া জগৎসিংহ পিতৃশিবিরে উপস্থিত হইলে পর, মহারাজ মানসিংহ পুত্রমুখাৎ অবগত হইলেন যে, প্রায় পঞ্চাশৎ সহস্র পাঠান সেনা ধরপুর গ্রামের নিকট শিবির সংস্থাপন করিয়া নিকটস্থ গ্রামসকল লুঠ করিতেছে, এবং স্থানে স্থানে দুর্গ নির্মাণContinue Reading
পঞ্চম পরিচ্ছেদ : গড় মান্দারণ
যে পথে বিষ্ণুপুর প্রদেশ হইতে জগৎসিংহ জাহানাবাদে প্রত্যাগমন করিয়াছিলেন, সেই পথের চিহ্ন অদ্যাপি বর্তমান আছে। তাহার কিঞ্চিৎ দক্ষিণে মান্দারণ গ্রাম। মান্দারণ এক্ষণে ক্ষুদ্র গ্রাম, কিন্তু তৎকালে ইহা সৌষ্ঠবশালী নগর ছিল। যে রমণীদিগের সহিত জগৎসিংহের মন্দির-মধ্যেContinue Reading
ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ : অভিরাম স্বামীর মন্ত্রণা
তিলোত্তমা ও বিমলা শৈলেশ্বরের হইতে নির্বিঘ্নে দুর্গে প্রত্যাগমন করিলেন। প্রত্যাগমনের তিন চারি দিবস পরে বীরেন্দ্রসিংহ নিজ দেওয়ানখানায় মছনদে বসিয়া আছেন, এমন সময় অভিরাম স্বামী তথায় উপস্থিত হইলেন। বীরেন্দ্রসিংহ গাত্রোত্থানপূর্বক দণ্ডবৎ হইলেন; অভিরাম স্বামী বীরেন্দ্রের হস্তদত্তContinue Reading
সপ্তম পরিচ্ছেদ : অসাবধানতা
দুর্গের যে ভাগে দুর্গমূল বিধৌত করিয়া আমোদর নদী কলকল রবে প্রবহণ করে, সেই অংশে এক কক্ষবাতায়নে বসিয়া তিলোত্তমা নদীজলাবর্ত নিরীক্ষণ করিতেছিলেন। সায়াহ্নকাল উপস্থিত, পশ্চিমগগনে অস্তাচলগত দিনমণির ম্লান কিরণে যে সকল মেঘ কাঞ্চনকান্তি ধারণ করিয়াছিল, তৎসহিতContinue Reading
অষ্টম পরিচ্ছেদ : বিমলার মন্ত্রণা
বিমলা অভিরাম স্বামীর কুটীরমধ্যে দণ্ডায়মান আছেন। অভিরাম স্বামী ভূমির উপর যোগাসনে বসিয়াছেন। জগৎসিংহের সহিত যে প্রকারে বিমলা ও তিলোত্তমার সাক্ষাৎ হইয়াছিল, বিমলা তাহা আদ্যোপান্ত অভিরাম স্বামীর নিকট বর্ণন করিতেছিলেন; বর্ণনা সমাপ্ত করিয়া কহিলেন, “আজ চতুর্দশContinue Reading
নবম পরিচ্ছেদ : কুলতিলক
জগৎসিংহ পিতৃচরণ হইতে সসৈন্য বিদায় হইয়া যে যে কার্য করিলেন, তাহাতে পাঠান সৈন্যমধ্যে মহাভীতি প্রচার হইল। কুমার প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলেন, পঞ্চ সহস্র সেনা লইয়া তিনি কতলু খাঁর পঞ্চাশৎ সহস্রকে সুবর্ণরেখা পার করিয়া দিবেন, যদিও এ পর্যন্তContinue Reading
দশম পরিচ্ছেদ : মন্ত্রণার পর উদ্যোগ
মন্ত্রণার পর উদ্যোগযে দিবস অভিরাম স্বামী বিমলার প্রতি ক্রুদ্ধ হইয়া তাহাকে গৃহবহিষ্কৃত করিয়া দেন, তাহার পরদিন প্রদোষকালে বিমলা নিজ কক্ষে বসিয়া বেশভূষা করিতেছিলেন। পঞ্চত্রিংশৎ বর্ষীয়ার বেশভূষা? কেনই বা না করিবে? বয়সে কি যৌবন যায়? যৌবনContinue Reading
একাদশ পরিচ্ছেদ : আশমানির দৌত্য
এদিকে বিমলার ইঙ্গিতমত আশমানি গৃহের বাহিরে আসিয়া প্রতীক্ষা করিতেছিল। বিমলা আসিয়া তাহাকে কহিলেন, “আশমানি, তোমার সঙ্গে কোন বিশেষ গোপনীয় কথা আছে।” আশমানি কহিল, “বেশভূষা দেখিয়া আমিও ভাবিতেছিলাম, আজ কি একটা কাণ্ড।” বিমলা কহিলেন, “আমি আজContinue Reading
দ্বাদশ পরিচ্ছেদ : আশমানির অভিসার
দিগ্গজ গজপতির মনোমোহিনী আশমানি কিরূপ রূপবতী, জানিতে পাঠক মহাশয়ের কৌতূহল জন্মিয়াছে সন্দেহ নাই। অতএব তাঁহার সাধ পুরাইব। কিন্তু স্ত্রীলোকের রূপবর্ণন-বিষয়ে গ্রন্থকারগণ যে পদ্ধতি অবলম্বন করিয়া থাকেন, আমার সদৃশ অকিঞ্চন জনের তৎপদ্ধতি বহির্ভূত হওয়া অতি ধৃষ্টতারContinue Reading
ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ : আশমানির প্রেম
দ্বার খুলিলে আশমানি গৃহে প্রবেশ করিবামাত্র দিগ্গজের হৃদ্বোধ হইল যে, প্রণয়িনী আসিয়াছেন, ইহার সরস অভ্যর্থনা করা চাই, অতএব হস্ত উত্তোলন করিয়া কহিলেন, “ওঁ আয়াহি বরদে দেবি!” আশমানি কহিল, “এটি যে বড় সরস কবিতা, কোথা পাইলে?”Continue Reading
চতুর্দ্দশ পরিচ্ছেদ : দিগ্গজহরণ
এমন সময় বিমলা আসিয়া, বাহির হইতে দ্বার নাড়িল। বিমলা দ্বারপার্শ্ব হইতে অলক্ষ্যে সকল দেখিতেছিল। দ্বারের শব্দ শুনিয়া দিগ্গজের মুখ শুকাইল। আশমানি বলিল, “কি সর্বনাশ, বিমলা আসিতেছে – লুকোও লুকোও।” দিগ্গজ ঠাকুর কাঁদিয়া কহিল, “কোথায় লুকাইব?”Continue Reading
পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ – দিগগজের সাহস
বিমলা দ্রুতপাদবিক্ষেপে শীঘ্র মান্দারণ পশ্চাৎ করিলেন। নিশা অত্যন্ত অন্ধকার, নক্ষত্রালোকে সাবধানে চলিতে লাগিলেন। প্রান্তরপথে প্রবেশ করিয়া বিমলা কিঞ্চিৎ শঙ্কান্বিতা হইলেন; সমভিব্যাহারী নিঃশব্দে পশ্চাৎ পশ্চাৎ আসিতেছেন, বাক্যব্যয়ও নাই। এমন সময়ে মনুষ্যের কণ্ঠস্বর শুনিলে কিছু সাহস হয়,Continue Reading
ষোড়শ পরিচ্ছেদ : শৈলেশ্বর সাক্ষাৎ
বিমলা মন্দিমধ্যে প্রবেশ করিয়া প্রথমে বসিয়া একটু স্থির হইলেন। পরে নতভাবে শৈলেশ্বরকে প্রণাম করিয়া যুবরাজকে প্রণাম করিলেন। কিয়ৎক্ষণ উভয়েই নীরব হইয়া রহিলেন, কে কি বলিয়া আপন মনোগত ভাব ব্যক্ত করিবেন? উভয়েরই সঙ্কট। কি বলিয়া প্রথমেContinue Reading
সপ্তদশ পরিচ্ছেদ : বীরপঞ্চমী
উভয়ে শৈলেশ্বর প্রণাম করিয়া, সশঙ্কচিত্তে গড় মান্দারণ অভিমুখে যাত্রা করিলেন। কিঞ্চিৎ নীরবে গেলেন। কিছু দূর গিয়া রাজকুমার প্রথমে কথা কহিলেন, “বিমলে, আমার এক বিষয়ে কৌতূহল আছে। তুমি শুনিয়া কি বলিবে বলিতে পারি না।” বিমলা কহিলেন,Continue Reading
অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ : চতুরে চতুরে
বিমলা আসিয়া নিজ কক্ষে পালঙ্কের উপর বসিলেন। বিমলার মুখ অতি হর্ষপ্রফুল্ল; তিনি গতিকে মনোরথ সিদ্ধ করিয়াছেন। কক্ষমধ্যে প্রদীপ জ্বলিতেছে; সম্মুখে মুকুর; বেশভূষা যেরূপ প্রদোষকালে ছিল, সেইরূপই রহিয়াছে; বিমলা দর্পণাভ্যন্তরে মুহূর্তজন্য নিজ প্রতিমূর্তি নিরীক্ষণ করিলেন। প্রদোষকালেContinue Reading
ঊনবিংশ পরিচ্ছেদ : প্রেমিকে প্রেমিকে
বিমলা যখন দেখিলেন যে, চতুর ওসমান অন্যত্র গেলেন, তখন তিনি ভরসা পাইলেন যে কৌশলে মুক্তি পাইতে পারিবেন। শীঘ্র তাহার উপায় চেষ্টা করিতে লাগিলেন। প্রহরী কিয়ৎক্ষণ দণ্ডায়মান থাকিলে বিমলা তাহার সহিত কথোপকথন আরম্ভ করিলেন। প্রহরী হউক,Continue Reading