দেবী চৌধুরাণী

দেবী চৌধুরাণী

দেবী চৌধুরাণী হল একটি বাংলা উপন্যাস যা বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা। এটি ১৮৮৪ সালে প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে সুবোধ চন্দ্র মিত্র এটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। আনন্দমঠের পর বঙ্কিম চন্দ্র পুনরুজ্জীবিত ভারতের আহ্বান করে এটি রচনা করেন। এতেContinue Reading

দেবী চৌধুরাণী

প্রথম খণ্ড

দেবী চৌধুরাণীর কাহিনী শুরু হয়েছে শ্বশুরের চাপে স্বামী-পরিত্যক্তা কিশোরী প্রফুল্লকে নিয়ে। এরপর কিভাবে বছর কয়েক পরে প্রফুল্ল হয়ে উঠল সর্বজনশ্রদ্ধেয়া তেজস্বিনী ডাকাতিনী; ‘দেবী চৌধুরাণী’ সেই উপ্যাখান নিয়েই আবর্তিত হয়েছে বইয়ের প্রথম ভাগ। প্রায় আড়াইশ বছরContinue Reading

দেবী চৌধুরাণী

প্রথম পরিচ্ছেদ

“ও পি–ও পিপি–ও প্রফুল্ল–ও পোড়ারমুখী।” “যাই মা।” মা ডাকিল–মেয়ে কাছে আসিল। বলিল, “কেন মা?” মা বলিল, “যা না–ঘোষেদের বাড়ী থেকে একটা বেগুন চেয়ে নিয়ে আয় না।” প্রফুল্লমুখী বলিল, “আমি পারিব না। আমার চাইতে লজ্জা করে।”Continue Reading

দেবী চৌধুরাণী

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

বরেন্দ্রভূমে ভূতনাথ নামে গ্রাম; সেইখানে প্রফুল্লমুখীর শ্বশুরালয়। প্রফুল্লের দশা যেমন হউক, তাহার শ্বশুর হরবল্লভবাবু খুব বড়মানুষ লোক। তাঁহার অনেক জমিদারী আছে, দোতালা বৈঠকখানা, ঠাকুরবাড়ী, নাটমন্দির, দপ্তরখানা, খিড়কিতে বাগান, পুকুর প্রাচীরে বেড়া। সে স্থান প্রফুল্লমুখীর পিত্রালয়Continue Reading

দেবী চৌধুরাণী

তৃতীয় পরিচ্ছেদ

যখন গৃহিণী ঠাকুরাণী হেলিতে দুলিতে হাতের বাউটির খিল খুঁটিতে খুঁটিতে কর্তা মহাশয়ের নিকেতনে সমুপস্থিতা, তখন কর্তা মহাশয়ের ঘুম ভাঙ্গিয়াছে; হাতে মুখে জল দেওয়া হইয়াছে–হাত মুখ মোছা হইতেছে। দেখিয়া, কর্তার মনটা কাদা করিয়া ছানিয়া লইবার জন্যContinue Reading

দেবী চৌধুরাণী

চতুর্থ পরিচ্ছেদ

সন্ধ্যার পর সেই ঘরে সাগর ও প্রফুল্ল, দুই জনে দ্বার বন্ধ করিয়া চুপি চুপি কথাবার্তা কহিতেছিল, এমন সময়ে কে আসিয়া কপাটে ঘা দিল। সাগর জিজ্ঞাসা করিল, “কে গো?” “আমি গো।” সাগর প্রফুল্লের গা টিপিয়া চুপিContinue Reading

দেবী চৌধুরাণী

পঞ্চম পরিচ্ছেদ

এদিকে কর্তা মহাশয় এক প্রহর রাত্রে গৃহমধ্যে ভোজনার্থ আসিলেন। গৃহিণী ব্যজনহস্তে ভোজন-পাত্রের নিকট শোভমানা–ভাতে মাছি নাই–তবু নারীধর্মের পালনার্থ মাছি তাড়াইতে হইবে। হায়! কোন্ পাপিষ্ঠ নরাধমেরা এ পরম রমণীয় ধর্ম লোপ করিতেছে? গৃহিণীর পাঁচ জন দাসীContinue Reading

দেবী চৌধুরাণী

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

সাগর শ্বশুরবাড়ী আসিয়া দুইটি ঘর পাইয়াছিল, একটি নীচে, একটি উপরে। নীচের ঘরে বসিয়া সাগর পান সাজিত, সমবয়স্কাদিগের সঙ্গে খেলা করিত, কি গল্প করিত। উপরের ঘরে রাত্রে শুইত; দিনমানে নিদ্রা আসিলে সেই ঘরে গিয়া দ্বার দিত।Continue Reading

দেবী চৌধুরাণী

সপ্তম পরিচ্ছেদ

প্রফুল্ল ও প্রফুল্লের মা বাড়ী আসিল। প্রফুল্লের মার যাতায়াতে বড় শারীরিক কষ্ট গিয়াছে–মানসিক কষ্ট ততোধিক। সকল সময় সব সয় না। ফিরিয়া আসিয়া প্রফুল্লের মা জ্বরে পড়িল। প্রথমে জ্বর অল্প, কিন্তু বাঙ্গালীর ঘরের মেয়ে, বামনের ঘরেরContinue Reading

দেবী চৌধুরাণী

অষ্টম পরিচ্ছেদ

ফুলমণি নাপিতানীর বাস প্রফুল্লের বাসের নিকট। মাতৃহীন হইয়া অবধি প্রফুল্ল একা গৃহে বাস করে। প্রফুল্ল সুন্দরী, যুবতী, রাত্রে একা বাস করে, তাহাতে ভয়ও আছে, কলঙ্ক আছে। কাছে শুইবার জন্য রাত্রে একজন স্ত্রীলোক চাই। ফুলমণিকে এContinue Reading

দেবী চৌধুরাণী

নবম পরিচ্ছেদ

প্রফুল্ল বুড়াকে সমাধি-মন্দিরে প্রোথিত করিবার পূর্বেই তাহার শয্যা তুলিয়া বনে ফেলিয়া দিয়াছিল–দেখিয়াছিল যে, শয্যার নীচে যথার্থই একখানি চৌকা তক্তা, দীর্ঘে প্রস্থে তিন হাত হইবে, মেঝেতে বসান আছে। এখন শাবল আনিয়া, তাহার চাড়ে তক্তা উঠাইল–অন্ধকার গহ্বরContinue Reading

দেবী চৌধুরাণী

দশম পরিচ্ছেদ

এখন একটু ফুলমণির কথা বলি। ফুলমণি নাপিতাণী হরিণীর ন্যায় বাছিয়া বাছিয়া দ্রুতপদে জীবে প্রাণ-সমর্পণ করিয়াছিল। ডাকাইতের ভয়ে দুর্লভচন্দ্র আগে আগে পলাইলেন, ফুলমণি পাছু পাছু ছুটিয়া গেল। কিন্তু দুর্লভের এমনই পলাইবার রোখ্ যে, তিনি পশ্চাদ্ধাবিতা প্রণিয়নীরContinue Reading

দেবী চৌধুরাণী

একাদশ পরিচ্ছেদ

প্রভাতে উঠিয়া প্রফুল্ল ভাবিল, “এখন কি করি? কোথায় যাই? এ নিবিড় জঙ্গল ত থাকিবার স্থান নয়, এখানে একা থাকিব কি প্রকারে? যাই বা কোথায়? বাড়ী ফিরিয়া যাইব? আবার ডাকাইতে ধরিয়া লইয়া যাইবে। আর যেখানে যাই,Continue Reading

দেবী চৌধুরাণী

দ্বাদশ পরিচ্ছেদ

ভবানী পাঠক বলিল, “এই ভাঙ্গা বাড়ীতে তুমি মোহর পাইয়াছ?” প্র। আজ্ঞা হাঁ। ভ। কত? প্র। অনেক। ভ। ঠিক বল কত। ভাঁড়াভাঁড়ি করিলে আমার লোক আসিয়া বাড়ী খুঁড়িয়া দেখিবে। প্র। কুড়ি ঘড়া। ভ। এ ধন লইয়াContinue Reading

দেবী চৌধুরাণী

ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ

ভবানী ঠাকুর অঙ্গীকার মত দুই জন স্ত্রীলোক পাঠাইয়া দিলেন। একজন হাটে ঘাটে যাইবে, আর একজন প্রফুল্লের কাছে অনুক্ষণ থাকিবে। দুই জন দুই রকমের। যে হাটে ঘাটে যাইবে, তাহার নাম গোবরার মা, বয়স তিয়াত্তর বছর, কালোContinue Reading

দেবী চৌধুরাণী

চতুর্দ্দশ পরিচ্ছেদ

যে রাত্রে দুর্লভ চক্রবর্ত্তী প্রফুল্লকে তাহার মাতার বাড়ী হইতে ধরিয়া লইয়া যায়, দৈবগতিকে ব্রজেশ্বর সেই রাত্রেই প্রফুল্লর বাসস্থানে দুর্গাপুরে গিয়া উপস্থিত হইয়াছিলেন। ব্রজেশ্বরের একটি ঘোড়া ছিল, ঘোড়ায় চড়িতে ব্রজেশ্বর খুব মজ্বুাত। যখন বাড়ীর সকলে ঘুমাইল,Continue Reading

দেবী চৌধুরাণী

পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ

প্রফুল্লের শিক্ষা আরম্ভ হইল। নিশি ঠাকুরাণী, রাজার ঘরে থাকিয়া পরে ভবানী ঠাকুরের কাছে লেখাপড়া শিখিয়াছিলেন–বর্ণশিক্ষা, হস্তলিপি, কিঞ্চিৎ শুভঙ্করী আঁক প্রফুল্ল তাঁহার কাছে শিখিল। তার পর পাঠক ঠাকুর নিজে অধ্যাপকের আসন গ্রহণ করিলেন। প্রথমে ব্যাকরণ আরম্ভContinue Reading

দেবী চৌধুরাণী

ষোড়শ পরিচ্ছেদ

পাঁচ বৎসরে অধ্যাপন সমাপ্ত করিয়া, ভবানী ঠাকুর প্রফুল্লকে বলিলেন, “পাঁচ বৎসর হইল, তোমার শিক্ষা আরম্ভ হইয়াছে। আজ সমাপ্ত হইল। এখন তোমার হস্তগত ধন তোমার ইচ্ছামত ব্যয় করিও–আমি নিষেধ করিব না। আমি পরামর্শ দিব,-ইচ্ছা হয় গ্রহণContinue Reading

দেবী চৌধুরাণী

দ্বিতীয় খণ্ড

☞ প্রথম পরিচ্ছেদ ☞ দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ ☞ তৃতীয় পরিচ্ছেদ ☞ চতুর্থ পরিচ্ছেদ ☞ পঞ্চম পরিচ্ছেদ ☞ ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ ☞ সপ্তম পরিচ্ছেদ ☞ অষ্টম পরিচ্ছেদ ☞ নবম পরিচ্ছেদ ☞ দশম পরিচ্ছেদ ☞ একাদশ পরিচ্ছেদ ☞ দ্বাদশContinue Reading

দেবী চৌধুরাণী

প্রথম পরিচ্ছেদ

পাঁচে পাঁচে দশ বৎসর অতীত হইয়া গেল। যে দিন প্রফুল্লকে বাগদীর মেয়ে বলিয়া হরবল্লভ তাড়াইয়া দিয়াছিলেন, সে দিন হইতে দশ বৎসর হইয়া গিয়াছে। এই দশ বৎসর হরবল্লভ রায়ের পক্ষে বড় ভাল গেল না। দেশের দুর্দ্দশারContinue Reading