চন্দ্রশেখর

প্রতাপ ও শৈবালির একসময় মনে হয় তাদের ভালোবাসা পরিপূর্ণতা পাবে না। তারা দুইজন নদীতে ডুবে আত্মহত্যা করতে গেলেও শৈবালিনী ফিরে আসে; কিন্তু প্রতাপ ঝাপ দেয় ও ডুবে যায়। চন্দ্রশেখর নামক এক নৌচারির হস্তক্ষেপে প্রতাপ উদ্ধারContinue Reading

উপক্রমণিকা

চন্দ্রশেখর উপন্যাসের উপক্রমণিকা খণ্ডের পরিচ্ছেদ সমূহের তালিকা।Continue Reading

প্রথম পরিচ্ছেদ : বালক বালিকা

ভাগীরথীতীরে, আম্রকাননে বসিয়া একটি বালক ভাগীরথীর সান্ধ্য জলকল্লোল শ্রবণ করিতেছিল। তাহার পদতলে, নবদূর্বাশয্যায় শয়ন করিয়া, একটি ক্ষুদ্র বালিকা, নীরবে তাহার মুখপানে চাহিয়াছিল—চাহিয়া, চাহিয়া, চাহিয়া আকাশ নদী বৃক্ষ দেখিয়া, আবার সেই মুখপানে চাহিয়া রহিল। বালকের নামContinue Reading

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ : ডুবিল বা কে, উঠিল বা কে

এইরূপে ভালবাসা জন্মিল। প্রণয় বলিতে হয় বল, না বলিতে হয়, না বল। ষোল বৎসরের নায়ক—আট বৎসরের নায়িকা। বালকের ন্যায় কেহ ভালবাসিতে জানে না। বাল্যকালের ভালবাসায় বুঝি কিছু অভিসম্পাত আছে। যাহাদের বাল্যকালে ভালবাসিয়াছ, তাহাদের কয়জনের সঙ্গেContinue Reading

তৃতীয় পরিচ্ছেদ : বর মিলিল

যেখানে প্রতাপ ডুবিয়াছিল, তাহার অনতিদূরে একখানি পান্‌সি বাহিয়া যাইতেছিল। নৌকারোহী একজন দেখিল—প্রতাপ ডুবিল। সে লাফ দিয়া জলে পড়িল। নৌকারোহী—চন্দ্রশেখর শর্ম্মা। চন্দ্রশেখর সন্তরণ করিয়া, প্রতাপকে ধরিয়া নৌকায় উঠাইলেন। তাহাকে নৌকায় লইয়া তীরে নৌকা লাগাইলেন। সঙ্গে করিয়াContinue Reading

প্রথম পরিচ্ছেদ : দলনী বেগম

সুবে বাঙ্গালা বেহার ও উড়িষ্যার অধিপতি নবাব আলিজা মীরকাসেম খাঁ মুঙ্গেরের দুর্গে বসতি করেন। দুর্গমধ্যে, অন্তঃপুরে, রঙ্গমহলে, এক স্থানে বড় শোভা। রাত্রির প্রথম প্রহর এখনও অতীত হয় নাই। প্রকোষ্ঠমধ্যে, সুরঞ্জিত হর্ম্যতলে, সুকোমল গালিচা পাতা। রজতদীপেContinue Reading

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ : ভীমা পুষ্করিণী

ভীমা নামে বৃহৎ পুষ্করিণীর চারি ধারে, ঘন তালগাছের সারি। অস্তগমনোন্মুখ সূর্যের হেমাভ রৌদ্র পুষ্করিণীর কালো জলে পড়িয়াছে; কালো জলে রৌদ্রের সঙ্গে, তালগাছের কালো ছায়া সকল অঙ্কিত হইয়াছে। একটি ঘাটের পাশে, কয়েকটি লতামণ্ডিত ক্ষুদ্র বৃক্ষ, লতায়Continue Reading

তৃতীয় পরিচ্ছেদ : লরেন্স ফষ্টর

বেদগ্রামের অতি নিকটে পুরন্দরপুর নামক গ্রামে ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির রেশমের একটি ক্ষুদ্র কুঠি ছিল। লরেন্স ফষ্টর তথাকার ফ্যাক্‌টর বা কুঠিয়াল। লরেন্স অল্প বয়সে মেরি ফষ্টরের প্রণয়াকাঙ্ক্ষায় হতাশ্বাস হইয়া, ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির চাকরি স্বীকার করিয়া বাঙ্গালায়Continue Reading

চতুর্থ পরিচ্ছেদ : নাপিতানী

ফষ্টর স্বয়ং শিবিকাসমভিব্যাহারে লইয়া দূরবর্তিনী ভাগীরথীর তীর পর্যন্ত আসিলেন। সেখানে নৌকা সুসজ্জিত ছিল। শৈবলিনীকে নৌকায় তুলিলেন। হিন্দু দাস দাসী এবং প্রহরী নিযুক্ত করিয়া দিলেন। এখন আবার হিন্দু দাস-দাসী কেন? ফষ্টর নিজে অন্য যানে কলিকাতায় গেলেন।Continue Reading

পঞ্চম পরিচ্ছেদ : চন্দ্রশেখরের প্রত্যাগমন

চন্দ্রশেখর ভবিষ্যৎ গণিয়া দেখিলেন। দেখিয়া রাজকর্মচারীকে বলিলেন, “মহাশয়, আপনি নবাবকে জানাইবেন, আমি গণিতে পারিলাম না।” রাজকর্মচারী জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেন মহাশয়?” চন্দ্রশেখর বলিলেন, “সকল কথা গণনায় স্থির হয় না। যদি হইত, তবে মনুষ্য সর্বজ্ঞ হইত। বিশেষContinue Reading

প্রথম পরিচ্ছেদ : কুল্‌সম

“না, চিড়িয়া নাচিবে না। তুই এখন তোর গল্প বল্।” দলনী বেগম, এই বলিয়া, যে ময়ূরটা নাচিল না, তাহার পুচ্ছ ধরিয়া টানিল। আপনার হস্তের হীরকজড়িত বলয় খুলিয়া আর একটা ময়ূরের গলায় পরাইয়া দিল; একটা মুখর কাকাতুয়ারContinue Reading

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ : গুর্‌গণ খাঁ

যাহার কাছে দলনীর পত্র গেল, তাহার নাম গুর্‌গণ খাঁ। এই সময় বাঙ্গালায় যে সকল রাজপুরুষ নিযুক্ত ছিলেন, তন্মধ্যে গুর্‌গণ খাঁ এক জন সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বোৎকৃষ্ট। তিনি জাতিতে আর্‌মাণি; ইস্পাহান তাঁহার জন্মস্থান; কথিত আছে যে, তিনিContinue Reading

তৃতীয় পরিচ্ছেদ : দলনীর কি হইল

একমাত্র পরিচারিকা সঙ্গে, নিশাকালে রাজমহিষী, রাজপথে দাঁড়াইয়া কাঁদিতে লাগিল। কুল্‌সম জিজ্ঞাসা করিল, “এখন কি করিবেন?” দলনী চক্ষু মুছিয়া বলিল, “আইস, এই বৃক্ষতলে দাঁড়াই, প্রভাত হউক।” কু। এখানে প্রভাত হইলে আমরা ধরা পড়িব। দ। তাহাতে ভয়Continue Reading

চতুর্থ পরিচ্ছেদ : প্রতাপ

সুন্দরী বড় রাগ করিয়াই শৈবলিনীর বজরা হইতে চলিয়া গিয়াছিল। সমস্ত পথ স্বামীর নিকটে শৈবলিনীকে গালি দিতে দিতে আসিয়াছিল। কখন “অভাগী,” কখন “পোড়ারমুখী,” কখন “চুলোমুখী” ইত্যাদি প্রিয় সম্বোধনে শৈবলিনীকে অভিহিত করিয়া স্বামীর কৌতুক বর্ধন করিতে করিতেContinue Reading

পঞ্চম পরিচ্ছেদ : গঙ্গাতীরে

কলিকাতার কৌন্সিল স্থির করিয়াছিলেন, নবাবের সঙ্গে যুদ্ধ করিব। সম্প্রতি আজিমাবাদের কুঠিতে কিছু অস্ত্র পাঠান আবশ্যক। সেইজন্য এক নৌকা অস্ত্র বোঝাই দিলেন। আজিমাবাদের অধ্যক্ষ ইলিস্ সাহেবকে কিছু গুপ্ত উপদেশ প্রেরণ আবশ্যক হইল। আমিয়ট সাহেব নবাবের সঙ্গেContinue Reading

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ : বজ্রাঘাত

সেই নৈশ-গঙ্গাবিচারিণী তরণী মধ্যে নিদ্রা হইতে জাগিল—শৈবলিনী। বজরার মধ্যে দুইটি কামরা—একটিতে ফষ্টর ছিলেন, আর একটিতে শৈবলিনী এবং তাহার দাসী। শৈবলিনী এখনও বিবি সাজে নাই—পরণে কালাপেড়ে সাড়ী, হাতে বালা, পায়ে মল—সঙ্গে সেই পুরন্দরপুরের দাসী পার্বতী। শৈবলিনীContinue Reading

সপ্তম পরিচ্ছেদ : গল্‌ষ্টন‍ ও জন্‌সন

রামচরণ নৌকা হইতে শৈবলিনীকে লইয়া উঠিয়া গেলে, এবং প্রতাপ নৌকা পরিত্যাগ করিয়া গেলে, যে তেলিঙ্গা সিপাহী প্রতাপের আঘাতে অবসন্নহস্ত হইয়া ছাদের উপরে বসিয়াছিল, সে ধীরে ধীরে তটের উপর উঠিল। উঠিয়া যে পথে শৈবলিনীর শিবিকা গিয়াছে,Continue Reading

অষ্টম পরিচ্ছেদ : পাপের বিচিত্র গতি

যেমন যবনকন্যারা অল্প দ্বার খুলিয়া, আপনাদিগের শয়নগৃহ হইতে দেখিতেছিল, শৈবলিনীও সেইরূপ দেখিতেছিল। তিনজনই স্ত্রীলোক, সুতরাং স্ত্রীজাতিসুলভ কুতূহলে তিনজনেই পীড়িতা; তিনজনেই ভয়ে কাতরা; ভয়ের স্বধর্ম ভয়ানক বস্তুর দর্শন পুনঃ পুনঃ কামনা করে। শৈবলিনীও আদ্যোপান্ত দেখিল। সকলেContinue Reading