২৯ আগস্ট, ১৯৬৫।

অনেক রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। ঠিক বিড়ালের মত চোখ মেলে চাইল রানা। ঘুমের লেশামত্র নেই সে চোখে। যেন জেগেই ছিল এতক্ষণ। আবছা একটা ধস্তাধস্তির শব্দ এল কানে। তড়াক করে লাফিয়ে উঠে বসল ও বিছানার উপর। আন্দাজে বুঝল শব্দটা আসছে মিত্রা সেনের ঘর থেকে।

নিঃশব্দে বাথরুমের ছিটকিনি খুলে পা টিপে টিপে মিত্রার ঘরের দিকের দরজার পাশে গিয়ে দাঁড়াল রানা। মৃদু আলো আসছে মিত্রার ঘর থেকে। একটা ফুটোয় চোখ রেখেই তাজ্জব হয়ে গেল সে। চোখটা একবার কচলে নিয়ে আবার রাখল ফুটোতে। সেই একই দৃশ্য। টেবিল ল্যাম্পটা মাথা নিচু করে জ্বালানো আছে টেবিলের ওপর। সেই আলোয় দেখা গেল চারজন ষণ্ডামার্কা মুখোশধারী লোকের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করছে মিত্রা সেন। মুখে রুমাল পুরে চিৎকারের পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে আগেই। এবার দু’হাত পেছনে নিয়ে দুই কনুই একসঙ্গে টেনে বেঁধে ফেলা হলো। আঁচল খসে পড়ে শাড়িটা লুটোপুটি খাচ্ছে মাটিতে। কিন্তু সমানে পা চালাচ্ছে মিত্রা। সামনের লোকটার তলপেট বরাবর ঝেড়ে একটা লাথি মারল সে। দু’পা পিছিয়ে গেল লোকটা। হঠাৎ পাশ থেকে ছুরি ধরা একজন লোক এগিয়ে এসে বাঁ হাতে ওর ব্লাউজটা একটানে ছিঁড়ে ফেলল। তারপর বুকের উপর চোখা ছুরিটা মারাত্মক ভঙ্গিতে ঠেসে ধরে নিচু গলায় কানের কাছে কিছু বলল। স্থির হয়ে গেল মিত্রা সেন। আর বাধা দেবার চেষ্টা করল না। চোখ দুটো ভয়ে বিস্ফারিত। নিজের অসহায় অবস্থার কথা চিন্তা করে জল গড়িয়ে পড়ল ওর চোখ থেকে।

ছিটকিনির অবস্থান আন্দাজ করে নিয়ে জোরে একটা লাথি মারল রানা বাথরুমের দরজায়। খুলে গেল কপাট। কেউ কিছু বুঝবার আগেই সামনের দু’জন লোক ধরাশায়ী হলো রানার প্রচণ্ড মুষ্ট্যাঘাতে। তৃতীয় জন ছুরি হাতে ঝাঁপিয়ে পড়তে যাচ্ছে রানার উপর। প্রথমে ছোরাসুদ্ধ হাতটা ধরে ফেলল রানা, তারপর যুযুৎসুর এক প্যাঁচে আছড়ে ফেলল লোকটাকে মাটিতে। এবার দুই হাঁটু জড়ো করে ঝপাং করে পড়ল ওর পেটের ওপর। হুক করে একটা আওয়াজ বেরোল ওর মুখ দিয়ে; নড়বার আর শক্তি রইল না। কিন্তু রানা উঠে দাঁড়াবার আগেই প্রথম আক্রান্ত একজন উঠে এসে পেছন থেকে সাপটে ধরল রানাকে। চতুর্থ লোকটি এবার কোমর থেকে টান দিয়ে একটা থ্রোয়িং নাইফ বের করল। মুখে বিজয়ীর হাসি।

‘আব কাঁহাঁ যাওগে, উল্লুকে পাটঠে।’

রানার বুক বরাবর ছুরিটা ছুঁড়তে গিয়ে থমকে গেল সে। যেন যাদুমন্ত্রের বলে পেছনের লোকটা রানার সামনে চলে এসেছে। একটু হলেই সেইম সাইড হয়ে যেত। নিতম্বের উপর রানার প্রচণ্ড এক লাথি খেয়ে হুমড়ি খেয়ে লোকটা গিয়ে পড়ল চতুর্থ জনের ওপর। টাল সামলাতে গিয়ে ছুরিটা পড়ে গেল হাত থেকে মাটিতে। আর মাটিতে পড়তেই পা দিয়ে এক ঠেলা দিয়ে মিত্রা সেটাকে পাঠিয়ে দিল ঘরের এক কোণে। খালি হাতেই ঝাঁপিয়ে পড়ল ভীষণ আকৃতির চতুর্থ লোকটা রানার ওপর। নাক বরাবর রানার গোটা দুই নক-আউট পাঞ্চ খেয়ে সে ছিটকে পড়ল জানালার ধারে।

রানা চেয়ে দেখল জানালার সবক’টা শিক বাঁকানো। এই পথেই প্রবেশ করেছে লোকগুলো। বাইরে ঝমাঝম বৃষ্টি আরম্ভ হয়ে গেছে কখন ও টেরই পায়নি। কী করবে ভাবছে রানা, এমন সময় বাইরের অন্ধকার থেকে মস্ত একখানা ঢিল ছুটে এসে খটাশ করে লাগল ওর কপালে। আঁধার হয়ে গেল রানার চোখ। পড়ে যাচ্ছিল, চেয়ারের হাতল ধরে সামলে নিল। মাথাটা আঁ আঁ করছে। কিন্তু জ্ঞান হারিয়ে ফেললে চলবে না। এখন জ্ঞান হারালে নিশ্চিত মৃত্যু।

যেন বহুদূর থেকে কয়েকটা কথা কানে এল রানার।

‘সালা ডাকু হ্যায়। মার ডালেগা। ভাগো! ভাগো স্যবলোগ ইয়াহসে!’

সেকেণ্ড চারেক পাঁজর বরাবর একটা ছুরির আঘাত এবং তীব্র এক ঝলক ব্যথা আশা করল রানা। কিন্তু তেমন কিছুই ঘটল না। মাথাটা একবার ঝাঁকিয়ে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াল ও। তখনও ঘুরছে মাথাটা। চেয়ে দেখল চারজন মুখোশধারীই অদৃশ্য হয়ে গেছে। মিত্রা ছাড়া ঘরে কেউ নেই। ছুটে জানালার ধারে গিয়ে দাঁড়াল রানা। বৃষ্টির ছাট লাগল চোখে-মুখে। একটু পরেই দেখল বড় রাস্তা দিয়ে একটা গাড়ি সোজা চলে গেল উত্তর দিকে সামনের অনেকদূর পর্যন্ত আলোকিত করে। মিত্রাও পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল, চাপা গলায় জিজ্ঞেস করল, ‘চলে গেল?’

‘তাই তো মনে হচ্ছে।’

ঘরের এক কোণ থেকে ছুরিটা তুলে নিয়ে মিত্রা সেনের হাতের বাঁধন কেটে দিল রানা। হাত ছাড়া পেয়ে প্রথমেই নগ্ন বুক দুহাতে ঢাকল মিত্রা। তখনও থর থর করে কাঁপছে সারা অঙ্গ। আলনা থেকে একটা ব্লাউজ টেনে ছুঁড়ে দিল রানা ওর দিকে। তারপর বলল, ‘আপনি জামাটা পরে ফেলুন, আমি আপনার জন্যে একটু উইস্কি নিয়ে আসছি।’ বাথরুমের মধ্য দিয়ে নিজের ঘরে চলে এল রানা।

সুটকেস থেকে বোতল বের করে আধ গ্লাস উইস্কি ঢেলে নিয়ে পাশের ঘরে এল রানা। দেখল কাপড় পরে বিছানার ওপর বসে আছে মিত্রা সেন আড়ষ্ট ভঙ্গিতে।

‘টুক করে এটুকু খেয়ে ফেলুন, আমি মৈত্র মশাইকে ডেকে আনছি।’

চট করে একবার রানার চোখের দিকে চেয়ে নিল মিত্রা সেন। তারপর গ্লাসটা নিয়ে একহাতে নাক টিপে ধরে তিন ঢোকে খেয়ে ফেলল উইস্কিটুকু। রানা ঘর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল, কী মনে করে মিত্রা ডাকল, ‘শুনুন।’

‘কী?’

‘মৈত্র মশাইকে ডাকা যাবে পরে। এখন এই চেয়ারটায় বসুন তো, কপালটা অসম্ভব ফুলে গেছে, জলপট্টি লাগিয়ে দিই। তা ছাড়া মৈত্র মশাই এসে এখন আহা-উঁহু ছাড়া আর কী করবেন?’

একটা রুমাল চার ভাঁজ করে এক মগ পানিতে ভিজিয়ে ভিজিয়ে বেশ কিছুক্ষণ ফোলা জায়গাটায় ধরল মিত্রা, তারপর ভেজা রুমালটা কপালে বসিয়ে আরেকটা কাপড় দিয়ে বেঁধে দিল রানার মাথাটা।

‘মৈত্র মশাইকে ডাকার কোনও দরকার নেই,’ হঠাৎ বলে উঠল মিত্রা। ‘বিপদগ্ৰস্তা ভদ্রমহিলার জন্যে নিরীহ শান্তিপ্রিয় ফটোগ্রাফারের কাছাকাছি থাকাই বেশি নিরাপদ।’

‘ভাবছি, এই লোকগুলো কে। আপনি চেনেন এদের? আপনাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছিল কোথায়?’

‘আমি কিচ্ছু জানি না। কোনদিন দেখিনি এদের।’

‘সাধারণ গুণ্ডা বলেই তো মনে হলো। কিন্তু কোনও আভাসই পাননি আপনি, এটা কেমন কথা?’

‘এমনি কানাঘুষোয় শুনেছি, একটা বদমাশের দল আছে, ইয়াং টাইগারস না কী একটা নাম—ওরা নাকি লোক লাগিয়েছে, সুযোগ পেলেই আমাকে ধরে নিয়ে যাবে ওদের আড্ডায়। তেমন কোনও গুরুত্ব দিইনি ওসব কথার।’

ইয়াং টাইগারস-এর নাম শুনে একটু কঠিন হয়ে গেল রানার মুখ। পর মুহূর্তেই স্বাভাবিক কণ্ঠে বলল, ‘আপনার দলের কাউকে যদি ডাকতে বলেন তো ডেকে দিতে পারি। আর নইলে আপনি বিশ্রাম করুন, আমি আমার ঘরে যাই। রাত এখনও অনেক বাকি আছে, এভাবে গল্প করলে কাটবে না।’

উঠে দাঁড়াল রানা। ঝমঝম অবিরাম বৃষ্টি পড়ছে এখনও। কাছেই কোনও পুকুরে ব্যাঙ ডাকছে কা-কোকা-কো একঘেয়ে সুরে। বিজলী চমকে উঠল আকাশ চিরে।

মিত্রাও উঠে দাঁড়াল।

‘কেমন লোক আপনি?’ আপত্তির সুর মিত্রার কণ্ঠে। ‘এই ঘরে একা আমাকে ফেলে চলে যাচ্ছেন যে বড়? একা কী করে থাকব আমি এই জানালা ভাঙা ঘরে?’

একটু ভেবে নিয়ে রানা বলল, ‘বেশ তো, আপনি আমার বিছানায় গিয়ে নিশ্চিন্তে শুয়ে পড়ুন। আমি না হয় এই ঘরে আপনার পাহারায় থাকব।’

‘আমার এমনিতেই আজ রাতে আর ঘুম আসবে না। আসুন না, আপনার ঘরে বসে গল্প করে কাটিয়ে দিই রাতটা?’

‘না। আপনার ঘুম না এলেও আমার ঘুম আসবে।’ ঘুরে দাঁড়াল রানা।

‘আপনি আমাকে তাড়াতে পারলেই বাঁচেন মনে হচ্ছে।’

‘হ্যাঁ।’

‘কারণ? অনুষ্ঠানের শেষে দুর্ব্যবহার করেছিলাম, তাই?’

‘না।’ মিত্রার চোখের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে চাইল রানা। ‘সেজন্যে নয়। কারণটা খুবই সাধারণ। আপনি সুন্দরী রমণী। আমি শক্তিশালী পুরুষ। এখন অনেক রাত। বাইরে ঝমাঝম বৃষ্টি। এ ঘরে আপনি একা। আমি বহ্মচারী মহাপুরুষ নই। আমার মধ্যে পশু জেগে ওঠা কি একেবারেই অস্বাভাবিক?’

মন দিয়ে কথাগুলো শুনল মিত্রা। বুঝল কথাটা বিশ্রী হলেও সত্য। মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেল ওর। শুধু বলল, ‘আপনি একটি ছোটলোক,’ তারপর হঠাৎ ঘুরে চলে গেল রানার ঘরে।

এক মিনিটের মধ্যেই আবার ফিরে এল মিত্রা। হাতে রানার ওয়ালথার পিপিকে পিস্তলটা।

‘এই নিরীহ শান্তিপ্রিয় বস্তুটি বালিশের তলায় থাকলে অস্বস্তি লাগছে। জিনিসটা আপনার কাছেই থাক—কোনও কাজে লেগে যেতে পারে।’

ঘণ্টা দেড়েক পার হয়ে গেল। বাতি নিভিয়ে দিয়ে বিছানায় শুয়ে উসখুস করছে রানা। কিছুতেই স্বস্তি পাচ্ছে না। বালিশে মিত্রার চুলের মেয়েলি সুবাস। মনে হচ্ছে বিছানায় এখনও লেগে আছে মিত্রার দেহের উত্তাপ। বৃষ্টি থেমে গেছে বেশ কিছুক্ষণ, তাই দ্বিগুণ জোরে শোনা যাচ্ছে ব্যাঙের ডাক। জানালার বাইরে টিপ টিপ জোনাকির দীপ জ্বলছে, এখনও পুরোদস্তুর শহর হয়ে উঠতে পারেনি জায়গাটা।

একটা সিগারেট ধরাল রানা। লাইটার নেভাবার ঠিক আগের মুহূর্তে দেখতে পেল ও আবছা একটা লম্বা মূর্তি দাঁড়িয়ে আছে ঠিক ঘরের মাঝখানে। হাতের পিস্তলটা ওর দিকে তাক করা। চমকে উঠল রানা।

‘এক বিন্দু নড়াচড়া করলেই খুলি ফুটো করে দেব,’ মৃদু অথচ গম্ভীর কণ্ঠস্বর।

মরার মত কাঠ হয়ে পড়ে থাকল রানা। অসতর্ক থাকার জন্যে ভয়ানক রাগ হলো নিজের ওপর। একবার ভাবল বালিশের তলায় পিস্তলটার কথা। কিন্তু এখন চেষ্টা করা বৃথা। দেখা যাক কী হয়।

‘কে?’ জিজ্ঞেস করল রানা।

‘তোমার যম!’ সংক্ষিপ্ত উত্তর।

এক পা এক পা করে পিছিয়ে গেল লোকটা। পিস্তলটা তেমনি ধরা। টেবিল ল্যাম্পটা জ্বেলে দিল সে। লোকটার চেহারা দেখেই অবাক হয়ে উঠে বসল রানা বিছানার ওপর।

‘তুই! তুই শালা এত রাতে এ ঘরে ঢুকেছিস কী করতে?’

উজ্জ্বল হাসিতে উদ্ভাসিত সোহেলের মুখ।

‘দিয়েছিলাম তো ঘাবড়ে, বোক-চন্দর? টেরও পেলি নে জলজ্যান্ত মানুষটা ঢুকলাম ঘরের ভেতর? কালই শালা তোর চাকরি খেয়ে দেব আমি দেখিস বুড়োকে বলে।’

ওর একান্ত প্রিয় নাইন মিলিমিটার হ্যাঁমার লেস লুগার পিস্তলটা প্যান্টের নীচে তলপেটের কাছে লুকোনো হোলস্টারে ঢুকিয়ে দিল সোহেল।

‘আরে যা যা! তোর মত দশটা বয়-বেয়ারা আমার এক ডাকে ছুটে আসে, তা জানিস? তুই আমার কচু করতে পারবি। আর একটু হলে যেই হার্টফেলটা করতাম—বারোটা বেজে যেত তোর। কিন্তু দোস্ত, মনে হচ্ছে আজ রাতের সব ঘটনাই তোর জানা?’

‘স-অব, স-অব! সব দেখেছি তো আমি। আহাহা! তোর কপালে যখন জলপট্টি লাগাচ্ছিল না, উ-উ-হ!’ জিভ দিয়ে একটা বিশেষ শব্দ বের করল সোহেল। ‘তখন আমার কী ইচ্ছে করছিল জানিস? মনে হচ্ছিল নিজেই নিজের কপালে একটা ইট মেরে গিয়ে হাজির হই সামনে।’

হাসল রানা। একটা সিগারেট ছুঁড়ে দিল সোহেলের দিকে। খপ করে সেটা ধরে নিয়ে হাতল-বিহীন একটা চেয়ারে উল্টো হয়ে বসল সোহেল। সিগারেটটা ধরিয়ে নিয়ে হঠাৎ বলল, ‘আমার কথা হেড-অফিসের সবাই ভুলে গেছে, নারে? কেউ আমার কথা কিছু বলে না?’ একটা করুণ সুর ধ্বনিত হলো ওর কণ্ঠে।

‘বলবে না কেন? সবাই বলে।’ মিথ্যে কথা বলল রানা। নিত্যনতুন কাজের চাপে অতীতকে মনে রাখবার উপায় আছে? ও নিজেই তো প্রায় ভুলতে বসেছিল। তবু বলল, ‘কেন, তোর ওই সিঙ্গাপুর অ্যাসাইনমেন্ট-এর দৃষ্টান্ত দিয়ে সেদিন মেজর জেনারেল তো এক লেকচারই ঝেড়ে বসল আমাদের ওপর।’

কেন জানি কথাটা অকপটে বিশ্বাস করল সোহেল। একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস পড়ল ওর। বলল, ‘কী দিন ছিল, তাই না রে?’ তারপর হঠাৎ শশব্যস্ত হয়ে উঠে দাঁড়াল। কাছে এসে এক টানে রানার পট্টি খুলে দিল।

‘ন্যাকামি হচ্ছে, না? মাথায় ব্যাণ্ডেজ বেঁধে একেবারে সিনেমার হিরো! আঁ? খোল, শালা!’

কপালের আঘাতটা ভাল করে পরীক্ষা করে দেখল সোহেল। তারপর পকেট থেকে বের করল একটা মলমের কৌটো। কৌটোর নীচের দিকটা শক্ত করে চেপে ধরে রানার দিকে বাড়িয়ে দিল। ঢাকনিটা খুলে দিল রানা। কালো মত ওষুধ।

‘কী ওষুধ রে?’ জিজ্ঞেস করল রানা।

‘আইয়োডেক্স। ডাক-বাংলোর ফাস্ট-এইড বক্সে পেলাম। শিশিটা ভেঙে গেছে বলে বোধহয় এই কৌটোয় তুলে রেখেছে লেবেল লাগিয়ে।’

রানার কপালে লাগিয়ে দিল সোহেল মলমটা। তারপর আঙুল দুটো নির্দ্বিধায় রানার পরিষ্কার শার্টে মুছে নিয়ে পকেট থেকে গোটা দুই নোভালজিন ট্যাবলেট বের করে দিল।

‘এ দুটো মেরে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়। সাড়ে তিনটে বাজছে। আমি বাকি রাতটুকু পাহারা দেব।’

‘বেশ। অতি উত্তম প্রস্তাব। আর সকালে গোটা আষ্টেক ডিম পোচ, ছ’স্লাইস বাটার টোস্ট, চারটে অমৃত সাগর কলা আর ফাস ক্লাস করে এক কাপ কফি বানিয়ে নিয়ে আসবি বেল বাজানো মাত্র। নইলে ম্যানেজারকে বলে তোর কান…’

কানটাকে কী করা হবে হাতের ইঙ্গিতে দেখাল রানা। মৃদু হাসল সোহেল। তারপর রানার ওষুধ খাওয়া হয়ে গেলে জানালা গলে বেরিয়ে গেল জোনাক-জ্বলা অন্ধকারে।

নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ল রানা।